চ্যালেঞ্জ: কোহালি চান, টেস্টেও খোলা মনে খেলুন রোহিত। এএফপি
রোহিত শর্মার টেস্ট ওপেনার হিসেবে অভিষেকের লগ্নে অধিনায়ক বিরাট কোহালির মুখে শোনা গেল বীরেন্দ্র সহবাগের কথা। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের পরামর্শে মিডল অর্ডার থেকে ওপেন করার অভিযানে রাজি হন সহবাগ। বাকিটা ইতিহাস। কোহালিও মনে করছেন, ওপেনার হিসেবে রোহিত যদি সফল হতে পারেন, তা হলে সহবাগীয় সেই প্রভাব তিনি আনতে পারবেন তাঁদের এই প্রজন্মের টেস্ট দলে।
‘‘এমন নয় যে, রোহিতকে বলে দেওয়া হচ্ছে, তোমার থেকে এই বিশেষ ধরনের ব্যাটিং ভঙ্গি চাইছি। বরং ওকে খোলা মনে খেলতে দেওয়াটাই লক্ষ্য। কেউ বীরু ভাইকেও বলত না, তোমাকে লাঞ্চের আগেই একশো করতে হবে,’’ মঙ্গলবার বিশাখাপত্তনমে সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন বিরাট। যোগ করেন, ‘‘কিন্তু ওর শক্তিই হচ্ছে বোলিংকে শাসন করে খেলা। ঠিক যে ভাবে বীরু ভাইও খেলতে পছন্দ করত। ওদের সহজাত ভঙ্গিটাই আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলার।’’
তবে সহবাগীয় সেই প্রভাব যদি রোহিত যোগ করতে পারেন, তা হলে যে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের দৌড়ে ভারতীয় দলের ব্যাটিং অন্য মাত্রা পেয়ে যাবে, তা নিয়ে সংশয় নেই কোহালির মনে। ‘‘টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ শুরু হয়ে গিয়েছে। রোহিত অনেক দিন ধরে টেস্ট দলের বৃত্তে রয়েছে। ওকে সঠিক সুযোগ দেওয়াই লক্ষ্য আমাদের,’’ বলছেন অধিনায়ক। যথেষ্ট সুযোগই যে দেওয়া হবে, তাও পরিষ্কার করে দেন তিনি। ‘‘আমরা কোনও ভাবেই রোহিতকে তাড়াহুড়ো করতে দিচ্ছি না। ওপেনিং এমন একটা জায়গা, যেখানে ব্যাটসম্যানকে একটু সময় দিতে হবে। রোহিতকে সেই সময়টা দেওয়া হবে,’’ বলে কোহালি যোগ করেন, ‘‘টেস্টে ছয় নম্বরে শুরু করেছিলাম। এখন চারে ব্যাট করি। এই চ্যালেঞ্জগুলো অনেকটাই মানসিক। নতুন ভূমিকায় সফল হওয়ার ক্ষমতা রয়েছে রোহিতের।’’
ক্রিকেটের ইতিহাসে মিডল অর্ডার থেকে ওপেনিংয়ে উন্নত হয়ে সফল হওয়ার অনেক উদাহরণ রয়েছে। সহবাগ ছাড়াও আর একটি জনপ্রিয় নাম সনৎ জয়সূর্য। যিনি শুরু করেছিলেন মূলত এক জন বোলার হিসেবে, যে ব্যাটও করতে পারে। প্রথমে ওয়ান ডে-তে তাঁকে ওপেন করানো হয়। এর পর অধিনায়ক অর্জুন রণতুঙ্গা টেস্টেও তাঁকে ওপেনিংয়ে তুলে আনেন। শুরুতে ব্যর্থ হন জয়সূর্য, এমনকি টেস্ট দলে থেকে বাদও পড়েন। প্রায় বছরখানেক বাইরে থাকার পরে টেস্ট দলে নিজেকে আগ্রাসী ওপেনার হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন। ভারতের বিরুদ্ধে ওপেনার হিসেবে ৩৪০ এখনও ভোলেননি অনেকে। রোহিতদের বর্তমান হেড কোচ রবি শাস্ত্রী আর এক জন। ১৯৮১-তে ওয়েলিংটনে উড়ে গিয়ে যখন টেস্ট অভিষেক ঘটালেন শাস্ত্রী, ব্যাট করতে নেমেছিলেন দশ নম্বরে। সেখান থেকে ব্যাটিং যোগ্যতা প্রমাণ করতে করতে ওঠেন ওপেনিংয়ে। দশ নম্বর হিসেবে শুরু করা এক ক্রিকেটারের যে সিডনিতে শেন ওয়ার্নদের বিরুদ্ধে ডাবল সেঞ্চুরি রয়েছে, সেই তথ্য উদ্বুদ্ধ করতেই পারে রোহিতকে। ওপেনার হিসেবে ৪৪.০৪ টেস্ট গড় শাস্ত্রীর, যা ভারতের অনেক বিশেষজ্ঞ ওপেনারেরও নেই।
শাস্ত্রীরও আগে রয়েছে উইলফ্রেড রোডসের উদাহরণ। তিনিও বাঁ হাতি স্পিনার হিসেবে দশ নম্বরে ব্যাট করতে নেমেছিলেন অভিষেক টেস্টে। সেখান থেকে ওপেনার হয়ে মেলবোর্নে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে জ্যাক হবসের সঙ্গে ৩২৩ রানের প্রথম উইকেট জুটি গড়েন। ৩৬ বছর ধরে যা ছিল ওপেনিং জুটিতে বিশ্বরেকর্ড। দীর্ঘ তিরিশ বছরের কেরিয়ারে সব জায়গাতে ব্যাট করেছেন রোডস। ১১টি টেস্ট হাফ সেঞ্চুরির মধ্যে ৯টি ওপেনার হিসেবে। দু’টি সেঞ্চুরির দু’টিই ওপেন করে। হবসের সঙ্গে সেই বিখ্যাত জুটিতে রোডস করেছিলেন ১৭৯। সেটাই তাঁর সর্বোচ্চ টেস্ট স্কোর।
সহবাগকে যখন সৌরভ ওপেন করতে বলেন, তখন তাঁর অভিজ্ঞতা ছিল পাঁচ টেস্টের। তার মধ্যে অভিষেকেই সেঞ্চুরি করে ফেলেছেন। বিশেষজ্ঞরা প্রশ্ন তুলেছিলেন, সহবাগের মতো টেকনিকে নড়বড়ে ব্যাটসম্যানকে দিয়ে ওপেন করানো ঠিক সিদ্ধান্ত হচ্ছে কি না। লর্ডসে প্রথম ওপেনার হিসেবে নেমেই সেই সব সংশয় ঝড়ের মতো উড়িয়ে দেন বীরু। ৯৬ বলে ৮৪। সেখানেই না থেমে এর পর ট্রেন্টব্রিজে করলেন সেঞ্চুরি। মুলতানে প্রথম ভারতীয় হিসেবে ট্রিপল সেঞ্চুরিও সহবাগ করেন ওপেনার হিসেবে।
নতুন বলের সামনে সহবাগের টেকনিক নিয়েও নানা কথা বলে গিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। সকলকে ভুল প্রমাণ করে বরাবর দুর্ধর্ষ সব টেস্ট ইনিংস খেলেছেন বীরু। এখন রোহিতকে নিয়েও কথা উঠছে, নতুন বলেই তিনি সব চেয়ে চাপে থাকেন। সুইংয়ের বিরুদ্ধে দুর্বলতা রয়েছে তাঁর। দক্ষিণ আফ্রিকার কাগিসো রাবাডা এবং ভার্নন ফিল্যান্ডার নাম দু’টো মোটেও পছন্দ হওয়ার কথা নয় রোহিতের। টেস্টে এঁরা দু’জনেই তিন বার করে তাঁকে আউট করেছেন। প্রস্তুতি ম্যাচেও ফিল্যান্ডারের আউটসুইংয়ে দ্বিতীয় বলেই ক্যাচ দিয়ে ফিরেছিলেন রোহিত।
বলা যেতে পারে টেস্টে রোহিতের বিরুদ্ধে রাবাডাদের সাফল্য দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে। সেখানকার পরিবেশ, পিচের সঙ্গে ভারতীয় পরিস্থিতির মিল নেই। রোহিত অনেক বন্ধুত্বপূর্ণ পিচ এবং পরিবেশ পাচ্ছেন নতুন ভাবে শুরু করার জন্য। কেপ টাউন আর বিশাখাপত্তনম নিশ্চয়ই এক নয়। কোহালি আশা করছেন, রোহিত পারবেন এবং তা হলেই ভারতীয় ব্যাটিংকে তিনি আরও ধারালো করে তুলতে পারবেন। ‘‘রোহিতের মতো ক্রিকেটারকে বাইরে বসিয়ে টেস্ট খেলতে নামা খুবই কঠিন। ওয়ান ডে-র মতো যদি টেস্টেও ওপেনার হিসেবে সফল হতে পারে ও, আমাদের ব্যাটিং অন্য উচ্চতায় পৌঁছে যাবে,’’ বলে দিচ্ছেন অধিনায়ক। একা তিনি নন, গোটা ভারতই চাইবে, রোহিত হয়ে উঠুন নতুন সহবাগ!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy