গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
সর্বকালের সেরা (গ্রেটেস্ট অব অল টাইম, বা গোট) কে? যুগ-যুগান্ত ধরে বিভিন্ন খেলাধুলোয় এটি চর্চিত, তর্কিত। বিশ্বকাপ ফুটবলে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা ফাইনাল, অলিম্পিক্সে ১০০ মিটারের ফাইনাল, ক্রিকেটে ভারত-পাকিস্তান লড়াই, এগুলোর মধ্যেও মানুষ ব্যক্তিপুজো, ব্যক্তিলড়াইয়ের উপাদান খোঁজে। কে বড়? এই ছা-গ-লের যুদ্ধ শুরু হয়ে গেলে ক্রীড়াপ্রেমীরা আর কিছু চায় না।
এর একটা বড় কারণ, ‘সেরা কে’, কখনওই এই প্রশ্নের সুনির্দিষ্ট জবাব পাওয়া যায় না। লড়াইটা চলতেই থাকে। শুধু তাই নয়, যতক্ষণ খুশি এই লড়াই চালানো যায়। এর ওপর দলগত খেলার বদলে ব্যক্তিগত খেলা হলে তো সোনায় সোহাগা। শেষ হতে না চাওয়া যুদ্ধের রোমা়ঞ্চ তখন দ্বিগুণ হয়ে যায়।
এই রোমাঞ্চকর যুদ্ধই বিশ্ব টেনিস উপভোগ করেছে গত এক যুগ ধরে। যে ত্রয়ী এই যুদ্ধের সেনাপতি, সেই রজার ফেডেরার, রাফায়েল নাদাল এবং নোভাক জোকোভিচ যেহেতু সমসাময়িক, প্রতিটি গ্র্যান্ড স্ল্যামের আগে গোট বিতর্কও শুরু হয়ে গিয়েছে নিয়ম করে।
একটা সময়ে মনে হয়েছিল, এই ত্রিমুখী ম্যারাথনে যখন ইতি পড়বে, তখনই বোঝা যাবে, ছা-গ-ল কে। কিন্তু গত দু’-তিন বছরে ছা-গ-লটা বোধ হয় ধরা পড়েছে। তাই হয়ত এ বার যুদ্ধেও ইতি পড়তে চলেছে।
#Wimbledon title No.6 is in reach.
— Wimbledon (@Wimbledon) July 9, 2021
Defending champion @DjokerNole is into his seventh final at The Championships with a straight sets victory over Denis Shapovalov pic.twitter.com/QpyX7Ho0eZ
রবিবার উইম্বলডন ফাইনালে নামছেন জোকোভিচ। জিতলে ২০টি গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতে ফেডেরার, নাদালের বিশ্ব রেকর্ডে ভাগ বসাবেন। ছ’টি উইম্বলডন খেতাব হয়ে যাবে। জিততে না পারলেও রজার, রাফাকে টপকে যাওয়া যে জোকারের কাছে স্রেফ সময়ের অপেক্ষা, সেটাও বলে দেওয়া যায়।
অথচ, আট-দশ বছর আগেও মনে হয়নি, সেরার শিরোপাটা তাঁর মাথাতেই বসতে চলেছে। তিনি যে আর পাঁচজন গড়পড়তার থেকে আলাদা, সে বিষয়ে বিন্দুমাত্র সন্দেহ না থাকলেও মনে হয়নি ছা-গ-লের যুদ্ধে তিনিই বাজিমাত করবেন। বাকি দুই মহারথীর থেকে বড়জোর ইতিউতি দু-একটা গ্র্যান্ড স্ল্যাম তিনি ছিনিয়ে নিতে পারেন, এই পর্যন্তই ভাবা গিয়েছিল। সহানুভূতি মিশিয়ে এরকমও বলা হচ্ছিল, ‘আহা রে! বেচারা যদি ১০টা বছর আগে, বা পরে জন্মাত, তাহলে হয়ত ফেডেরার আর নাদালকে ছা-গ-লের যুদ্ধে অনেক বেশি বেগ দিতে পারত।’
ভাবা যায়নি, বাকি দুজনের খেলোয়াড়জীবনের জীবদ্দশাতেই জোকোভিচ তাঁদের টেক্কা দেবেন। ২০০৭ সালে চারটি গ্র্যান্ড স্ল্যামেই তাঁকে বাকি দু’জনের কাছে হারতে হয়েছিল। অস্ট্রেলিয়ান ওপেন ও ইউএস ওপেনে হেরেছিলেন ফেডেরারের কাছে। নাদালের কাছে হেরেছিলেন উইম্বলডন এবং ফরাসী ওপেনে।
পরের বছর ফেডেরারকে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে হারিয়ে জীবনের প্রথম স্ল্যাম ঘরে আনলেও সেটা অঘটনই মনে হয়েছিল। তারপরেই ফরাসী ওপেন এবং অলিম্পিক্সে হেরে গিয়েছিলেন নাদালের কাছে। ২০০৮ এবং ২০০৯, দুটি ইউএস ওপেনেই হেরেছিলেন ফেডেরারের কাছে।
২০১১ যখন শুরু হল, তখন ফেডেরারের ঝুলিতে ১৬টি গ্র্যান্ড স্ল্যাম, নাদালের নয়টি। জোকোভিচ একটি জিতে ‘বেচারা’-র পর্যায়ে। টেনিস পণ্ডিতদের সেই সহানুভূতি, ‘যদি ১০ বছর আগে-পরে জন্মাতেন!’ চাকাটা ঘুরল সেই বছর থেকেই। খাদ্যাভ্যাস, জীবন যাত্রা আমুল বদলে ফেলে তত দিনে তিনি টেনিস সার্কিটের সবথেকে ফিট খেলোয়াড়। ব্যাকহ্যান্ড, সার্ভিসে তখন তাঁর উন্নতিটা চোখে পড়ছে।
২০১১-র পর থেকে স্ল্যামের রেকর্ডটা এরকম: জোকোভিচ ১৮টি, নাদাল ১১টি, ফেডেরার ৪টি। ত্রয়ীর মধ্যে মাত্র একজনই প্রতিটি স্ল্যাম অন্তত দু’বার করে জিতেছেন, একজনই নাদালকে ফরাসী ওপেনে দু’বার হারিয়েছেন, একজনই ফেডেরারকে উইম্বলডনে দু’বার হারিয়েছেন। ক্লে-কোর্টের সেরাকে ক্লে-কোর্টে একজনই সবথেকে বেগ দিয়েছেন, ঘাসের কোর্টের সেরাকে ঘাসের কোর্টে একজনই প্রায় টপকে যাচ্ছেন। আর হার্ড কোর্টে এখনই ধারে-কাছে কেউ নেই। অস্ট্রেলিয়ান ওপেন এবং ইউএস ওপেন মিলিয়ে ১২টি খেতাব। মুখোমুখি লড়াইয়ে জোকোভিচ এখনই দুজনের থেকে এগিয়ে।
সময় যত এগোচ্ছে, ততই জোকোভিচ, জোকোভিচ, জোকোভিচ। ২০১৮-র উইম্বলডন জয় থেকে শুরু করলে শেষ ১১টি গ্র্যান্ড স্ল্যামের মধ্যে সাতটিই তাঁর দখলে। শেষ তিনটি অস্ট্রেলিয়ান ওপেন, শেষ দুটি উইম্বলডন ট্রফিতে তাঁর নামই বসেছে।
জোকোভিচ যত ধারালো হয়েছেন, তত ফেডেরার পিছিয়ে পড়েছেন। ৩৯ বছরের ফেডেরার শেষ গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতেছেন তিন বছর আগে (২০১৮ সালে অস্ট্রেলিয়ান ওপেন)। আগামী অগস্টে ৪০-এ পা দিতে চলা ফেডেরার দীর্ঘ চোট সারিয়ে এ বারই কোর্টে ফিরেছিলেন। কোনও এক অখ্যাত হুবার্ট হুরকাজের কাছে ব্যাগেল (০-৬) সমেত স্ট্রেট সেটে হেরে কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে ছিটকে গিয়েছেন।
সম্প্রতি শুধু নাদালের ওপর দাপট দেখিয়েছেন ফেডেরার। শেষ সাত বারের মধ্যে ছয় বারই তিনি জিতেছেন। এর মধ্যে ২০১৭-র অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের ফাইনালও আছে। কিন্তু জোকোভিচ ধাঁধা তাঁর কাছে ক্রমেই জটিল হয়েছে।
অন্য দিকে ১৩ বার ফরাসি ওপেন জেতা বাদ দিলে ৩৫-এর নাদালের শেষ গ্র্যান্ড স্ল্যাম দুই বছর আগে।
২০০৭ সালে ফেডেরার যখন তার আগের চার বারের চ্যাম্পিয়নের তকমা নিয়ে খেলতে নেমেছিলেন, তখন জুয়াড়িদের বিচারে তাঁর জেতার সম্ভাবনা ছিল ৭১ শতাংশ। এ বার জোকোভিচের ক্ষেত্রে সংখ্যাটা ৫২ শতাংশ।
তাঁর ওপর বাজি ধরে জুয়াড়িরা হারুন, বা জিতুন, ছা-গ-লের যুদ্ধ নিয়ে বোধ হয় আর জুয়া, লড়াই কোনওটাই হবে না। টেনিসপ্রেমীরা হয়ত একটু হতাশ হবেন। বছরের পর বছর ধরে বহু যত্নে লালন করা ছা-গ-লের যুদ্ধে এ বার চিরকালীন ইতি পড়তে চলেছে। ছা-গ-ল ধরা পড়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy