বিদায়: দেশে ফেরার পথে নেমাররা। শনিবার কাজ়ানে। ছবি: রয়টার্স।
প্রথমেই ব্রাজিল দলের হয়ে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নেওয়ার জন্য। আমি কিন্তু ভেবেছিলাম, বেলজিয়ামের বিরুদ্ধে এই ম্যাচটা আমরা জিতে যাব।
এর আগের কলামে আমি দু’টো ব্যাপার লিখেছিলাম। এক, ম্যাচটার ফয়সালা হয়ে যাবে মাঝমাঠের লড়াইয়ে। দুই, ফের্নান্দিনহোর ভূমিকা খুব গুরুত্বপূর্ণ হবে। কিন্তু ফের্নান্দিনহো সেরা ফর্মে ছিল না। কোনও ম্যাচ হারার জন্য আমি এক জন খেলোয়াড়কে কাঠগড়ায় তোলার পক্ষপাতী নই। কিন্তু ঘটনা হল, ফের্নান্দিনহোকে একেবারেই বেমানান লেগেছে নিজের জায়গায়।
বেলজিয়াম কোচ রবের্তো মার্তিনেস, সহকারী কোচ থিয়েরি অঁরি এবং ওদের বাকি সাপোর্ট স্টাফ রণনীতির খেলায় প্রথমার্ধে আমাদের টেক্কা দিয়ে গেল। মার্তিনেস খুব সাহস করে মাঝখানে তিন জনের ‘ডাবল রো’ তৈরি করেছিলেন। স্ট্রাইকার রোমেলু লুকাকুকে ডান দিকে পাঠিয়ে এডেন অ্যাজার-কে ওপরে আক্রমণ গড়ার দায়িত্ব দিয়েছিলেন। মার্তিনেসের এই চালটা ব্রাজিল কোচ তিতেকে বেসামাল করে দেয়। এর জন্য তৈরি ছিল না ব্রাজিল। ওরা নিজেদের মধ্যে ছোট ছোট পাসগুলো খেলতে পারছিল না। ফলে দলের প্লে-মেকার কুটিনহো এবং পাওলিনহো অধৈর্য হয়ে পড়ছিল। ফের্নান্দিনহো তো প্রায় হারিয়েই গিয়েছিল। ওর আত্মঘাতী গোল ব্রাজিলকে চাপে ফেলে দেয়।
আরও এক জনের কথা বলতে হবে। গ্যাব্রিয়েল জেসুস। ওর দিনটা খুব খারাপ গেল। শুধু একটা দিনই নয়, গোটা প্রতিযোগিতায় ও যে ভাবে খেলল, তাতে ব্রাজিল দলে জেসুসের জায়গা থাকা নিয়ে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। আমি জানি না, জেসুসকে কেন আগে তোলা হল না। কেন ফির্মিনোকে আগে নামানো হল না। অবশ্যই ওর আরও আগে নামা উচিত ছিল। জেসুসকে তো একেবারে বোতলবন্দি করে রেখেছিল ভ্যানসঁ কোম্পানি। ফির্মিনো থাকলে কাজটা এত সহজে করতে পারত না বেলজিয়াম ডিফেন্ডার। দ্বিতীয়ার্ধে আমরা সেটা ভালই বুঝতে পারলাম। যে সময়টা পুরো ব্রাজিলেরই আধিপত্য ছিল।
নেমার যথাসাধ্য চেষ্টা করেছিল। কিন্তু এর আগের ম্যাচগুলোয় ডিফেন্ডারদের চ্যালেঞ্জের পরে নেমার যে ভাবে অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল, তারই ফল পেতে হল এই ম্যাচে। বেশ কয়েকটা ন্যায্য ফ্রি-কিক দেওয়া হল না। শুধু ফ্রি-কিক কেন, আমি তো বলব একটা পেনাল্টিও দেওয়া হয়নি ব্রাজিলকে। বক্সের মধ্যে জেসুসকে ফাউল করে কোম্পানি। কিন্তু পেনাল্টি দেওয়া হয়নি। রেফারির নিজস্ব কোনও মত থাকতেই পারে, কিন্তু আমি বুঝলাম না ভিডিয়ো প্রযুক্তি কী ভাবে এটা ধরতে পারল না। যে কোনও পদ্ধতিতেই হোক, ন্যায় বিচার সব সময়ে হওয়া উচিত। আমার মনে হয়, শুক্রবারের ব্রাজিল ম্যাচে তা হয়নি।
তবে এত সব সত্ত্বেও বলব, ব্রাজিল নিজেদের সেরা খেলাটা খেলতে পারেনি। বিশেষ করে প্রথমার্ধে। বেলজিয়াম যে ভাবে খেলছে এই বিশ্বকাপে, তাতে ওদের সোনার প্রজন্মের ফুটবলারদের পরের রাউন্ডে অবশ্যই যাওয়া উচিত ছিল। সেটাই হল। বেলজিয়ামের মানুষ তাদের ফুটবলারদের নিয়ে গর্বিত হতেই পারে। দেশের কথায় আমার চোখের সামনে ব্রাজিলের মানুষগুলোর হতাশ মুখ ভেসে উঠছে। সবাই খুব ভেঙে পড়েছে। দোষারোপের পালাও শুরু হয়ে গিয়েছে। অনেকেই বলছেন, যে এগারো ফুটবলার আগের ম্যাচে জয় দিয়েছিল, তাদেরই প্রথম একাদশে রাখা উচিত ছিল। উইনিং কম্বিনেশন ভাঙা উচিত হয়নি। ফিলিপে লুইয়ের জায়গায় মার্সেলোকে নামানো ঠিক হয়নি। অনেকেই কুসংস্কার থেকে এ রকম কথা বলছেন। ফুটবল দুনিয়ায় কুসংস্কারের ব্যাপারটা নতুন কিছু নয়। অনেক ফুটবলারের আছে। আমারও ছিল। কিন্তু কুসংস্কারের ওপর ভিত্তি করে রণনীতি বানানো যায় না। এই রকম আলোচনা অবশ্য পরের বিশ্বকাপ শুরু হওয়ার আগে পর্যন্ত চলতেই থাকবে।
আমাদের সময়েও হেরে যাওয়ার পরে অনেক গালিগালাজ শুনতে হয়েছে। যা শুনতে শুনতে আমাদের ভাষাজ্ঞানও বেড়ে গিয়েছিল! এখনকার দলকেও শুনতে হবে। এই ভাবেই শেখার কাজটা চলে। কে বলতে পারে, এই জেসুস বা ফের্নান্দিনহো পরের বিশ্বকাপে ব্রাজিলের সেরা তাস হয়ে উঠবে কি না। হ্যাঁ, আমরা ২০২২ কাতার বিশ্বকাপ নিয়ে এখন থেকেই ভাবতে শুরু করেছি। এটাই ব্রাজিল। ব্যর্থতা আমাদের দমিয়ে দেয় না। বরং আরও শক্তিশালী হয়ে ফিরে আসার রসদ জোগায়।
যাই হোক, ম্যাচটার কথায় ফিরে আসি। কেভিন দে ব্রুইন নিঃসন্দেহে দিনের সেরা ফুটবলার ছিল। মাঝমাঠ থেকে বেলজিয়ামের বেশির ভাগ আক্রমণের জন্ম দিচ্ছিল। রোমেলু লুকাকু, অ্যাজাররা যখনই বল ধরেছে, বিপজ্জনক দেখিয়েছে। কিন্তু মারুয়ান ফেলাইনির কথা আলাদা করে বলতেই হবে। একটু রক্ষণাত্মক ভূমিকায় দুর্দান্ত খেলে গেল। লুকাকুকেও অভিনন্দন জানাতে হবে ওর নিঃস্বার্থ ভূমিকার জন্য। এই ছেলেটা সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়ার লড়াইয়ে আছে। কিন্তু ম্যাচে দলের কথা ভেবে গোল করানোর দিকেই বেশি নজর দিয়েছিল। বেলজিয়ামের দ্বিতীয় গোলের পিছনে লুকাকুর অবদান অনেক। মাঝখান দিয়ে, দু’জন ডিফেন্ডারকে পিছনে ফেলে দে ব্রুইনকে পাসটা বাড়িয়েছিল লুকাকু। যেখান থেকে দুরন্ত শটে গোল করে যায় দে ব্রুইন। থিবো কুর্তোয়াও গোটা দু’য়েক দারুণ গোল বাঁচাল।
এ বার বেলজিয়ামের সামনে ফ্রান্স। এটাও একটা দারুণ ম্যাচ হতে চলেছে। ফ্রান্স-বেলজিয়াম ম্যাচে আর একটা ব্যাপারেও সবার নজর থাকবে। বেলজিয়াম বেঞ্চে বসে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে রণনীতি তৈরি করছে স্বয়ং অঁরি! তবে সেটা অন্য আর এক দিনের কাহিনি হতে চলেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy