মায়ামি ওপেন জিতে প্রথম নজর কাড়েন হুরকাজ। ছবি: রয়টার্স
এক সাংবাদিক সম্মেলনে তাঁকে প্রশ্নই করা হয়নি। শুধু বিদেশের সাংবাদিকরা নয়, তাঁর দেশের সাংবাদিকরাও কোনও প্রশ্ন করেননি তাঁকে। অবাক হয়ে হুবার্ট হুরকাজ বলেছিলেন, ‘‘কোনও প্রশ্ন নেই? প্রথম বার এমন অভিজ্ঞতা হল।’’ ঘাসের কোর্টে রজার ফেডেরারকে হারিয়ে দিয়েছেন। শুধু হারিয়েই দেননি, এমন ভাবে হারিয়েছেন যে ফেডেরারের মনে জন্ম নিয়েছে অবসরের ভাবনা। ০-৬ ব্যবধানে সেট হেরে পরের বার ফের উইম্বলডনে নামতে পারবেন কি না সেই বিষয় নিশ্চিত হতে পারছেন না ফেডেরার। হুরকাজের নাম বোধ হয় থেকে যাবে সুইস তারকার মনেও।
মায়ামি ওপেন জিতে প্রথম নজর কাড়েন হুরকাজ। ফাইনালে ওঠার পথে একের পর এক তারকাকে হারিয়ে দেন তিনি। সেমিফাইনালে যেমন জেতেন চতুর্থ বাছাই রুশ তারকা আন্দ্রে রুবলেভের বিরুদ্ধে। তার আগে তাঁর সামনে দাঁড়াতে পারেননি ষষ্ঠ বাছাই ডেনিস শাপোভালভ, দ্বাদশ বাছাই মিলস রায়োনিচ ও দ্বিতীয় বাছাই স্টেফানোস চিচিপাস। ফাইনালে হারিয়েছিলেন তরুণ ইয়ানিক সিনারকে।
তারকা বধে অভ্যস্ত হুরকাজ বুধবার ফেডেরারকে হারিয়ে পৌঁছে গেলেন উইম্বলডনের সেমিফাইনালে। গ্র্যান্ড স্ল্যামে এটাই তাঁর সর্বোচ্চ সাফল্য। হয়তো এই সাফল্য গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ের চেয়েও বড়। পোলান্ডের দ্বিতীয় টেনিস খেলোয়াড় হিসেবে উইম্বলডনের সেমিফাইনালে তিনি। ২০১৩ সালে এই কীর্তি গড়েছিলেন জার্জি জানোইচ।
পাঁচ বছর বয়স থেকে টেনিস শেখা শুরু হুরকাজের। তাঁর মা জোফিয়া মালিসজিয়স্কা-হুরকাজ বয়স ভিত্তিক টেনিসে দেশের এক নম্বর ছিলেন। মাকে দেখেই টেনিস খেলার ইচ্ছা জাগে ২৪ বছর বয়সি এই পোলিশ তারকার। তাঁর দশ বছরের ছোট বোনও টেনিসেই মজে।
শুধু টেনিস নয়, হুরকাজের পছন্দ ঘুরে বেড়ানো। প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে যেতে ভালবাসেন তিনি। ছয় ফুট পাঁচ ইঞ্চির হুরকাজের পছন্দ পাহাড়। সময় পেলেই বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে চলে যান সেখানে।
মায়ের থেকে প্রথম টেনিসের পাঠ পেলেও টেনিস নিয়ে স্বপ্ন দেখা শুরু করেছিলেন ফেডেরারকে দেখে। যাঁকে হারিয়ে গোটা বিশ্বের কাছে আজ তিনি পরিচিত নাম। ছোটবেলায় টিভিতে সেই ফেডেরারের খেলা দেখেই আরও বেশি করে টেনিসে মগ্ন হয়ে যান হুরকাজ।
ফেডেরার যখন প্রথম বার উইম্বলডনে পা রাখেন, হুরকাজের বয়স তখন দু’বছর। ঘাসের কোর্টে এই ২২ বছরে কখনও লভ-এ সেট হারেননি ফেডেরার। সেই বিস্ময় কাণ্ডও ঘটে গিয়েছে বুধবার। নেপথ্যে হুরকাজ।
তবে টেনিস না খেললে বাস্কেটবল অথবা রেসিংকেও কেরিয়ার হিসেবে বেছে নিতে পারতেন হুরকাজ। খেলা যে তাঁর রক্তে। মা ছাড়াও দুই কাকা টেনিস খেলতেন। দাদু খেলতেন ভলিবল। হুরকাজ বলেন, “আমার জিনেই রয়েছে খেলা, পরিবারের থেকে যে অনুপ্রেরণা পাই, খেলার প্রতি যে ভালবাসা পাই, সেটাই মনে হয় আমাকে এত সাহায্য করে।”
গ্র্যান্ড স্ল্যামের মঞ্চে প্রথম জয় পেয়েছিলেন ২০১৮ সালে। ফরাসি ওপেনের প্রথম পর্বে হারিয়ে দিয়েছিলেন টেনিস স্যান্ডগ্রেনকে। তবে দ্বিতীয় পর্বে হেরে যান মারিন চিলিচের বিরুদ্ধে। চতুর্থ সেট অবধি নিয়ে গিয়েছিলেন খেলা। তবে শেষ পর্যন্ত হার মানেন হুরকাজ।
হুরকাজের প্রশিক্ষক ক্রেইগ বয়নটন হুরকাজের তুলনা করেন অ্যান্ডি মারের সঙ্গে। তিনি বলেন, “অনেকে বলে হুবি (হুরকাজ) অ্যান্ডি মারের মতো দেখতে। ওর রিটার্নগুলোও কিছুটা মারের মতো। মিল রয়েছে ব্যাকহ্যান্ডেও। মারের থেকে কিছুটা লম্বা হুবি। কোর্টের মধ্যে মারে প্রচণ্ড সচল, হুবির মধ্যেও সেটা দেখা যায়।”
পোলান্ডের প্রথম টেনিস খেলোয়াড় হিসেবে এটিপি মাস্টার্স ১০০০ সিঙ্গলস জিতেছিলেন মায়ামিতে। এই মুহূর্তে বিশ্ব টেনিসের ক্রমতালিকায় ১৮ নম্বর স্থানে রয়েছেন হুরকাজ। জীবনটাই বদলে গিয়েছে তাঁর। মায়ামি ওপেন জেতার দু’সপ্তাহ পরেও সাংবাদিকরা তাঁকে প্রশ্ন করতে আগ্রহী ছিলেন না। এপ্রিল মাসের একটি সাংবাদিক সম্মেলনে তাঁকে কোনও প্রশ্নই করা হয়নি। অবাক হয়েছিলেন। বুধবার ফেডেরারকে হারানোর পর তাঁর প্রতিটা শব্দ শোনার জন্য কান পেতে রয়েছে সাংবাদিক মহল।
হুরকাজ বলেন, “ফেডেরার আমাকে সেমিফাইনালের জন্য শুভেচ্ছা জানিয়েছে। ফেডেরারকে হারিয়ে কোর্ট থেকে বেরোনোর অভিজ্ঞতা যেন স্বপ্ন সত্যি হওয়ার মতো। তাও আবার ঘাসের কোর্টে। দর্শকদের উচ্ছ্বাসও দারুণ লেগেছে।”
উইম্বলডনের সেমিফাইনালে হুরকাজ খেলবেন ইটালির মাতেও বেরেত্তিনির বিপক্ষে। বিশ্বের নয় নম্বরের বিরুদ্ধে নামবেন হুরকাজ। দু’জনেই প্রথম বার উইম্বলডনের সেমিফাইনালে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy