Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Rameshbabu Praggnanandhaa

দাবা বিশ্বকাপে দ্বিতীয় ভারতীয় হিসাবে রানার-আপ, প্রজ্ঞার উত্থান সম্ভবই হত না মা-কে ছাড়া

দাবায় বিশ্বকাপ জেতা হল না প্রজ্ঞানন্দের। ফাইনালে হেরে গেলেন ম্যাগনাস কার্লসেনের কাছে। কিন্তু এই উত্থান কখনও সম্ভবই হত না তাঁর মা-কে ছাড়া। প্রজ্ঞানন্দের রানার-আপ হওয়ার পিছনে রয়েছে মায়ের পরিশ্রম।

chess

মায়ের সঙ্গে প্রজ্ঞানন্দ (ডান দিকে)। — ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২৪ অগস্ট ২০২৩ ১৭:২৪
Share: Save:

ইতিহাস গড়া হল না রমেশবাবু প্রজ্ঞানন্দের। ভারতের দ্বিতীয় খেলোয়াড় হিসাবে দাবা বিশ্বকাপ জেতা হল না তাঁর। ফাইনালে হেরে গেলেন ম্যাগনাস কার্লসেনের কাছে। তবু ১৮ বছরের এই খেলোয়াড়ের সাফল্যে মুগ্ধ, উজ্জীবিত গোটা দেশ। পাঁচ বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন খেলোয়াড়কে কাছে হারতে হলেও লড়াই করলেন প্রজ্ঞানন্দ। তাঁর এই উত্থানের পিছনে এক জনের কথা না বললে ভুল হবে, যাঁর অক্লান্ত, ঐকান্তিক পরিশ্রম না থাকলে আজ হয়তো দাবাড়ু হতেই পারতেন না প্রজ্ঞানন্দ।

কথায় আছে, যে কোনও সফল মানুষের পিছনেই কারও না কারও অবদান থাকে। সর্বসমক্ষে আসেন না। তিনি সাধারণত অন্তরালেই থেকে যান। সচিন তেন্ডুলকরের সাফল্যে পিছনে তাঁর দাদা অজিতের কথা ভুললে চলবে না। ঠিক সে ভাবেই রজার ফেডেরার হয়তো এত সাফল্য পেতে পারতেন না পাশে স্ত্রী মিরকা না থাকলে।

ভারতের দাবাড়ু প্রজ্ঞানন্দের পাশেও তেমনই একজন সর্ব ক্ষণ লেগে থাকেন ছায়ার মতো। তিনি মা নাগালক্ষ্মী। প্রজ্ঞানন্দ যেখানেই খেলতে যান না কেন, তাঁর মা সঙ্গে সঙ্গে যাবেনই। দাবা বিশ্বকাপের ফাইনালে যখন ম্যাগনাস কার্লসেনের বিরুদ্ধে চৌষট্টি খোপের লড়াইয়ে ছেলে মগ্ন ছিলেন, তখনও দর্শকাসনের এক কোনায় বসে একটানা প্রার্থনা করে যাচ্ছিলেন নাগালক্ষ্মী। সেই প্রার্থনা এ বার হয়তো কাজে লাগল না। কিন্তু আগামী দিনে তা সাফল্য এনে দিতেই পারে। হয়তো আরও উচ্চতর কোনও মঞ্চে।

সম্প্রতি একটি ছবি ভাইরাল হয়েছে সমাজমাধ্যমে, যেখানে নাগালক্ষ্মীকে হাসিতে ফেটে পড়তে দেখা গিয়েছে। ফ্যাবিয়ানো কারুয়ানাকে সেমিফাইনালে হারানোর পর সেই ছবি তোলা হয়েছিল। সেই ছবিতে কমেন্ট করেছিলেন খোদ গ্যারি কাসপারভ। তিনি লেখেন, “আমাকেও সব প্রতিযোগিতায় খেলতে নিয়ে যেত মা। নিঃসন্দেহে সেটা অন্য ধরনের একটা সমর্থন!”

তবে ওই একটাই ছবিতে তাঁর মুখে হাসি দেখা যাবে। নাগালক্ষ্মীর বাকি যে সব ছবি সমাজমাধ্যম দেখা যাবে, তাতে তাঁর সঙ্গে আর পাঁচটা দক্ষিণ ভারতীয় মহিলার কোনও ফারাক নেই। সাধারণ শাড়ি, কপালে তিলক এবং আদ্যোপান্ত দক্ষিণ ভারতীয় চালচলন। কোনও আড়ম্বর নেই, কোনও বাহুল্য নেই, কোনও আভিজাত্যের ছাপ নেই। হয়তো এটাই বাকিদের থেকে আলাদা করে দিয়েছে প্রজ্ঞানন্দকে।

ছেলের জীবনে নাগালক্ষ্মীর অবদান কতটা সেটা প্রজ্ঞানন্দের যে কোনও কোচ বা সতীর্থকে জিজ্ঞাসা করলেই জানা যাবে। আজ প্রজ্ঞানন্দ যে জায়গায় পৌঁছেছেন, সেখানে তাঁর মায়ের অবদান অনস্বীকার্য। ছোটবেলায় দাবার ক্লাসে নিয়ে যাওয়া, বাড়িতে প্রজ্ঞা এবং দিদি বৈশালীর জন্যে অনুশীলনের যথাযথ ব্যবস্থা করে দেওয়া, ঘর থেকে হাজার হাজার মাইল দূরে থাকলেও ঘরোয়া খাবারের ব্যবস্থা করা, কোনও কিছুতেই ফাঁক রাখেননি তিনি।

অতীতে এক সাক্ষাৎকারে নাগালক্ষ্মী বলেছিলেন, “প্রজ্ঞা আসলে এমন এক-একটা জায়গায় খেলতে যায়, যেখানে দূর থেকে খেলা দেখলেও মনে হয় আমার হৃৎস্পন্দন শোনা যাবে। এতটাই নিস্তব্ধতা থাকে। পাছে ও চাপে পড়ে যায়। আমি চাই না খেলার সময়ে ওর মনের মধ্যে অন্য কোনও ভাবনা থাকুক। মা হিসাবে আমি বুঝতে পারি ও কখন চিন্তায় পড়েছে এবং কখন আত্মবিশ্বাসী।”

বছরের পর বছর ধরে ছেলেকে প্রতিযোগিতায় বা ক্লাসে নিয়ে গেলেও দাবার ব্যাপারে এখনও কিছুই জানেন না প্রজ্ঞানন্দের মা। কিন্তু ছেলের মুখের দিকে তাকালেই বুঝে যান ম্যাচের ফলাফল কোন দিকে এগোচ্ছে। তাই ম্যাচ চলাকালীন কখনও হতাশ, কখনও উজ্জীবিত হয়ে ওঠে নাগালক্ষ্মীর মুখ।

প্রজ্ঞানন্দের প্রথম দাবা কোচ এস ত্যাগরাজন আরও ভাল জানেন তাঁর মায়ের অবদানের কথা। চেন্নাইয়ের ব্লুম দাবা অ্যাকাডেমির কর্ণধার এক ওয়েবসাইটে জানিয়েছেন, কী ভাবে প্রত্যেকটা প্রতিযোগিতায় এসে দর্শকাসনের এক কোণে বসে ছেলের জন্যে প্রার্থনা করতেন নাগালক্ষ্মী। তাঁর কথায়, “তখন প্রজ্ঞার সাত বছর বয়স। কিন্তু প্রত্যেকটা ম্যাচে এসে দেখতাম উনি প্রার্থনা করছেন। সেটা যে কোনও প্রতিযোগিতার যে কোনও ম্যাচই হোক না কেন।”

তাঁর সংযোজন, “সাধারণত সকাল ১০টা থেকে প্রজ্ঞানন্দের কোচিং ক্লাস শুরু হত। চলত সন্ধে ৭টা পর্যন্ত। কখনও-সখনও তিন-চার ঘণ্টার হোমওয়ার্ক দিতাম। বা ৭টার পরেও ক্লাস চলত। সময় যা-ই হোক, ওর মা সব সময় পাশে থাকত। রাত ১০টার সময় সব অনুশীলন শেষ হলে ওর মা বাড়ির কাজকর্ম শুরু করত।” নাগালক্ষ্মী সেই কারণেই বলেছেন, “এত ব্যস্ততার জন্যেই আমার আর খেলাটা শেখা হয়নি। যাতে আমার ছেলেমেয়েরা ভাল খেলে।”

টিভি দেখার নেশা ছাড়াতে ছেলেমেয়েকে এক সময় দাবায় ভর্তি করিয়ে দিয়েছিলেন নাগালক্ষ্মী। সেই বাড়িতেই আজকাল আর টিভি চলে না। বাড়ির পরিবেশ নিস্তব্ধ রাখা হয় যাতে দুই ভাইবোন মন দিয়ে অনুশীলন করতে পারেন। বাড়িতে কোনও অতিথি এলে গাড়ি রাখার জায়গায় তাঁদের অভ্যর্থনা জানানো হয়।

ছেলেমেয়েরা যাতে সব সময় বাড়ির সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর খাবার খেতে পারে, তার জন্যে বিদেশে গেলে সব সময় একটি ইন্ডাকশন স্টোভ এবং রাজমা, রসম সঙ্গে রাখেন নাগালক্ষ্মী। বাসনপত্রও সঙ্গে নিয়ে যান। প্রজ্ঞানন্দের বাবা কে রমেশবাবু জানিয়েছেন, বিদেশ যাওয়ার হলে সবার আগে বাসনপত্রই গোছানো হয়। কারণ তিনি বিশ্বাস করেন, বাড়ির ভাল খাবার খেলেই তবেই মন ভাল থাকবে এবং সেরা খেলাটা বেরিয়ে আসবে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy