ঋদ্ধিমান সাহা।
বাইশ মাস পরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট মঞ্চে ফিরছেন ঋদ্ধিমান সাহা। আনন্দবাজারে আগেই প্রকাশিত পূর্বাভাস মতো, আজ বুধবার থেকে বিশাখাপত্তনমে শুরু দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে প্রথমে টেস্টে দস্তানা হাতে ঋষভ পন্থ নন, ঋদ্ধিই দাঁড়াচ্ছেন।
এটাই একমাত্র পুরস্কার নয় বঙ্গ উইকেটকিপারের জন্য। তাঁর অধিনায়ক বিরাট কোহালির কাছ থেকে সর্বোচ্চ প্রশংসাও জিতে নিলেন ঋদ্ধি। প্রাক-ম্যাচ সাংবাদিক সম্মেলনে এসে কোহালি স্পষ্ট বলে দিলেন, ‘‘আমার মতে ঋদ্ধিই বিশ্বের সেরা উইকেটকিপার।’’ প্রথম টেস্টে যে ঋদ্ধিকেই খেলানো হচ্ছে, তা জানিয়ে দিয়ে অধিনায়কের মন্তব্য, ‘‘সাহা ফিট হয়ে গিয়েছে। খেলার জন্য প্রস্তুত। ওকেই তাই খেলানো হচ্ছে। ওর কিপিং দক্ষতা কেমন, তা তো সকলে চোখের সামনেই দেখতে পাচ্ছে।’’
কোনও কোনও মহল থেকে প্রচার (পড়ুন অপপ্রচার) করা হচ্ছিল, ঋদ্ধির কিপিং অসামান্য হলেও ব্যাটিং দুর্বল। তাই ঋষভ পন্থের মতো কাউকে টেস্টে নিয়মিত ভাবে খেলানো হোক। যে দীর্ঘ সময় ধরে চোটের জন্য ঋদ্ধি মাঠের বাইরে ছিলেন, তখনই উত্থান ঘটে পন্থের। এবং, ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ায় বড় টেস্ট সেঞ্চুরি করায় তাঁকে নিয়ে উৎসাহও বাড়ে। কিপিং দক্ষতায় ঘাটতিই শেষ পর্যন্ত পিছিয়ে দেয় রুরকির তরুণ প্রতিভাকে এবং যে-হেতু দেশের মাঠে অনেক বেশি কঠিন, ঘূর্ণি পিচে ভাল কিপার দরকার পড়বে, ঋদ্ধির তাই বিকল্প নেই।
কোহালি ঋদ্ধির ব্যাটিং খামতি নিয়ে প্রশ্নকেও সপাটে উড়িয়ে দিয়ে বলেছেন, ‘‘যখনই সুযোগ পেয়েছে, আমাদের দলের হয়ে ব্যাট হাতেও ভাল খেলেছে সাহা। খুবই দুর্ভাগ্যজনক যে, দীর্ঘ সময় ধরে চোটের জন্য ওকে বাইরে কাটাতে হয়েছে।’’ এর পরেই কোহালির সেই মন্তব্য, ‘‘আমার মতে, বিশ্বের সেরা উইকেটকিপার সাহাই। তাই ঘরের মাঠের পরিবেশে, অতীতের সাফল্যের ভিত্তিতে ও-ই আমাদের কিপার।’’ ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরেই দলে প্রত্যাবর্তন ঘটেছিল ঋদ্ধির। কিন্তু ভিভের দেশে দুই টেস্টের সিরিজে পন্থকেই খেলানো হয়। প্রথম একাদশে জায়গা হয়নি বঙ্গ কিপারের। তার কারণ, ঋদ্ধির অনুপস্থিতিতে ব্যাট হাতে পন্থের পারফরম্যান্স। সিডনিতে তাঁর বড় সেঞ্চুরি দেখে উচ্ছ্বসিত ছিলেন এমনকি, অ্যাডাম গিলক্রিস্টের মতো প্রাক্তন মহাতারকাও। সম্প্রতি যদিও মোক্ষম সময়ে ঝুঁকিপূর্ণ শট খেলে আউট হওয়ার জন্য পন্থ সমালোচিত হয়েছেন। এমনকি, হেড কোচ রবি শাস্ত্রী পর্যন্ত বলতে ছাড়েননি, গুরুত্বপূর্ণ সময়ে উইকেট ছুড়ে দিয়ে দলকে ডোবালে কড়কানিই অপেক্ষা করবে তাঁর জন্য। তা সে তিনি যত বড়ই প্রতিভা হোন না কেন।
শাস্ত্রীর সেই মন্তব্য নিয়ে আবার যুবরাজ, গম্ভীরের মতো প্রাক্তনরা সরব হয়েছেন। তবে যুবরাজরা যা-ই বলুন না কেন, সাময়িক ভাবে যে পন্থের উপর আস্থা হারিয়েছে দল, তা পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে। টেস্ট ক্রিকেটে কিপিং নৈপুণ্য অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে দেশের মাঠে অশ্বিন-জাডেজার মতো দুই সেরা স্পিনারকে সামলাতে হবে ঘূর্ণি পিচে। দস্তানা হাতে সেই উৎকর্ষ যে পন্থের এখনও নেই, ঋদ্ধির আছে, তা বিশ্বাস করেন কোহালিরা। তাই পন্থের বাদ পড়ার পিছনে যতটা না ওয়ান ডে ক্রিকেটে তাঁর আত্মঘাতী ব্যাটিং দায়ী, তার চেয়েও বড় কারণ কিপার হিসেবে ঋদ্ধির দক্ষতায় দলের আস্থা।
ওয়াকিবহাল মহলের মতে, আরও একটি ব্যাপার ঋদ্ধির নির্বাচনের সপক্ষে গিয়েছে। তা হল, অধিনায়ক কোহালি স্বয়ং ভাল উইকেটকিপিংকে অনেক বেশি গুরুত্ব দেন। মোক্ষম সময়ে একটা ক্যাচ বা স্টাম্পের সুযোগ ছাড়া যে ম্যাচের রংই সম্পূর্ণ ভাবে পাল্টে দিতে পারে, সেটা বার বার তাঁর কথায় উঠে এসেছে। দুই কিপারকে নিয়ে কোহালি এ দিন বলে যান, ‘‘ওয়েস্ট ইন্ডিজে আমরা ঋষভকে খেলিয়েছিলাম কারণ আমাদের মনে হয়েছিল, ওকে আরও কিছু সুযোগ দেওয়া উচিত। যে-হেতু পন্থও খুব ভাল করেছে। একই সঙ্গে সাহাকেও সেই সময়টা দেওয়া দরকার ছিল যাতে এত দিন পরে মূলস্রোতে এসে ও ধীরেসুস্থে ফেরার সময়টুকু পায়।’’ দ্রুত যোগ করছেন, ‘‘কিন্তু সব সময়ই টেস্ট ক্রিকেটে কিপার হিসেবে সাহাকে আমরা এক নম্বর মনে করি। এ নিয়ে কোনও সংশয় কখনও ছিল না। তাই ওর টেস্ট দলে ফেরাটা ছিল শুধুই সময়ের ব্যাপার।’’ অধিনায়কের আরও ব্যাখ্যা, ‘‘কখন কাকে সুযোগ দিতে হবে, সেটা নানা রকম বিষয়ের উপর নির্ভর করে। আমাদের মনে হয়েছে, এটাই ঋদ্ধিকে ফেরানোর জন্য উপযুক্ত সময়।’’ কার্যত প্রথার বিরুদ্ধে গিয়ে টেস্ট শুরুর এক দিন আগেই প্রথম একাদশ ঘোষণা করে দিলেন কোহালিরা। তাতে উইকেটকিপার হিসেবে যেমন ঋদ্ধিমান আছেন, টেস্টে ওপেনার হিসেবে অভিষেক হতে চলেছে রোহিত শর্মার, তেমনই স্পিনার হিসেবে ফের দেখা যাবে আর অশ্বিনকে। যিনি সীমিত ওভারের ক্রিকেট থেকে বাতিলই হয়ে গিয়েছেন এবং সম্প্রতি টেস্ট দলেও অনিয়মিত হতে শুরু করেছেন বলে কেরিয়ার নিয়েই অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছিল। ওয়েস্ট ইন্ডিজেও দু’টি টেস্টের একটিতেও জায়গা হয়নি অশ্বিনের। এখানে যদিও বিরাট বললেন, ‘‘অশ্বিন আর জাডেজা দু’জনেই এই টেস্টে খেলবে। জাড্ডু বিদেশের মাঠে গত মরসুমে খুব ভাল করেছে। সেই কারণে ওয়েস্ট ইন্ডিজে ওকে খেলানো হয়েছিল। কিন্তু ঘরের মাঠে যখন দুই স্পিনার খেলানোর জায়গা রয়েছে, সেখানে অ্যাশের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে কোনও প্রশ্ন নেই। প্রতিপক্ষদের কাছে এই পরিবেশে ও বড় ত্রাস।’’ অশ্বিন কি পারবেন সুযোগ কাজে লাগিয়ে দেশে-বিদেশে এক নম্বর স্পিনারের জায়গা ছিনিয়ে নিতে? সময়ই বলবে।
ভারতের এগারো: বিরাট কোহালি (অধিনায়ক), অজিঙ্ক রাহানে (সহ-অধিনায়ক), রোহিত শর্মা, মায়াঙ্ক আগরওয়াল, চেতেশ্বর পুজারা, হনুমা বিহারী, আর অশ্বিন, রবীন্দ্র জাডেজা, ঋদ্ধিমান সাহা, ইশান্ত শর্মা, মহম্মদ শামি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy