বিশ্ব ফুটবলে কি শাসক হয়ে ফিরতে পারবে সাম্বার দেশ? ছবি: এএফপি।
গ্যালারির তিন ভাগ ‘সরষেখেত’ যেন পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে মুহূর্তে। হতাশা আর কান্নায় ভারী হয়ে গিয়েছে বাতাস।
তিনিও কাঁদছেন— তিনি, মানে নেমার দ্য সিলভা স্যান্টোস জুনিয়র। অপ্রত্যাশিত বিদায়ের জ্বালা বুকে নিয়ে সতীর্থরা চলে গিয়েছেন ড্রেসিংরুমে। তিনি একা হাঁটু মুড়ে বসে। পাশ গিয়ে আনন্দ করতে করতে চলে যাওয়া বেলজিয়াম ফুটবলাররা এই দৃশ্য দেখে থমকে দাঁড়ালেন। মাটিতে বসে থাকা নেমারকে জড়িয়ে ধরে তুললেন ভ্যানসঁ কোম্পানি। এগিয়ে এলেন এডেন অ্যাজার এবং থিয়েরি অঁরি। তাঁরাই সান্ত্বনা দিতে দিতে ড্রেসিংরুমের দিকে এগিয়ে দিলেন নেমারকে। আর মিক্সড জোনে বিশ্বের সব চেয়ে দামী ফুটবলার তো দাঁড়ালেনই না। তাঁর কথা শোনার জন্য দাঁড়িয়ে থাকা সাংবাদিকদের এড়িয়ে সোজা হাঁটা দিলেন টিম বাসের দিকে। তাঁর মাথার পিছনের চুলে ইংরেজি ‘ভি’ লেখাটা যেন তখন তাঁকেই বিদ্রুপ করছে।
নেমার এখনও নিজে কিছু বলেননি বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে যাওয়ার দিনে। তবে ব্রাজিল কোচ তিতে তাঁকে একশো নম্বরই দিয়ে দিলেন ম্যাচ শেষে। ‘‘ও একশো শতাংশ ফিট। এবং সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করেছে। নেমারের খেলায় আমি সন্তুষ্ট। ভাগ্যে বিশ্বাস করি না। তবুও বলছি দিনটা আমাদের ছিল না।’’ ভাগ্যে বিশ্বাস করেন না, তা হলে কেন বাঁ হাতে এত তাবিজ আর মালা পরে থাকেন নেমারদের কোচ? সেই প্রশ্ন অবশ্য কেউ করেনি।
পরপর চারটে বিশ্বকাপের ফাইনালে নেই ব্রাজিল। মানে বারো বছর। দীর্ঘ সময়। তা হলে কি বিশ্ব ফুটবলে আর শাসক হয়ে ফিরতে পারবে না সাম্বার দেশ? মুখে হাসি ঝুলিয়ে রাখার চেষ্টা করেও শোকগাথার বিশ্লেষণ করতে বসে কেমন যেন আনমনা হয়ে যান ব্রাজিল কোচ তিতে। ‘‘কেভিন দে ব্রুইনকে ম্যান অব দ্য ম্যাচ বাছা হয়েছে। আমার মতে সেরা বেলজিয়াম গোলকিপার কুর্তোয়া। খেলাটা তো হয়েছে ওর সঙ্গে ব্রাজিলের।’’ তিতে বলে চলেন, ‘‘পার্থক্য হয়ে গিয়েছে একটাই, বেলজিয়াম গোল করেছে, আমরা পারিনি।’’ এ সব বলার পরে তিতের মধ্য থেকে বেরিয়ে আসে ফের দার্শনিক সুলভ কথাবার্তা। ‘‘তবুও ভারাক্রান্ত মনে বলছি, ম্যাচটা আবার দেখবেন। প্রতিযোগিতার অন্যতম সেরা ম্যাচ হয়েছে এটা। ফুটবল কত সুন্দর হয় সেটা ফের প্রমাণিত।’’
তিতেকে প্রশ্ন করা হয়েছিল রেফারিং নিয়ে। গ্যাব্রিয়েল জেসুসকে নিজেদের বক্সে ফাউল করেছিলেন বেলজিয়ামের ভ্যানসঁ কোম্পানি। ওটা কি পেনাল্টি ছিল? তিতে বললেন, ‘‘ফুটবল মাঠে রেফারিই ঈশ্বর। তার বিরুদ্ধে কিছু বলতে চাই না।’’ হারের যুক্তি কত আর শুনবেন সাংবাদিকরা! বিশেষ করে ব্রাজিলীয় মিডিয়া। আপনার ভবিষ্যৎ কী? ব্রাজিল কোচের জবাব, ‘‘আমি এখনও ম্যাচের মধ্যে আছি। ও সব নিয়ে ভাবার সময় পাইনি।’’ তিতেকে আর জাতীয় কোচ রাখা হবে কি না, সেটা ঠিক করবে ব্রাজিল ফুটবল ফেডারেশন। এক ব্রাজিলীয় সাংবাদিকের মুখে শুনলাম, ডগলাস কোস্তা বা রবের্তো ফির্মিনোকে শুরু থেকে কেন ব্যবহার করা হচ্ছে না, তা নিয়ে দলের মধ্যেই অসন্তোষ ছিল। লেফ্ট ব্যাক মার্সেলো ভিয়েরার পাশ দিয়েই রোমেল লুকাকুরা হানা দিয়েছেন বেশি। সামনে বড় চেহারার সফল স্ট্রাইকার দেখেও মার্সেলো বারবার উঠে গিয়েছেন ওপরে। কেন তিতে তাঁকে এত এগোতে দিলেন, তা নিয়েও সরব ব্রাজিলীয় সাংবাদিকরা।
রাত তিনটে নাগাদও মিডিয়া সেন্টার থেকে সাম্বার দেশের এক রেডিও সাংবাদিক, ফের্নান্দিনহোর মুণ্ডপাত করছিলেন। ‘‘কাজিমিরোর জায়গায় নেমে ডোবাল ফের্নান্দিনহো। ও এই টিমটায় খেলার যোগ্যই নয়। কাজমিরো ঠিক খেলতে দিত না অ্যাজারকে। ও ভাবে কেউ গোল খাওয়ায়। আসলে আমাদের কোচ বেলজিয়ামের খেলা ধরতেই পারেনি। ওর কোনও প্ল্যান বি ছিল না।’’ মাইক্রোফোন নিয়ে ম্যাচের বিশ্লেষণ করছিলেন ওই সাংবাদিক। দেশ থেকে আসা হাজার ষাটেক সমর্থকের মতোই ক্ষিপ্ত তিনি। সমর্থকদের একজন হোসে ছবি তুলছিলেন কাজ়ান স্টেডিয়ামের বাইরে। যেখানে জ্বলজ্বল করছে বেলজিয়াম ২: ব্রাজিল ১। বলছিলেন, ‘‘আমাদের ধারণা ছিল এ বার বিশ্বকাপটা জিতব। তিতের ভুল পরিকল্পনা ডোবাল। ফার্নিন্দিনহো তো কাজেমিরোর কাজটাই করতে পারল না। মাঝমাঠে বেলজিয়ামকে এত জায়গা কেউ দেয়,’’ এটুকু বলেই চোখ মুছলেন। ফাইনালের পরের দিনের ফেরার টিকিট কিনে রেখেছিলেন পেশায় ইঞ্জিনিয়ার ভদ্রলোক। এখন বদলাতে হবে।
তখনই মনে হল, কলকাতার সেই সব ফুটবলপ্রেমীর কথা। যাঁরা লাখ লাখ টাকা খরচ করে সেমিফাইনাল ও ফাইনালের টিকিট কেটে রেখেছেন। আর্জেন্টিনা আর ব্রাজিলের খেলা দেখবেন বলে। এখন তাঁদের মেসি, নেমার, রোনাল্ডো ছেড়ে দেখতে হবে হ্যারি কেন, রোমেলু লুকাকু, কিলিয়ান এমবাপেদের।
দুধের স্বাদ কি আর ঘোলে মেটে! অনেকেই যে টিকিট বিক্রি করা যাবে কি না, তার খোঁজ নিচ্ছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy