জুটি: ব্রাজিলের প্রস্তুতিতে কুটিনহো এবং ফিরমিনো। ছবি: রয়টার্স।
কোস্টা রিকার বিরুদ্ধে আজ, শুক্রবারই ব্রাজিল এবং নেমার বুঝতে পারবে বিশ্বকাপে ওদের জন্য কী রকম ভাগ্য অপেক্ষা করে আছে।
আমার মনে হয়, নেমার ছাড়া ব্রাজিল ঠিক ব্রাজিল নয়। ব্রাজিলের জার্সি ছাড়া নেমারকে অন্য কোথাও এত দুরন্ত লাগে না। আমাদের ভাল কিছু করতে হলে সেরা ছন্দের নেমারকেই চাই! ও দুর্দান্ত এক পেশাদার এবং নিশ্চিত ভাবে ব্রাজিলের সমর্থকদের প্রত্যাশার চাপ সামলাতে পারবে। নেমারকে নিজের মনে বলে যেতে হবে যে, আমিই সেরা এবং সেটা প্রমাণ করেই ছাড়ব।
ব্রাজিলের যে কোনও ফুটবলারের জন্য চাপ সব সময়ই থাকবে। এটাই প্রত্যাশিত এবং স্বাভাবিক। আমার মনে হয় নেমার-সহ যে কোনও ব্রাজিলীয় ফুটবলার এটা জানে। আমরা জানি চাপ কী ভাবে সামলাতে হয়। এটাও জানি, ব্রাজিলীয়দের লক্ষ্য শুধু একটাই— চ্যাম্পিয়ন হওয়া। কখনও-কখনও চাপ একজন ফুটবলারকে ভাল খেলতে উৎসাহিত করতে পারে। অন্য দেশের ফুটবলারদের ক্ষেত্রে কিন্তু একই রকম চাপ থাকে না।
১০ নম্বর জার্সির ফুটবলার সব দলেরই সেরা তারকা। তার দায়িত্বও থাকে অনেক বেশি। ব্রাজিল হোক বা বাকি বিশ্বের সংবাদমাধ্যম, সবার নজর থাকে ১০ নম্বর জার্সির উপর। আমার বিশ্বাস, নেমার সব কিছুর জন্যই তৈরি। ১০ নম্বর জার্সি পরে ও নিজের সেরা খেলাটাই আবার খেলবে। তিতে কোচের দায়িত্ব নেওয়ার পর পরিস্থিতি অনেক পাল্টে গিয়েছে। দলকে আরও গুছিয়ে নিয়েছেন তিনি। অনেক এগিয়েছে দলটা। ব্রাজিলের রক্ষণ আরও শক্তিশালী করে তুলেছেন তিতে। আক্রমণ বিভাগে অনেক রকম বিকল্প তৈরি করেছেন। এখন ব্রাজিলের হাতে উইলিয়ান, গ্যাব্রিয়েল জেসুস, কুটিনহো, ডগলাস কোস্তা এবং রবের্তো ফির্মিনহোর মতো প্রতিভা রয়েছে। তবে বিশ্বের যে কোনও ফুটবল দলের কোচই নেমারকে দলে পেতে মুখিয়ে থাকবেন। তিতেও ব্যতিক্রম নন। ব্রাজিলের এখন দরকার সেরা ছন্দের নেমার। ওর মতো ফুটবলাররা মাঠে সতীর্থদের আরও আত্মবিশ্বাসী করে তুলতে পারে। বিশ্বে সবচেয়ে আলোচিত ফুটবলার নেমার এবং আমার বিশ্বাস, ব্রাজিলকে বিশ্বকাপ জেতানোর স্বপ্নপূরণ করে ও আমাদের সকলের প্রিয় তারকা হয়ে উঠতে পারে।
আমি সব সময়ই বলি, ব্রাজিল সব বিশ্বকাপেই ফেভারিট। এটাই ব্রাজিলের ঐতিহ্য। ১৯৯৮ বিশ্বকাপে আমরা রানার্স হয়েছিলাম। কিন্তু ব্রাজিলে দ্বিতীয় হওয়ার কোনও মূল্য নেই। চ্যাম্পিয়ন হওয়াটাই একমাত্র লক্ষ্য। ব্রাজিলে দু’নম্বর হোক বা চার নম্বর কোনও পার্থক্য নেই। যেমন গত বিশ্বকাপে দেখা গেল। চার নম্বরে শেষ করেছিল ব্রাজিল। সেই দলের ফুটবলাররা প্রবল সমালোচনার মুখে পড়েছিল। অন্য কোনও দেশ হয়তো বিশ্বকাপে দুই বা তিন নম্বরে শেষ করে উৎসবে মাতবে। কিন্তু ব্রাজিলে দুই বা তিন মানে ডুবিয়ে এসেছ।
২০০২ বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্যায় থেকেই আমরা দারুণ খেলেছিলাম। সে বার আমরা চ্যাম্পিয়ন হই। সব কিছুই একেবারে নিখুঁত হয়েছিল। সব সময় সেটা হয় না। এখন বিশ্বকাপে গ্রুপগুলো আরও জটিল হয়ে গিয়েছে। অনেকেই বিশ্বাস করে বড় দলগুলোর বিরুদ্ধে খেলতে নামলে ছোট দলগুলো চমকে দেয়। সেটা ম্যাচ জিতে হোক বা ড্র করে। সাধারণ মানুষ তা মনে করতে পারেন। তবে আমরা ফুটবলাররা জানি, এই ফলের পিছনে কত
পরিশ্রম থাকে।
এ বার ব্রাজিলের সামনে কোস্টা রিকা আর সার্বিয়ার চ্যালেঞ্জ। ওরা নিশ্চয়ই যাবতীয় বিশ্লেষণ সেরে রেখেছে। আশা করি, আমরা ওদের চমকে দিতে পারব! ফ্রেন্ডলি ম্যাচ বা বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্যায়ের ম্যাচে দু’একটা চমক দেখা যেতেই পারে। কিন্তু মোক্ষম সময়ে ফেভারিটরা দেখিয়ে দেয়, কেন তারা বড় দল। তার জন্য নিজেদের শান্ত রাখতে হবে, মাঠে নেমে ফুটবলকে উপভোগ করতে জানতে হবে। জাতীয় সঙ্গীতের সময় কান্না নয়, আবেগটা অনুভব করো। আগুনটা জ্বলুক ভিতরে, চোখে জল যেন না আসে। আমি এই কান্নার বিরোধী। কান্না দুর্বলতার লক্ষণ। এতে কোনও লাভ হয় না। জেতার ইচ্ছেটা হৃদয় দিয়ে অনুভব করতে হবে, চোখে যেন জয়ের তীব্র আকাঙ্ক্ষা থাকে। কারণ বিশ্বকাপ জেতার অনুভূতিটাই আলাদা। বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার অনুভূতি যে কী রকম, কাপ জেতার পরে দেশের মানুষ আর নিজের পরিবারকে কতটা খুশিতে ভরিয়ে দেওয়া যায়, সেটা বলে বোঝানো সম্ভব নয়। আমি নিজে যেমন মা-কে কী ভাবে গর্বিত করব, সেটা ভাবতে ভাবতে মাঠে নামতাম। মাঠে নেমে সব সময় সর্বস্ব উজাড় করে দেওয়ার চেষ্টা করেছি। আশা করি এই বিশ্বকাপে আমাদের দেশের ফুটবলাররাও সেটাই করবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy