Advertisement
১৮ নভেম্বর ২০২৪

অ্যাজার-লুকাকু ঝলক দেখাতেই ধরাশায়ী সাম্বা জাদু

মিনিট পনেরোর মধ্যে দেখা গেল নেমার খোঁড়াচ্ছেন। চলে এসেছেন রিজার্ভ বেঞ্চের কাছে। তিতে দৌড়ে গেলেন। তত ক্ষণে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে মাঠ।

ভূপতিত: আরও এক ফেভারিটের পতন বিশ্বকাপে। বেলজিয়ামের কাছে ১-২ হেরে শুক্রবার রাতে লুটিয়ে পড়ল ব্রাজিল। ছবি: গেটি ইমেজেস

ভূপতিত: আরও এক ফেভারিটের পতন বিশ্বকাপে। বেলজিয়ামের কাছে ১-২ হেরে শুক্রবার রাতে লুটিয়ে পড়ল ব্রাজিল। ছবি: গেটি ইমেজেস

রতন চক্রবর্তী
কাজ়ান শেষ আপডেট: ০৭ জুলাই ২০১৮ ০৫:৪৯
Share: Save:

নেমার দ্য সিলভা স্যান্টোস (জুনিয়র) যখন মাঠে নামলেন, তখন এমন গর্জন উঠল যে, মনে হল তিনি ম্যাচটা জিতিয়েই দিয়েছেন।

সাম্বার গান কাজান স্টেডিয়ামে সমুদ্রের মতো আছড়ে পড়ল কোণ থেকে কোণে। সকাল থেকেই তো হলুদ জার্সিতে ছেয়ে গিয়েছিল শহর।

এর কিছুক্ষণ পর রোমেলু লুকাকুর নামটা ভেসে উঠল স্টেডিয়ামের বিশাল পর্দায়। তখন গ্যালারির কোণে বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতো একটা অংশ শুধু নড়ল। গান গেয়ে উঠল। এডেন অ্যাজার বা কেভিন দে ব্রুইনের ক্ষেত্রেও এই রকম ঘটনা ঘটল।

মিনিট পনেরোর মধ্যে দেখা গেল নেমার খোঁড়াচ্ছেন। চলে এসেছেন রিজার্ভ বেঞ্চের কাছে। তিতে দৌড়ে গেলেন। তত ক্ষণে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে মাঠ। এডেন অ্যাজারের তোলা কর্নার নিজের গোলেই ঢুকিয়ে দিয়েছেন ফের্নান্দিনহো লুইস রোসা। কার্ডের জন্য বাইরে চলে যাওয়া কার্লোস কাজেমিরোর বদলি হিসেবে নেমে ডোবালেন তিনি। গোলটার পর কোথায় যেন হারিয়ে গেল ব্রাজিল রক্ষণ। মনে হচ্ছিল আরও গোল খাবে। হলও তাই। কেভিন দে ব্রুইন গোল করে গেলেন অরক্ষিত অবস্থায়। বত্রিশ মিনিটের মধ্যেই ম্যাচটা বেরিয়ে গেল তিতের দলের হাত থেকে। আর ফিরল না। ফেরার কথাও ছিল না।

কান্না: হতাশ নেমার। ছবি: গেটি ইমেজেস

‘লাল দৈত্যদের’ দাপটে স্তব্ধ হয়ে গেল সাম্বা জাদু। বেলজিয়াম দলটাকে তো তাদের সমর্থকরা আদর করে ‘রেড ডেভিলস’ বলেই ডাকেন। কুর্তোয়া, লুকাকু, অ্যাজার, ফেলাইনিরা শুক্রবার রাতে সত্যিই এক এক জন ‘দৈত্য’ হয়ে উঠেছিলেন। রবের্তো মার্তিনেসের এই দলটাকে বলা হচ্ছে সোনালি প্রজন্মের বেলজিয়াম। তাদের দেশের সাংবাদিকরা বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ওঠা ১৯৮৬-র দলটার সঙ্গে অ্যাজারদের তুলনা করছেন। ব্রাজিলকে ছিটকে দেওয়ার পর এই টিমটাকে বলা উচিত সোনা নয়, হিরের দল। যেখানে অসংখ্য হিরে আলো ছড়ায়। কুর্তোয়া থেকে অ্যাজার, লুকাকু থেকে দে ব্রুইন— সবার দ্যুতিই এ দিন অন্ধকারে ঠেলে দিল তিতের দলকে। বিদায় করে দিল এ বারের বিশ্বকাপ থেকে। জার্মানি, আর্জেন্টিনা, পর্তুগাল, স্পেন বিদায়ের পর ব্রাজিলও ছিটকে গেল। অঘটনের বিশ্বকাপ বলা হচ্ছে এ বারের টুর্নামেন্টকে। বেলজিয়ামের এই জয় অবশ্য সাহসীদের জয়। পুরোপুরি অঘটন বলা যাচ্ছে না।

খেলার শেষে মাঠে বসে ছিলেন নেমার। বিধ্বস্ত। বিবর্ণ মুখ। এখন মনে হচ্ছে বিশ্বের সব চেয়ে দামি ফুটবলার তাঁর যোগ্যতার চেয়ে বেশি গুরুত্ব এবং প্রচার পেয়ে যাচ্ছেন। একার কাঁধে ম্যাচ জেতানোর ক্ষমতা তাঁর নেই। এ দিনও তাঁকে সেভাবে পাওয়া গেল কোথায়! নেমার দু’একবার পড়লেন বেলজিয়ামের বক্সে। রেফারি গুরুত্বই দিলেন না। তাঁর ছলচাতুরি যে বিশ্ব জুড়ে এখন হাসির খোরাক হয়ে গিয়েছে, সেটা এ দিন আবার প্রমাণ হয়ে গেল।

কিন্তু ঠিক কোন জায়গায় মার খেল ব্রাজিল? চুম্বকে যা উঠে আসছে তা হল, এক) কাজেমিরো না থাকায় লুকাকু, অ্যাজাররা মাঝমাঠে অনেকটা জায়গা পেয়ে গিয়েছেন। সেটা তাঁরা গতি আর শক্তি দিয়ে ব্যবহার করেছেন। দুই) ব্রাজিল রক্ষণ সারাক্ষণ নড়বড় করেছে। তিন) বেলজিয়ামের দুই সাইড ব্যাক দারুণ ভাবে সামলেছেন নেমার আর উইলিয়ানকে। ব্রাজিলের উইং খেলতেই পারেনি। চার) নিজেদের রক্ষণ সাজিয়ে পুরো ব্রাজিলকে গোলের সামনে এনে থামানোর ছক যে বেলজিয়াম কোচ নিয়েছিলেন, তা কাজে দিয়েছে।

ব্রাজিলের বিদায়ে ফের একটা জিনিস প্রমাণিত, তারকার উপর নির্ভর করে জেতার দিন শেষ। বিশ্ব ফুটবলের আমূল পরিবর্তন ঘটে গিয়েছে গত চার বছরে। ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ের পার্থক্য এখন শুধু সংখ্যা মাত্র। পাশাপাশি তিকিতাকা বা সাম্বা ঝলকের দিনও শেষ কি না, প্রশ্ন উঠে পড়েছে। শুধু সৌন্দর্যের ফুটবল দিয়ে আর ম্যাচ জেতা যাবে না। দলগত ফুটবলই এখন সোনা ফলাচ্ছে। বেলজিয়াম সেটাই প্রমাণ করে দিয়ে গেল। ফ্রান্সের সঙ্গে সেমিফাইনালে মুখোমুখি রবের্তো মার্তিনেসের বেলজিয়াম। ইউরোপেই এ বার তা হলে যাচ্ছে বিশ্বকাপ।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy