ঘরে-ফেরা: প্যারিসের রাস্তায় বিশ্বকাপজয়ী ফ্রান্সের ফুটবলাররা। সোমবার রাশিয়া থেকে দেশে ফিরল দিদিয়ে দেশঁর দল। হুডখোলা বাসে এমবাপে, জিহু, লরিসদের নিয়ে শোভাযাত্রা। ছবি: এএফপি।
দ্বিতীয় বার দেশে বিশ্বকাপ এনে দিয়েছেন রবিবার রাতে। তার পরে চব্বিশ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই পল পোগবাদের মুকুটে যুক্ত হতে চলেছে আরও একটি সম্মানের পালক। বিশ্বকাপ জয়ের জন্য দিদিয়ে দেশঁর গোটা দলকেই ফ্রান্সের সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মান লিজিয়ঁ দ্য’নর দিতে চলেছে ফরাসি সরকার।
এ দিন দুপুরেই রাশিয়া থেকে বিশ্বকাপ নিয়ে প্যারিসে এলেন বিশ্বজয়ীরা। এমবাপে, গ্রিজম্যান, উগো লরিসদের জাতীয় বীরের সম্মান জানাতে সকাল থেকেই রাস্তায় কাতারে কাতারে মানুষ ভিড় জমিয়েছিলেন। দুপুরে শার্ল দ্য গল বিমানবন্দরে বিশ্বজয়ীদের বিশেষ বিমান রাশিয়া থেকে আসে। বিমানের দরজা খুলে প্রথমে বেরিয়ে আসেন ফরাসি কোচ দিদিয়ে দেশঁ এবং উগো লরিস। দু’জনের হাতেই ধরা ছিল বিশ্বকাপ। তার পরেই হুডখোলা ডাবল ডেকার বাসে তোলা হয় গোটা দলকে। শঁজে লিজের রাস্তা ধরে জাতীয় দলকে প্রেসিডেন্টের প্রাসাদে নিয়ে যাওয়া হয়। সবার আগে সেনাবাহিনী কুচকাওয়াজ করে অভিবাদন জানিয়ে ফরাসি দলকে নিয়ে যায় প্রেসিডেন্টের প্রাসাদে। যা দেখতে গোটা প্যারিস নেমে এসেছিল রাস্তায়।
তার আগে বিশ্বকাপ জয়ের রাতে জাতীয় পতাকা ও ‘স্মোক বম্ব’-সহ শুধু নির্ভেজাল আনন্দ-উৎসব, কোমার দোলানো, খানাপিনাই নয়। লুঠপাট, দুর্ঘটনার মতো ঘটনাও দেখা গিয়েছে প্যারিসের রাস্তায়। হয়েছে মৃত্যুও। ছবি ও কবিতার দেশে দ্বিতীয় বার ফুটবল বিশ্বকাপ আসার রাতে এটাই ছবি ফ্রান্সের।
বিশ্বকাপ ফাইনাল শেষ হওয়ার ঘণ্টা তিনেক পরে শঁজে লিজে অ্যাভেনিউতে এ রকমই লুটপাটের ঘটনা চোখে পড়েছে স্থানীয় বাসিন্দাদের। যেখানে দেখা যায়, জনা বারো দুষ্কৃতীকারী রাস্তার ধারে একটি জনপ্রিয় ‘ডিপার্টমেন্টাল স্টোর’-এর জানালা ভেঙে জিনিসপত্র লুটপাট করে নিয়ে যাচ্ছে। একটু দূরেই ‘পাবলিসিস ড্রাগস্টোর’। সেখানে হানা দেয় উল্লাসরত ৩০ জনের একটি দল। যাদের প্রত্যেকের মুখেই ছিল স্কি-মুখোশ। তারাই ওই স্টোরের দরজা-জানালা ভেঙে বেশ কয়েক বোতল শ্যাম্পেন ও ওয়াইন নিয়ে পালায়। স্থানীয় মানুষজন অনেকেই এই দৃশ্য মোবাইল ফোনের ক্যামেরায় ধরে রাখেন। কেউ কেউ বলতে থাকেন, ‘‘এটা বিশ্বকাপ জয়ের উৎসব হতে পারে না।’’
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে দেখে এর পরে পুলিশ উপস্থিত জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাস ছুড়তে শুরু করে। এর পরেই শুরু হয় পুলিশ-জনতা খণ্ডযুদ্ধ। জনতার মধ্য থেকেই পুলিশের দিকে উড়ে আসে ইট-পাটকেল, পানীয়ের ফাঁকা বোতল এবং ক্যান। ২০১৫ সালে প্যারিসে জঙ্গি হানার ঘটনা এখনও ভোলেনি ফ্রান্স। তাই ভিড়ের মধ্যে দাঙ্গাবাজরা যাতে ঢুকে না পড়ে, সে কারণে রবিবার রাতে ফরাসি রাজধানী প্যারিসের নিরাপত্তার দায়িত্বে রাখা হয়েছিল চার হাজার পুলিশকর্মীকে।
প্যারিস ছাড়াও আরও বড় আকারে পুলিশ-জনতা সংঘর্ষ হয়েছে ফ্রান্সের দক্ষিণের শহর লিয়ঁতে। সেখানে খোলা আকাশের নীচে জায়ান্ট স্ক্রিনে ম্যাচ দেখানো হচ্ছিল। আর তা দেখতেই পুলিশের গাড়ির ছাদে উঠে পড়ে একশোর বেশি যুবক। পুলিশ তাদের প্রথমে নামতে বললে তারা সেই আবেদনে কান দেয়নি। এর পরেইলাঠি চালায় পুলিশ। কিন্তু তাতে আবার ওই দলের থেকে উড়ে আসে ইট-পাটকেল। এর পরেই কাঁদানে গ্যাস ছুঁড়লে পরিস্থিতি খারাপ হয়ে ওঠে। পুলিশের গাড়ি থেকে নেমে এসে উন্মত্ত জনতা এ বার দাহ্য বস্তু জড়ো করে আগুন ধরিয়ে দেয় রাস্তায়। খবর পেয়ে ছুটে আসে পুলিশ। কিন্তু স্থানীয় সময় রাত সাড়ে দশটার সময় দেখা যায়, পুলিশের বন্ধন ভেঙে ৫০ জনের একটি দল স্থানীয় সিটি সেন্টারে ঢুকে পড়তে চাইছে, লুঠপাট করার জন্য। তবে বিশ্বকাপ জয়ের রাত্রি বলেই হয়তো এই সব দুষ্কৃতকারীকে গ্রেফতার করেনি পুলিশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy