দ্বিশতরানের পরে বিরাট। পিটিআই
মায়াঙ্ক আগরওয়ালের গড়া ইমারতের উপরে সাম্রাজ্য বিস্তার করে গেলেন বিরাট কোহালি। ঠিক যেমন একা কুম্ভ হয়ে লড়াই করে সাম্রাজ্য বিস্তার করেছিলেন পঞ্চম মরাঠা ছত্রপতির (সম্রাট) ষষ্ঠ পেশোয়া, বাজিরাও।
২০ বছরের যুদ্ধজীবনে কখনও পরাস্ত হননি বাজিরাও। বিরাটকেও এ দিন ড্রেসিংরুমে ফেরাতে ব্যর্থ কাগিসো রাবাডা, কেশব মহারাজেরা। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে তিনি নির্মম, অপ্রতিরোধ্য। শুক্রবার গাহুঞ্জে স্টেডিয়ামে টেস্টের দ্বিতীয় দিনে ৬,৯৭৬ দর্শকের সামনে ক্রিকেটজীবনের সপ্তম ডাবল সেঞ্চুরিটি এল বিরাটের ব্যাটে। ৩৩৬ বলে তিনি অপরাজিত ২৫৪ রানে। নিজের ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের ইনিংসকেও (২৪৩) ছাপিয়ে গেলেন অধিনায়ক। পিছনে ফেলে দিলেন সচিন তেন্ডুলকরের সর্বোচ্চ ২৪৮ রানের ইনিংস।
কিন্তু পুণের হাতেগোনা দর্শকদের সামনে তাঁর এই দাপট কতটা যোগ্য সম্মান পেল, তা আলোচনা সাপেক্ষ। কোথায় সেই মেক্সিকান ওয়েভ, কোথায় দর্শকদের বাঁধভাঙা উন্মাদনা? তার কিছুই দেখা গেল না এমসিএ স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে। ক্রিকেট বিশ্বে যদিও ফের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠলেন কোহালি। ফের প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, এই মুহূর্তে সেরা ব্যাটসম্যান কে? বিরাট কোহালি না স্টিভ স্মিথ?
এ দিনই টেস্টে রান সংগ্রাহকদের তালিকায় স্মিথকে ছাপিয়ে গিয়েছেন কোহালি। স্মিথের রান ৬,৯৭৩। শুক্রবারের ইনিংসের পরে বিরাটের রান ৭,০৫৪। ভারতীয় রান সংগ্রাহকদের তালিকায় তিনি এখন সপ্তম স্থানে। দিলীপ বেঙ্গসরকরের ৬,৮৬৮ রানের গণ্ডি ছাপিয়ে গেলেন। এমনকি অধিনায়ক হিসেবে ন’টি ক্ষেত্রে ১৫০ রানের গণ্ডি পেরিয়ে ডন ব্র্যাডম্যানের (৮ বার) রেকর্ডও ভেঙে দিলেন। যেন বিরাট আর ‘রেকর্ড’ শব্দটি সমার্থক হয়ে গিয়েছে।
৬৩ রানে অপরাজিত থেকে এ দিন অভিযান শুরু করেছিলেন অধিনায়ক। প্রথম এক ঘণ্টা তাঁকে রীতিমতো পরীক্ষার মধ্যে ফেলেন রাবাডা, ফিল্যান্ডারেরা। দ্বিতীয় দিনের সকালেও উইকেট থেকে গতি ও বাউন্স পাওয়া যাচ্ছিল। প্রায় বুক-সমান উচ্চতার বল ধরতে হয়েছে উইকেটকিপার কুইন্টন ডি’কক-কে। কিন্তু সেই পরিস্থিতিকে ঠিক মতো কাজে লাগাতে পারেননি রাবাডারা। কাজে লাগাতে দেননি বিরাট ও রাহানের জুটি। আউটসুইং বোলারদের বরাবরই সমীহ করেন অধিনায়ক। তাই রাবাডার বিরুদ্ধে শেষ মুহূর্তে ব্যাটের মুখ গালির দিকে ঘুরিয়ে দিচ্ছিলেন ভারতীয় অধিনায়ক। পেসারদের সামলাচ্ছিলেন নরম হাতে। বল ব্যাটের কাণা ছুঁয়ে স্লিপের উদ্দেশে গেলেও যাতে, ফিল্ডারের হাত পর্যন্ত না পৌঁছতে পারে।
এ ভাবেই সকালের এক ঘণ্টা টিকে থাকেন ভারত অধিনায়ক। বাকি দিনটি তিনিই শাসন করলেন। ডাবল সেঞ্চুরি করার আগে একটিও ছয় মারেননি। ইনিংস শেষ করেন ৩৩টি চার ও দু’টি ছয়ের সৌজন্যে। স্ট্রাইক রেট ৭৫.৫৯। পুণের পাহাড়ে ঘেরা মাঠে রানের পাহাড় গড়ে ড্রেসিংরুমে ফিরলেন বিরাট। ৬০১-৫ স্কোরে ডিক্লেয়ার করল ভারত। জবাবে একই পিচে দিনের শেষে তিন উইকেট হারিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার রান ৩৬। দুই উইকেট উমেশ যাদবের। এক উইকেট মহম্মদ শামির। নাইটওয়াচম্যান অ্যানরিখ নর্ৎজের ক্যাচ যদি মায়াঙ্ক আগরওয়ালের হাত থেকে না পড়লে আরও আতঙ্কিত দেখাতে পারত দক্ষিণ আফ্রিকা দলকে।
প্রথম দিনের তৃতীয় সেশন থেকেই মায়াঙ্ক (১০৮) ও পুজারার (৫৮) গড়ে দেওয়া মসৃণ রাস্তায় দ্রুতগামী গাড়ির গতিতে ছুটছিলেন বিরাট। যত এগিয়েছে খেলা, তত রানের গতি বাড়িয়েছেন। প্রথম সেশনে কোহালি-রাহানে জুটি যোগ করে ৮৩ রান। তিনের উপরে রানের গড় ছিল তাঁদের। দ্বিতীয় সেশনে ১১৭ রান যোগ হয় ভারতের স্কোরবোর্ডে। প্রায় চারের কাছাকাছি ওভার প্রতি রানের গতিতে। তৃতীয় সেশনে ১৫ ওভার ব্যাট করে ১২৮ রান যোগ করে বিরাট-জাডেজা জুটি। সেই সেশনে ওভার প্রতি আটেরও বেশি গতিতে রান করেছে ভারত।
বিরাট-জাডেজা জুটির রানের গতি বিপক্ষকে অলআউট করার জন্য এক ঘণ্টা অতিরিক্ত সময় দিয়ে গিয়েছে। যার ফায়দা তুলে গেলেন ভারতীয় পেসাররা। বলতে হবে অজিঙ্ক রাহানের কথাও। তিনি (১১২ বলে ৫৯) যদি বিরাটকে যোগ্য সঙ্গ না দিতেন, তা হলে দলের রানও এই জায়গায় পৌঁছত না। চতুর্থ উইকেটে ১৭৮ রান যোগ করেন অধিনায়ক ও সহ-অধিনায়ক।
পুণের মাঠে উপস্থিত দর্শকদের মধ্যেও বিরাট স্রোত। ভারত অধিনায়ককে দেখার জন্য ফাইনাল ইয়ারের পরীক্ষা না দিয়ে খেলা দেখতে এসেছিলেন সিংহগঢ় ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ছাত্র। তাঁর পোস্টারে লেখা, ‘‘বিরাট, তোমার ইনিংসের কারণেই আজ পরীক্ষা দিতে গেলাম না।’’ ২১ বছর বয়সি সেই ছাত্রের নাম হর্ষল পাণ্ডুরং মহাজন। বলছিলেন, ‘‘বিরাটের ইনিংস দেখার জন্য হয়তো এক বছর পরে ইঞ্জিনিয়ার হব। কিন্তু এই মূল্যবান মুহূর্তের সাক্ষী তো হতে পারলাম!’’ ২০০ রানের গণ্ডি পেরনোর পরে বিরাট যখন দ্রুত রান করতে মরিয়া, তাঁর ইনিংস থামিয়েই দিয়েছিলেন সেনুরান মুতুস্বামী।
১৪৬তম ওভারে কাট করতে গিয়ে ডুপ্লেসির হাতে ধরা পড়েন বিরাট। সমর্থকদের অভ্যর্থনা কুড়িয়ে যখন তিনি ড্রেসিংরুমের দিকে এগোচ্ছেন। তাঁকে থামিয়ে নো-বল পরীক্ষা করেন আম্পায়ার। দেখা যায় ক্রিজের অনেক বাইরে পড়েছে মুতুস্বামীর পা। জায়ান্ট স্ক্রিনে সেই ছবি দেখে হাসি চাপতে পারলেন না বিরাটও। সে ওভারে আরও একটি নো-বল করেছিলেন মুতুস্বামী। কলকাতা ময়দানেও কোনও স্পিনারদের নো-বল করতে দেখা যায় না। কিন্তু মুতুস্বামী যে আন্তর্জাতিক মঞ্চে এক ওভারেই দু’টি নো-বল
করে বসলেন।
বিরাট এ দিন ডাবল সেঞ্চুরি পেলেও অল্পের জন্য ডাবল সেঞ্চুরি হল না কেশব মহারাজের। ভারতের ৬০১ রানের মধ্যে তিনিই দিয়েছেন ১৯৬ রান। ৫০তম ওভারের শেষ বল করার সময় ডান কাঁধে চোট পেয়ে মাঠ থেকে বেরিয়ে যান। ম্যাচ চলাকালীন স্ক্যান করতে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে।
ভারতের সামনে এখন লক্ষ্য খুবই সহজ। শনিবার সকালে এক ঘণ্টা পিচের স্যাঁতসেঁতে ভাব কাজে লাগাতে হবে। দ্রুত ফিরিয়ে দিতে হবে নাইটওয়াচম্যান নর্ৎজেকে। তা হলে ডুপ্লেসি, ডি’ককদের বিরুদ্ধে পিচের আর্দ্রতা কাজে লাগাতে পারবেন শামি, ইশান্তরা। ওপেনার ডিন এলগার ফিরে যাওয়ায় অনেকটাই কাজ হয়ে গিয়েছে। চা-বিরতির মধ্যে বিপক্ষের প্রথম ইনিংস শেষ করে দিতে পারলে ইনিংসে জেতার সম্ভাবনা আরও বেড়ে যাবে ভারতের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy