Advertisement
১৯ নভেম্বর ২০২৪

ফ্যান জোনেও শাসন করলেন ফরাসি ভক্তরা

কাজ়ানকা নদী বয়ে চলেছে পাশ দিয়ে। রাশিয়ার বিভিন্ন শহরের ভিতর দিয়ে শিরা-উপশিরার মতো বয়ে চলেছে কত যে নদী— মস্কোভা থেকে কাজ়ানকা।

উল্লাস: ফ্রান্সের দুই নায়ক জিহু ও পোগবা। ছবি: গেটি ইমেজেস

উল্লাস: ফ্রান্সের দুই নায়ক জিহু ও পোগবা। ছবি: গেটি ইমেজেস

রতন চক্রবর্তী
কাজ়ান শেষ আপডেট: ০৭ জুলাই ২০১৮ ০৫:৩৩
Share: Save:

রাফায়েল ভারানের হেডের আসাধারণ গোলটার সময় নিঝনির গ্যালারিতে যেমন উৎসব শুরু হয়ে গিয়েছিল, তেমন গান শুরু হয়ে গেল ফ্যান জোনেও।

আঁতোয়া গ্রিজম্যানের শট যখন উরুগুয়ে গোলকিপার মুসলেরা চাপড় মেরে বার করতে গিয়ে বিস্ময়কর ভাবে গোল খেলেন, তখন দেখা গেল হাজার তিনেক ফরাসি দর্শকের মধ্যে আনন্দের তুফান। হাততালির ফোয়ারা। একেবারে স্টেডিয়ামের ভিতর যেমন দেখা যায়।

ফ্রান্স গোলকিপার হুগো লরিস ডান দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে অবিশ্বাস্য দক্ষতায় রুখলেন উরুগুয়ের মার্তিন কাসেরেসের হেড করা বল। বিয়ারের মগ হাতে নিয়ে চুমুক দিতে গিয়েও থমকে গেলেন এক রুশ তরুণী।

কাজ়ানকা নদী বয়ে চলেছে পাশ দিয়ে। রাশিয়ার বিভিন্ন শহরের ভিতর দিয়ে শিরা-উপশিরার মতো বয়ে চলেছে কত যে নদী— মস্কোভা থেকে কাজ়ানকা। কাজ়নের এই নদীটার হাল্কা স্রোতে বহমান জলের মেজাজ তাকে আরও সুন্দর করেছে। বিকেলের রোদ পড়ে ঠিকরে উঠছে নীল রং। তার পাশেই কাজান স্পোর্টস ফেস্ট এরিনা। মূল স্টেডয়াম থেকে বেশ খানিকটা দূরে। নোভাশেভানোভস্কি জেলার একটা প্রান্তে। জায়ান্ট স্ক্রিনে সেখানে খেলা দেখানোর ব্যবস্থা। আশেপাশে বিনোদনের নানা আয়োজন। রাশিয়ার বিখ্যাত খাবার স্তালিচিনি স্যালাড বা কাভাস দেদার বিকোচ্ছে। সঙ্গে পানীয়ের ব্যবস্থা। অন্য খাবারও পাওয়া যাচ্ছে। ফ্রান্স, জার্মানি, ব্রাজিল, জাপান—নানা দেশের খাবারের দোকান। রাশিয়া বিশ্বকাপের ম্যসকট ‘জাভিবাকা’ ঘুরে বেড়াচ্ছিল পুরো এলাকা জুড়ে। দু’টো ম্যাসকটের গায়ে ফ্রান্স ও উরুগুয়ের জার্সি। তারা হাত মেলাচ্ছিল, দর্শকদের সঙ্গেও। জড়িয়ে ধরে চুম্বনও দিচ্ছে।

বিদায়: এ বার কাপ অভিযান শেষ সুয়ারেসেরও। ছবি: গেটি ইমেজেস

বিশ্বকাপের সময় মাঠে যত দর্শক থাকেন, স্টেডিয়ামের বাইরে থাকেন তার কয়েকগুণ। টিকিট না পাওয়া বিভিন্ন দেশ থেকে আসা সমর্থকরা মুখে রং মেখে, গায়ে জার্সি পরে একই ভাবে ম্যাচ উপভোগ করতে যান ফ্যান জোনে। উৎসবের মেজাজে স্থানীয় দর্শকদের সঙ্গে ভাগ করে নেন আনন্দ। রাশিয়াতেও সব স্টেডিয়ামের বাইরে ফিফা তৈরি করেছে এ রকম ফ্যান জোন।

ফ্রান্সের সঙ্গে রশিয়ার রাজনৈতিক সমীকরণ বরাবরই ভাল। সে জন্যই কি না বোঝা গেল না কিলিয়ান এমবাপে ঝামেলা করে কার্ড দেখার সময় প্রচণ্ড বিরক্ত মনে হল ফ্যান জোনের বেশিরভাগ দর্শককে। আসলে পর্দার সামনে বসে থাকা দর্শকদের একটা বড় অংশই তো ছিল রাশিয়ান। এমবাপের মতো পল পোগবা গোল না পাওয়ায় হতাশ তাঁরা। ভিড়ের মধ্যে কয়েক জন ফ্রান্সের পতাকা নিয়ে আসা দর্শক দেখা গেলেও উরুগুয়ে জার্সি গায়ে একটি দম্পতি ছাড়া কাউকে খুঁজে পেলাম না। ওঁরা অবশ্য রাশিয়াতেই থাকেন কাজের সূত্রে।

মাঠে লুইস সুয়ারেসরা বল দখলের লড়াইয়ে বা পজেশনে ছিলেন অনেক পিছনে। পরিসংখ্যান দেখাচ্ছে ফ্রান্সের বল পজেশন ছিল ৫৮ শতাংশ। উরুগুয়ের ৪২ শতাংশ। ফ্যান জোনে আধিপত্যের দিকে ফ্রান্সের পক্ষে হিসেব ছিল ৯৯ শতাংশ। কাভানি মাঠে না থাকায় অস্কার তাবারেসের দল এমনিতেই খেলার আগে অনেকটা পিছিয়ে পড়ছিল। তাদের সেই ধারটাই এদিন দেখা যায়নি। লিয়োনেল মেসিকে বিদায় নিতে বাধ্য করার পরে নেওয়ার পরে বার্সেলোনায় তাঁর আর এক সতীর্থ স্ট্রাইকার সুয়ারেসেরও ছুটি করে দিলেন ফ্রান্স ডিফেন্ডার স্যামুয়েল উমতিতি। তিনি নাচছেন দেখে তাঁর উপর ঝাঁপিয়ে পড়লেন পল পোগবারা। জার্সিতে মুখ ঢেকে বেরিয়ে গেলেন সুয়ারেস। ক্লাব স্তরে এত গোল, কিন্তু এ দিন খেলতেই পারলেন না। শুধু আগুনে মেজাজ দেখালেন মাঝেমধ্যে। যা ফিরিয়ে দিল দিদিয়ে দেশঁর দলও। কোচ এত শান্ত স্বভাবের। আর তাঁর ফুটবলাররা এত ঝামেলা পাকাবেন কেন? এত ফাউল? ১৭ এবং ১৫। দু’দল মিলিয়ে ৩২টা হলুদ কার্ড! ভাবাই যায়নি।

যে দলটা শেষ ষোলো পর্যন্ত চারটে ম্যাচে একটার বেশি গোল খায়নি, সেই উরুগুয়ে জোড়া গোলে বিধ্বস্ত। দেশঁর দলের উইং দিয়ে আক্রমণ, সেট পিস থেকে গোল করার দক্ষতা, মাঝমাঠ দখলে রাখার মরিয়া প্রয়াস এগিয়ে দিয়েছিল গ্রিজ়ম্যানদের। দুটো গোলের ক্ষেত্রেই গ্রিজ়ম্যানের ছোঁয়া। তাঁকে দেখে মনে হচ্ছিল জ়িনেদিন জ়িদানের যোগ্য উত্তরসূরি।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy