ভরসা: বিশ্বকাপে ফ্রান্সের সেরা অস্ত্র পল পোগবাই। ফাইল চিত্র
হতে পারে এ সবই রণনীতি। কিন্তু বিশ্বকাপ শুরুর সপ্তাহ তিনেক আগে যে একেবারে গ্রুপ স্তরেই কাদা ছোড়াছুড়ি শুরু হয়ে গেল সেটা পরিষ্কার।
আক্রমণের জন্য বেছে নেওয়া হল রাশিয়া বিশ্বকাপে যিনি নিজেকে কার্যত স্বঘোষিত নেতা বেছে নিয়েছেন সেই পল পোগবাকে। আক্রমণকারীর নাম অগে হরাইদা। ইনি ডেনমার্কের কোচ। গ্রুপ সি-তে এ বার ড্যানিশদের টক্কর ফরাসিদের সঙ্গেও। আপাত দৃষ্টিতে ফ্রান্সের কাছে এই গ্রুপ খুবই সহজ মনে হলেও, পোগবাদের আদৌ পাত্তা দিচ্ছেন না ডেনমার্ক কোচ। শুধু কী তাই? পোগবাকে তিনি যে ভাষায় আক্রমণ করলেন তা কার্যত ব্যক্তিগত আক্রমণই!
পোগবাকে বিদ্রুপ করে হরাইদার মন্তব্য, ‘‘ম্যাঞ্চেস্টার সিটির বিরুদ্ধে খেলার সময় ও চুলের রংটা নীল-সাদা করে নিল। হতে পারে আমাদের বিরুদ্ধে খেলার সময় দেখব ওর চুল হয়ে গিয়েছে লাল-সাদা। ছেলেটা কী সারাক্ষণ নিজের হেয়ারস্টাইল
নিয়েই ভাবে?’’
এ তো গেল পোগবাকে হেয় করা। অথবা ফ্রান্সের অন্যতম সেরা তারকাকে চাপে ফেলা। কিন্তু দিদিয়ের দেশঁর পুরো দলটাকেও যে তিনি ছাড়েননি! অথচ ফিফা র্যাঙ্কিংয়ের বিচারে ফ্রান্স এখন সাত নম্বর। অন্যতম ফেভারিট হয়েই রাশিয়া যাচ্ছে। কিন্তু হরাইদা দিব্যি বলে দিলেন, ‘‘আমার ওদের দলটা নিয়ে আলাদা কোনও উচ্ছ্বাসই নেই। জানি, ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে উপরের দিকে থাকা দলগুলো বিশ্বসেরা। কিন্তু একমাত্র ফ্রান্সের ক্ষেত্রে সেটা বেমানান। আমি স্টকহমে সুইডেনের সঙ্গে ওদের খেলতে দেখেছি। ফ্রান্সের খেলায় কিছুই বিশেষত্ব চোখে পড়েনি। একেবারে সাদামাঠা।’’
গুরু: প্রত্যাশার বাড়তি চাপ কোচ দেশঁর উপর। ফাইল চিত্র
পোগবার কানে এ সব কথা পৌঁছেছে কি না জানা যায়নি। তিনি গিয়েছেন মক্কায় হজ করতে। হতে পারে, তিনি বিশ্বকাপে নিজের এবং ফ্রান্সের জন্যই প্রর্থনা করেছেন। রাশিয়াতে তাঁর নিজের ভাল খেলাটা বেশ জরুরি। কে না জানে, ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডে তাঁর অবস্থা বেশ নড়বড়ে। মোটে বনিবনা হচ্ছে না, ম্যানেজার জোসে মোরিনহোর সঙ্গেও। ম্যান ইউ’র কয়েক জন প্রাক্তন তারকা মনে করেন, ভাল না লাগলে পোগবাকে পরের মরসুমে ছেড়ে দেওয়া উচিত। সেক্ষেত্রে ভাল ক্লাবে জায়গা পেতে রাশিয়াতে দারুণ কিছু করতেই হবে তাঁকে। মনে রাখতে হবে, ব্রাজিল বিশ্বকাপে তিনিই সব চেয়ে সম্ভাবনাময় হিসেবে পুরস্কৃত হয়েছিলেন। পোগবা নিজে বলছেন, ‘‘এ বারও দারুণ কিছু করব। শুধু তাই নয়, মাঠে, মাঠের বাইরে আমিই দলকে নেতৃত্ব দেব।’’
ফ্রান্স এখনও তাঁদের অধিনায়কের নাম ঘোযণা করেনি। দিমিত্রি পায়েত, অ্যান্থনি মার্সিয়াল বাদ যাওয়ায়, করিম বেঞ্জেমাকে না ফেরানোয়, নেতা হওয়ার দৌড়ে পোগবাই এগিয়ে আছেন বলে অনেকে মনে করছেন। অবশ্য ফ্রান্সের একাধিক দৈনিকের খবর, দেশঁ শেষ পর্যন্ত অধিনায়কের আর্মব্যান্ডটা দলের অভিজ্ঞ গোলরক্ষক হুগো লরিকে দেবেন। এমনকী আঁতোয়া গ্রিজম্যানকেও নয়। কিন্তু পোগবা এ সব জল্পনার পরোয়া করছেন না। এমন ভাবে কথা বলছেন যেন তিনিই নেতা। বিশ্বকাপে ফ্রান্সের ভবিতব্য তাঁর বিশ্লেষণে বেশ পরিষ্কার। বলেছেন, ‘‘কারা খেলল, কে ফেভারিট, কী স্ট্র্যাটেজি— এ সব ভুলে যান। আসল ব্যাপার মনের জোর। আমাদের ছেলেদের বলব, মনটা শক্ত করো। তা হলেই এগোতে পারবে। না হলে নয়।’’
মিশন মস্কো: ২০১৮ বিশ্বকাপের গাইড, ‘সি’ গ্রুপে সেরা আকর্ষণ ফ্রান্স, লড়াই পেরু-ডেনমার্কের
গ্রুপ সি
• সেরা দল: ফ্রান্স
• ফিফা র্যাঙ্কিং:৭
• অন্য নাম: লে ব্লু বিশ্বকাপ ইতিহাস
• প্রথম পর্বে ১৪ বার
• সেমিফাইনালে: ৫ বার
• ফাইনালে: ২ বার
• চ্যাম্পিয়ন: ১ বার (১৯৯৮)
কী ভাবে রাশিয়ায়
বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন পর্বে ইউরোপের গ্রুপ বি’-তে শীর্ষ স্থানে শেষ করে ফ্রান্স। একই গ্রুপে ছিল নেদারল্যান্ডস ও সুইডেন। দু’টো দলের থেকেই চার পয়েন্টে এগিয়ে ছিল ফ্রান্স। তবে সুইডেনের কাছে সুইডেনে গিয়ে হেরেছিল। নিজেদের মাঠে লাক্সেমবার্গের সঙ্গে ড্র করাটাও অবশ্যই সন্তোষজনক ফল ছিল না।
কোচ
দিদিয়ে দেশঁ: ১৯৯৮-এ ফ্রান্সের বিশ্বকাপ জয়ী দলের সদস্য। ২০১২ থেকে লে ব্লু-র দায়িত্বে। মোনাকো, জুভেন্তাস ও মার্সেইয়ের কোচিং করিয়েছেন দেশঁ। এ বারের বিশ্বকাপের জন্য যোগ্যতা অর্জন পর্বে নেদারল্যান্ডস ও সুইডেনকে ছাপিয়ে গ্রুপ সেরা হওয়াটাও কৃতিত্বের। তবে ফ্রান্সকে প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ দলে পরিণত করলেও ট্রফি দিতে পারেননি এখনও। অনেক দিন পরে বিশ্বকাপে ফ্রান্স নামছে অন্যতম ফেভারিট হিসেবে। তাই প্রত্যাশার বাড়তি চাপ থাকবে দেশঁর ওপর।
শক্তি
তারুণ্যে টগবগ করছে এ বারের ফ্রান্স দল। দুর্দান্ত গভীরতাও রয়েছে। প্রায় সব জায়গাতেই এমন সব ফুটবলার এ বার দেশঁর হাতে রয়েছে যে, কাকে ছেড়ে কাকে বসাবেন সেটাই বড় মাথাব্যথা হতে যাচ্ছে। ইউরোপা লিগে জোড়া গোল করা অতোয়াঁ গ্রিজম্যান, চেলসির অলিভিয়ে জিহু এবং প্যারিস সাঁ জারমাঁর কিলিয়ান এমবাপেকে নিয়ে তৈরি আক্রমণ ভাগ অন্যতম সেরা।
দুর্বলতা
বড় ম্যাচে প্রত্যাশা মেটাতে পারেনি। ২০১৬ ইউরো ফাইনালে ফেভারিট থাকা সত্ত্বেও ঘরের মাঠে হারে পর্তুগালের কাছে। ধারাবাহিকতার অভাবেও ভুগতে হয়েছে। ফর্মে থাকা দিমিত্রি পায়েতকে পাচ্ছে না চোটের জন্য। ইপিএলের দুই তারকা, আর্সেনালের স্ট্রাইকার আকেজান্দ্রে লাকাজেতে এবং ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের অ্যান্থনি মার্শিয়ালকে বাদ দেওয়া ঠিক হল কি না, তর্ক আছে। যৌন কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়া রিয়াল মাদ্রিদ তারকা করিম বেঞ্জেমাকেও রাখা হয়নি দলে। রক্ষণে রাফায়েল ভারান স্তম্ভ। কিন্তু বাকিদের নিয়ে চিন্তা রয়েছে।
তারকা কারা
সব চেয়ে বিখ্যাত নাম অবশ্যই পল পোগবা। রেকর্ড অর্থে ম্যান ইউনাইটেডে যাওয়ার পরে অবশ্য পোগবার খুব ভাল সময় যায়নি। তবু দেশঁর নকশায় পোগবা অন্যতম প্রধান ভরসা হিসেবে থাকবেন। আতলেতিকো দে মাদ্রিদের অতোয়াঁ গ্রিজম্যানের দিকেও তাকিয়ে দল। নাচে, গানে, ফুটবলে এই দু’জনই মাতিয়ে রাখেন ফ্রান্স দলকে।
গ্রুপের অন্যরা
• ডেনমার্ক: যোগ্যতা অর্জন পর্বে কাজ কঠিন করে ফেলেছিল ডেনমার্ক। প্লে-অফে আয়ার্ল্যান্ডের বিরুদ্ধে শেষ পর্যন্ত ৫-১ জিতে নিজেদের যোগ্যতার প্রমাণ দেয় তারা। ফিফা র্যাঙ্কিং ১২। শক্তিশালী, আগ্রাসী ফুটবল খেলে চমকে দিতে পারে।
• অস্ট্রেলিয়া: এশিয়ার গ্রুপ ‘বি’-তে তৃতীয় হওয়ার পরে প্লে-অফ খেলে যোগ্যতা অর্জন করতে হয়েছে অস্ট্রেলিয়াকে। ফিফা র্যাঙ্কিং ৪০। তার পরেই কোচের ইস্তফা নিয়ে নাটক হয় এবং দায়িত্ব নেন বার্ত ভান মারউইক। সেরা অস্ত্র অ্যারন মুয়ি। ইপিএলে হাডার্সফিল্ডের হয়ে খেলেন তিনি।
• পেরু: বিশ্বকাপে ৩৬ বছর পরে প্রত্যাবর্তন! কনমেবল গ্রুপ থেকে রুদ্ধশ্বাস ভঙ্গিতে যোগ্যতা অর্জন করে। প্রথম দিকে খারাপ খেলে শেষের দিকে দারুণ ফর্ম দেখায় তারা। কোচ রিকার্ডো গারেকার অধীনে উন্নতির ছাপ স্পষ্ট। গত দেড় বছরে একটিও ম্যাচ হারেনি পেরু। ফিফা র্যাঙ্কিংয়েও উপরের দিকে, ১১। তবে ডোপিংয়ের দায়ে নির্বাসনের কারণে ফ্ল্যামেঙ্গোর ফরোয়ার্ড পাওলা গুরেরোর না থাকাটা বিরাট ধাক্কা।
পূর্বাভাস
গ্রুপ সেরা হওয়া উচিত ফ্রান্সের। দু’নম্বর দল হিসেবে নক-আউটে যাওয়ার লড়াই হবে মূলত পেরু ও ডেনমার্কের মধ্যে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy