পরিবর্তন: দুঙ্গার পরে দায়িত্ব নিয়েই ব্রাজিল ফুটবলকে পাল্টে ফেলেছেন তিতে। বিশ্বকাপে তাঁর ফুটবল প্রজ্ঞা বড় অস্ত্র নেমারদের। ফাইল চিত্র
রাশিয়া বিশ্বকাপের জন্য ব্রাজিলের কোচ নির্বাচন প্রক্রিয়া এমনই রোমহর্ষক আর নাটকীয়তায় ভরা যে, সেটাই একটা রুদ্ধশ্বাস ফুটবল ম্যাচের মতো।
ঘটনার শুরু ৯ জুলাই, ২০১৪-তে। নিজেদের দেশে বিশ্বকাপে জার্মানির কাছে ১-৭ দুরমুশ হওয়ার পরেও ব্রাজিল ফুটবল সম্ভবত পরিবর্তনের পথ ধরতে চায়নি। তাই সকলকে অবাক করে দিয়ে দুঙ্গাকেই তারা কোচের পদে রেখে দেয়।
ব্রাজিল ফুটবল কর্তারা অতিরিক্ত আস্থাই রেখেছিলেন দুঙ্গার উপর। কোনও দিনই খুব সম্মানীয় ফুটবল মস্তিষ্ক ছিলেন না তিনি। সাংঘাতিক কোনও বিপ্লব তিনি যে আনবেন না, জানাই ছিল। তবু ব্রাজিলের কর্তারা দুঙ্গার আড়ালেই বাঁচতে চেয়েছিলেন। এত বড় জাতীয় বিপর্যয়ের পরেও তাই তাঁরা পরিবর্তন আনতে চাননি।
২০১৪-র সেই অভিশপ্ত রাতের পরে দু’বছর কেটে গেল। ২০১৮ বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন পর্বের এক-তৃতীয়াংশ ম্যাচ হয়ে যাওয়ার পরেও ছয় নম্বরে ব্রাজিল। ফের আতঙ্কের পরিবেশ ফুটবলের দেশে। এ বার কি তা হলে বিশ্বকাপে যোগ্যতা অর্জন না করার লজ্জাও অপেক্ষা করে আছে? দুঙ্গা প্রবল চাপে থাকলেও না তিনি নিজে সরছেন, না তাঁকে কেউ সরাচ্ছে। বরং রিয়ো অলিম্পিক্সের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন কোচ। নিজেদের দেশে অলিম্পিক্সে সোনার পদক এনে দিতে পারলে জনতা নিশ্চয়ই সব কিছু ভুলে যাবে।
অলিম্পিক্সের আগেই অতিরিক্ত একটা কোপা আমেরিকা হল। এই প্রতিযোগিতার শতবর্ষ উদযাপন উপলক্ষে সেই ইভেন্ট হল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। দুঙ্গার ব্রাজিল ড্র করল ইকুয়েডরের সঙ্গে। তার পর পেরুর কাছে হেরে গ্রুপ পর্বেই বিদায় নিল। এর পর আর দুঙ্গাকে রক্ষা করা সম্ভব ছিল না ব্রাজিল ফুটবল কর্তাদের। দুঙ্গাকে সরিয়ে করন্থিয়ান্সের কোচ তিতেকে তাঁরা নতুন কোচ করে আনলেন।
পন্ডিতরা বলতে শুরু করেছেন, তিতের আগমনেই আমূল পাল্টে গিয়েছে ব্রাজিল দল। রাশিয়ায় নেমাররা যে যাচ্ছেন অন্যতম সেরা ফেভারিট হয়ে তার কারণ তিতেই।
দায়িত্ব নিয়েই কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিলেন তিতে। চিন থেকে ডেকে আনলেন পওলিনহোকে। সেই সময়ে এ নিয়ে বিতর্ক হলেও দারুণ সাফল্য পেলেন পওলিনহো। এর পর সেন্টার ফরোয়ার্ডের জায়গায় গ্যাব্রিয়েল জেসুসকে এনে ফাটকা খেললেন তিতে। সেটাও সুপারহিট। এ ছাড়া দুঙ্গার ব্রাজিল দলটাই ধরে রাখলেন তিনি। কিন্তু তফাত হচ্ছে, একটা দল হেরে হেরে বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছিল। অন্যটি জয়ের ধ্বজা উড়িয়ে পুরনো ব্রাজিল ফেরানোর স্বপ্ন দেখাচ্ছে। ফুটবল দুনিয়ায় এখন সব চেয়ে চর্চিত গবেষণা হচ্ছে, কী করে নতুন কোচের আগমন জাদুর মতো সমস্ত কিছু পাল্টে দিল?
তিতের ঘনিষ্ঠরা বলছেন, ব্রাজিলের নতুন গুরুর সব চেয়ে বড় গুণ হচ্ছে, শেখার খিদে। ব্রাজিলের ব্যর্থতাকে গ্রহণ করে নিয়ে তিনি ময়নাতদন্ত করেছেন, তার পর ভুলগুলো শুধরে নিয়ে এগিয়ে যেতে চেয়েছেন। সেই কারণেই তিনি সফল হচ্ছেন। আমরা ব্রাজিল, ফুটবলের শাসক— মিথ্যে অহং দেখিয়ে এই পুরনো স্লোগান ধরে রাখেননি তিনি। বরং মাথায় রেখেছেন এই তথ্য যে, বদলে যাওয়া ফুটবল পৃথিবীতে সিস্টেমই জেতায়, শুধু ব্যক্তিগত নৈপুণ্যে আজ আর বিশ্বকাপ জয় সম্ভব নয়। তিতে কখনও ইউরোপে ফুটবল কোচের দায়িত্ব সামলাননি। কিন্তু ইউরোপে তিনি অনেক দিন ধরে পড়ে থেকেছেন শুধু শেখার জন্য যে, সেখানকার দলগুলি কী ভাবে ফুটবল খেলে। ইউরোপের দলগুলির সঙ্গে লাতিন আমেরিকার দলগুলির প্রধান তফাত হচ্ছে, সংগঠিত ফুটবলের। কী ভাবে জমাট রাখতে হয় রক্ষণ ও আক্রমণ, সেটা ইউরোপের দলগুলির থেকে শেখার মতোই ব্যাপার। তিতে ইউরোপে পড়ে থেকে সেটাই শিখেছেন। সেই শিক্ষার দৌলতেই করিন্থিয়ান্সের কোচ হিসেবে তিনি ব্রাজিলে লিগ খেতাব জেতেন। দক্ষিণ আমেরিকার সেরার শিরোপা জেতেন। ক্লাব ওয়ার্ল্ড কাপের ফাইনালে হারান চেলসিকে।
এখানেই থেমে থাকেননি তিতে। ফুটবলে জ্ঞান লাভের লক্ষ্য নিয়ে ইউরোপের নেশা ছাড়েননি তিনি। কী ভাবে কোনও একটা জায়গায় হঠাৎ করে ফুটবলারের সংখ্যা বাড়িয়ে দিয়ে প্রতিপক্ষের নাভিশ্বাস ঘটাতে হয়, সেই শিক্ষাও ইউরোপের মাঠে মাঠে ঘুরে অর্জন করেছেন বর্তমান ব্রাজিল কোচ। আর তিতের সেই শেখার খিদেই এ বারের বিশ্বকাপে সেরা অস্ত্র হয়ে উঠতে পারে নেমারদের জন্য।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy