Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪
wimbledon 2021

Roger Federer: টেনিসের সেরা মঞ্চ কি এখনই বিদায় জানিয়ে দিল তার নায়ককে

আট বারের উইম্বলডন চ্যাম্পিয়নকে স্ট্রেট সেটে হেরে বিদায় নিতে হয়েছে।

অল ইংল্যান্ড ক্লাবের সেন্টার কোর্টে কি তবে আর টেনিসের এই ঐতিহাসিককে দেখা যাবে না?

অল ইংল্যান্ড ক্লাবের সেন্টার কোর্টে কি তবে আর টেনিসের এই ঐতিহাসিককে দেখা যাবে না? ছবি: টুইটার থেকে

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০২১ ০৮:১৩
Share: Save:

উইম্বলডনে রজার ফেডেরারের স্ট্রেট সেটে হার।

শেষ ইনিংসে ডন ব্র্যাডম্যানের শূন্য রানে বোল্ড হওয়া।

কোনটা বেশি অবাক করার মতো? তর্ক শুরু হয়েছে। হঠাৎ এই তর্কটা উঠছে বলেই আরও বড় একটা প্রশ্ন সেই সঙ্গে উঠে আসছে, অল ইংল্যান্ড ক্লাবের সেন্টার কোর্টে কি তবে আর টেনিসের এই ঐতিহাসিককে দেখা যাবে না?

বুধবার শেষ সার্ভিস করার জন্য যখন এগোচ্ছেন, তখন প্রায় পরিপূর্ণ সেন্টার কোর্টের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত জুড়ে চিৎকার, ‘লেট’স গো রজার, লেট’স গো’, ‘কাম অন রজার’, ‘গো অ্যান্ড কনকার’। না, আট বারের উইম্বলডন চ্যাম্পিয়নের কাছে সেন্টার কোর্টে এ সব নতুন কিছু নয়। উইম্বলডনে ১০৫টি ম্যাচ জেতা ফেডেরার এতেই অভ্যস্ত। কিন্তু এই অভ্যাসগুলোতেই বুধবার ছিল অনভ্যাসের প্রলেপ। শেষ সার্ভিস গেমটা ১০৫টি জেতা ম্যাচের মতো ছিল না। সেটা ছিল ব্যাগেল-এর (টেনিসে ০-৬ গেমে হার) বোঝা এড়ানোর সার্ভিস। কিন্তু পারেননি। একটা ভোঁতা ফোরহ্যান্ড ‘ওয়াইড’ হতেই পোলান্ডের অখ্যাত হুবার্ট হুরকাজের পক্ষে স্কোর দাঁড়ায় ৬-৩, ৭-৬, ৬-০। ব্যাগেলের বোঝা কাঁধে নিয়েই কোর্ট ছাড়তে হয় ফেডেরারকে।

মোট ৮টি খেতাব। টানা ৫বার চ্যাম্পিয়ন। ২০১৭ সালে একটিও সেট না খুইয়ে চ্যাম্পিয়ন। সেই বছরই ৩৫ বছর ১১ মাস বয়সে চ্যাম্পিয়ন হয়ে সবথেকে বেশি বয়সে খেতাব জয়ের নজির। মোট ১২টি ফাইনাল, টানা ৭টি ফাইনাল, টানা ৭টি সেমিফাইনাল, টানা ৩৪টি সেট জয় (দু’বার), মোট ১১৯টি ম্যাচ খেলা, ১০৫টি ম্যাচ জয়, ২২ বার প্রতিযোগিতায় নামা, এগুলো উইম্বলডনের রেকর্ড। আর এগুলো সবই ফেডেরারের দখলে। উইম্বলডন মানেই ফেডেরার।

ব্যাগেলের বোঝা কাঁধে নিয়েই কোর্ট ছাড়তে হয় ফেডেরারকে।

ব্যাগেলের বোঝা কাঁধে নিয়েই কোর্ট ছাড়তে হয় ফেডেরারকে। ছবি: টুইটার থেকে

টেনিসের সর্বশ্রেষ্ঠ এই প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হতে পারাটা যেকোনও খেলোয়াড়ের ছোটবেলার স্বপ্ন থাকে। কিন্তু ফেডেরারের হাতেই ট্রফি উঠুক, গত কয়েক বছর ধরে উইম্বলডন এই স্বপ্নটা দেখে এসেছে। একবার উইম্বলডন চ্যাম্পিয়ন হলে কোনও খেলোয়াড় নিজেকে ধন্য মনে করে। কিন্তু ফেডেরার যত বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন, তত বার উইম্বলডন নিজেকে ধন্য মনে করেছে।

সেই অল ইংল্যান্ড ক্লাবে এটাই ফেডেরারের সবথেকে বড় হার। এই মঞ্চে ব্যাগেল এই প্রথম। সব গ্র্যান্ড স্ল্যাম ধরলে মাত্র তৃতীয় ব্যাগেল। শেষ ০-৬ গেমে হার ২০০৮ সালে রাফায়েল নাদালের কাছে ফরাসি ওপেনে। ২০০২ সালের পর থেকে উইম্বলডনে প্রথম স্ট্রেট সেটে হার (সব মিলিয়ে সংখ্যাটা মাত্র তিন)।

বহু তাৎপর্যে জর্জরিত এই হার ফেডেরারের নিরিখে সর্বার্থে অস্বাভাবিক। হয়ত সেই কারণে খেলা শেষ হওয়ার পর আর একটুও অপেক্ষা না করে কোর্ট ছেড়ে বেরিয়ে যান তিনি। ব্যাগটা নিয়ে বেরনোর আগে শুধু একবার হাত নাড়েন। অস্বাভাবিক বলেই হয়ত হারার আবেগকে গায়ে মেখে নেওয়ার জন্য নিজের উপস্থিতি দীর্ঘায়িত করতে চাননি। তাই প্রশ্নটা বারবার উঠছে, এ দেখাই শেষ দেখা নয় তো?

প্রথম রাউন্ডেই বিদায়ের একটা আবহ তৈরি হয়েছিল। ২-২ অবস্থায় উল্টো দিকে থাকা আদ্রিয়ান মানারিনো পা পিছলে পড়ে যান। ম্যাচের পর সেদিনই ফেডেরার বলেছিলেন, হেরেও যেতে পারতাম। এরপর রিচার্ড গ্যাসকোয়েট, ক্যামেরন নরি, লরেঞ্জো সনেগোর বিরুদ্ধে জিতলেও কখনওই উইম্বলডনের মঞ্চে মানানসই ফেডেরারকে দেখা যায়নি। বুধবার তার চূড়ান্ত রূপ দেখা গেল। পায়ের নড়াচড়া যেটুকু চোখে পড়েছে, অধিকাংশই ভুল। তাতে গতি ছিল না। ভুল শট বাছাই ছিল। শুধু দ্বিতীয় সেটের টাই ব্রেকারটাই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেবে, বুধবার কতটা নিষ্প্রভ ছিলেন। তবু অনেকেই বলছেন ভুল হতেই পারে, ৪০-এর দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে রিফ্লেক্সেও একটু মরচে ধরতে পারে। কিন্তু তৃতীয় সেটের ফেডেরার যে নিজেই নিজের স্পিরিট, জেদ, একাগ্রতা, খাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে লড়াই করার অদম্য ইচ্ছে নিয়েই প্রশ্ন তুলে দিলেন।

তবু এর মধ্যেও বুধবার সেন্টার কোর্টে এক ফেডেরার ভক্তকে ‘আরও একটা বছর, অন্তত আরও একটা বছর’ বলে অনুনয় করতে শোনা যায়। সত্যিই আরও একটা বছর কি দেখা যাবে? না কি ব্যাগেলের বোঝা, স্ট্রেট সেটে হার, জঘন্য ফোর হ্যান্ড ফেডেরারের শেষ দেখে ফেলল?

বুধবার সেন্টার কোর্টের চিৎকারে বোধ হয় ‘থ্যাঙ্ক ইউ’ আর ‘গুড বাই’-এর বিদায় সম্ভাষণই বেশি মেশানো ছিল।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE