তারকা: বিশ্বকাপে কর্নার নিচ্ছেন কেভিন দে ব্রুইন। ফাইল চিত্র।
বিশ্বকাপের শেষে ফাইনালে খেলা দু’টো দলকেই অভিনন্দন জানাতে চাই। অসাধারণ খেলেছে ওরা।
ফুটবলে হার-জিত আছে। আমি নিজে বিশ্বকাপ জিতেছি বলে জানি, কাপ জেতার আনন্দ কতটা। ফ্রান্সের পুরো দল নিশ্চয়ই ঘোরের মধ্যে রয়েছে। ক্রোয়েশিয়া তেমনই স্বপ্নভঙ্গের হতাশায় ডুবে থাকবে। সেটাই স্বাভাবিক। এত কাছে এসেও না পারার যন্ত্রণা তাড়া করতে বাধ্য। তবু ক্রোয়েশিয়াকে বলব, ভেঙে পড়ার মতো কিছুই ঘটেনি। বরং মাথা উঁচু করেই ফিরছ তোমরাও।
প্রতিযোগিতার সেরা ফুটবলার লুকা মদ্রিচ। সেরা আবিষ্কার কিলিয়ান এমবাপে। এখানেও যেন স্কোর সমান-সমান। দু’দলের দুই তারকা আমাদের দারুণ আনন্দ দিয়ে গেল। নিজেদের দলের হয়ে ওই দু’জন কিন্তু আগাগোড়া তফাত তৈরি করে দিয়ে গেল। বিশ্বকাপ জুড়ে নানা রকম আবেগ আমরা দেখেছি। অঘটনের মুহূর্ত তৈরি হয়েছে। জার্মানি বিদায় নিয়েছে। আর্জেন্টিনা হেরে গিয়েছে। ব্রাজিলও পারেনি। কিন্তু ফ্রান্স আর ক্রোয়েশিয়া ধারাবাহিকতা দেখিয়ে ফাইনালে উঠেছে।
ফরাসি ফুটবল পেশাদারি ভঙ্গিতে এগনোর চেষ্টা করছে অনেক দিন ধরে। পরিকাঠামোর দিকে ওরা নজর দিয়েছে। দূর-দূরান্ত থেকে প্রতিভা তুলে আনার পদ্ধতি এনেছে। তারই সুফল পেল এ বারের বিশ্বকাপে। রাশিয়ায় দিদিয়ে দেশঁর দল এসেছিল অন্যতম ফেভারিট হিসেবে। আর কাপ জিতে নিয়েই ফিরে গেল ওরা। খুবই পরিপূর্ণ একটা দল ফ্রান্স। গোলকিপার এবং অধিনায়ক উগো লরিস বিশ্বের অন্যতম সেরা। ওদের মিডফিল্ড অসাধারণ। ডিফেন্স লাইন দুর্দান্ত। সেই সঙ্গে স্বপ্নের ফরোয়ার্ড লাইন। উনিশ বছরের এমবাপের মতো প্রতিভা যাদের হাতে রয়েছে, তারা বিশ্বকাপে ছুটবে না তো কারা ছুটবে? স্পেন এবং ইংল্যান্ডের একটি করে বিশ্বকাপ আছে। তাদের ছাপিয়ে গেল ফ্রান্স। সমান-সমান হয়ে গেল আর্জেন্টিনা আর উরুগুয়ের সঙ্গে। প্রত্যেকেই দু’বার করে বিশ্বকাপ জিতেছে। সামনে থাকল চারটি কাপ থাকা ইটালি এবং জার্মানি এবং অবশ্যই পাঁচ বার জেতা ব্রাজিল।
এই বিশ্বকাপে দক্ষিণ আমেরিকান ফুটবলের সীমাবদ্ধতাও বোধ হয় ধরা পড়ে গেল। এখনও দক্ষিণ আমেরিকার ফুটবল দেশগুলি তাকিয়ে থাকে তাদের তারকার দিকে। হয়তো তারাই কোনও জাদু দেখিয়ে জিতিয়ে দেবে আমাদের। বোঝা গেল, ফুটবল এখন আর সে ভাবে খেলা হবে না। তারকার ভোজভাজি নয়, সিস্টেম-নির্ভর ফুটবল খেলতে হবে। রণনীতি পাল্টানোর মতো নমনীয়তা দেখাতে হবে।
এই বিশ্বকাপ আরও বেশি করে রক্ষণকে শক্তিশালী করার প্রয়োজনীয়তা প্রমাণ করে দিয়েছে। যতই তোমার দলে আক্রমণাত্মক বারুদ থাকুক, যদি রক্ষণ মজবুত না করতে পারো অপেক্ষাকৃত ছোট দলও হারিয়ে দিতে পারে। রাশিয়ায় সেটা বার বার দেখা গেল। আমার মনে হয়, এর প্রভাব বিশ্ব ফুটবলেও এ বার পড়তে চলেছে। এমবাপে, এডেন অ্যাজার, গ্রিজম্যান, লুকা মদ্রিচের মতো ফরোয়ার্ডদের সাফল্যের মধ্যেও রক্ষণের জয়জয়কার প্রকট।
বল পজেশন যাদের বেশি, তারাই জিতবে— এমন প্রথাগত ধারণাও ভেঙে পড়তে দেখলাম আমরা। অনেক ম্যাচে বল দখল বেশি থাকা সত্ত্বেও সেই দল ম্যাচ হেরেছে। ব্যক্তি কেন্দ্রিক ভাবনা ছেড়ে ফুটবল আরও বেশি করে দলগত খেলা হয়ে উঠেছে। কী করে প্রতিপক্ষকে মাঠে ফাঁকা জায়গা পাওয়া থেকে আটকাতে হবে, সেই রণনীতি আরও জোরদার হয়েছে। সেট পিস থেকে গোলের সংখ্যাও বেড়েছে। প্রায় অর্ধেক গোল হয়েছে ফ্রি-কিক, কর্নার কিক, পেনাল্টি বা থ্রো-ইন থেকে। ভিডিয়ো অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি বা ‘ভার’ নিয়ে অনেক বিতর্ক হয়েছে। তবু বলতেই হবে, পেনাল্টি অঞ্চলে ভুলের সংখ্যা অনেক কমিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেখিয়েছে ভিডিয়ো রেফারি।
ভাগ্যের খেলাও ছিল। সম্পূর্ণ শ্রদ্ধা রেখেও বলা যায়, লুকা মদ্রিচের ক্রোয়েশিয়া ড্রয়ের সহজ দিকে পড়ার সুবিধে পেয়েছে। যেটা অ্যাজার, লুকাকুদের বেলজিয়াম পায়নি। ফ্রান্সের সামনে পড়ে ওরা সেমিফাইনালেই হেরে গিয়েছে। এই বিশ্বকাপ দেখিয়ে দিল, বল পায়ে রাখলেই জেতা যাবে না, কার্যকারিতা বাড়াতে হবে। সেটপিসকে যারা ভাল কাজে লাগাতে পারবে, তাদের জন্য নতুন আশার আলো দেখা গেল। চলন্ত বলই শুধু নয়, থেমে যাওয়া বলও গুরুত্বপূর্ণ ফুটবলে। সেটাই আবার দেখিয়ে দিল রাশিয়া বিশ্বকাপ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy