Advertisement
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

বিরাট একটা দিন, বলছেন কোহালি

কোহালির আগ্রাসী শট, ‘‘আমি বাইরের লোকদের কথা ভাবি না। নিজের টিমের প্রতি বিশ্বাস রাখি। আমি জানতাম, একটা উইকেট নিতে পারলেই ম্যাচটা ঘুরে যাবে। তখন নতুন ব্যাটসম্যানের পক্ষে ক্রিজে এসে কাজটা করা সহজ হবে না।’’

দক্ষিণ আফ্রিকার উইকেট তুলে বিরাট কোহালির হুঙ্কার। শনিবার জোহানেসবার্গে। ছবি: এএফপি

দক্ষিণ আফ্রিকার উইকেট তুলে বিরাট কোহালির হুঙ্কার। শনিবার জোহানেসবার্গে। ছবি: এএফপি

নিজস্ব সংবাদদাতা
জোহানেসবার্গ শেষ আপডেট: ২৮ জানুয়ারি ২০১৮ ০৩:৫৬
Share: Save:

ওয়ান্ডারার্সের কঠিন পিচে জিতে বিরাট কোহালি বলে দিলেন, তাঁর দলের যাত্রাপথে মাইলস্টোন হয়ে থাকতে পারে এই দিন। ‘‘আমাদের নিজেদের উপরে আস্থা সব সময়ই ছিল। কিন্তু এখন আমাদের সঙ্গে ফলটাও রয়েছে সেই বিশ্বাসকে বাড়িয়ে তোলার জন্য। আমরা দেখে নিলাম, বিদেশের কঠিন পরিবেশে গিয়েও আমরা এ রকম জয় ছিনিয়ে আনতে পারি,’’ সিরিজ ১-২ করে সাংবাদিক সম্মেলনে এসে বললেন ভারত অধিনায়ক। যোগ করলেন, ‘‘চলার পথে আমরা হয়তো ম্যাচ হারব। কিন্তু অনেক ম্যাচ জিতবও। এই দিনটা আমরা টিম হিসেবে ভীষণ ভাবেই মনে রাখব। ড্রেসিংরুমে এখন দারুণ মেজাজ এবং আমি বলে দিতে পারি, সকলে এই ধরনের পারফরম্যান্স ভবিষ্যতে আরও অনেক বার করার কথাই ভাবছে।’’

ওয়ান্ডারার্সের পিচ নিয়ে তুলকালাম চলছে ক্রিকেট বিশ্বে। কোহালির কাছেও জানতে চাওয়া হল। ভারত অধিনায়ক স্বভাবসিদ্ধ ডাকাবুকো ভঙ্গিতে বলে গেলেন, ‘‘আমি মোটেও চিন্তিত বা উদ্বিগ্ন ছিলাম না। আমাদের গায়েও অনেক বার আঘাত লেগেছে। তা বলে মাঠ ছেড়ে চলে যাওয়া তো যায় না। বলা তো যায় না যে, পিচে বড্ড বেশি বল লাফাচ্ছে বা বাঁক খাচ্ছে। বলটা দক্ষিণ আফ্রিকার কোর্টে ছিল। আমরা সব সময়ই খেলতে চেয়েছিলাম। ওদের সিদ্ধান্ত নিতে হতো, খেলবে কি না।’’

ওয়ান্ডারার্সের পিচে খেলা চালানো হবে কি না, তা নিয়ে জোর তর্ক-বিতর্ক চলছিল। মাইকেল হোল্ডিং মন্তব্য করেন, এই পিচে খেলা বন্ধ করে দেওয়া উচিত ছিল প্রথম দিনেই। শুক্রবার ম্যাচ রেফারির সঙ্গে বৈঠকে কোহালি পরিষ্কার বলে দেন, তিনি খেলতে চান। দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক ফ্যাফ ডুপ্লেসি এবং তাঁদের দলের ম্যানেজার জানান, পিচ বিপজ্জনক কি না সেটাও দেখা হোক। কোহালি যদিও টেস্ট শেষ হয়ে যাওয়ার পরে ম্যাচ রেফারির সঙ্গে তাঁর কথোপকথন নিয়ে কিছু বলতে চাইলেন না।

তবে বোলারদের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে বললেন, ‘‘সিরিজে ৬০টা উইকেট নিয়েছে বোলাররা। প্রচুর পরিশ্রম করতে হয়েছে ওদের। আজ খুব একটা সাহায্য ওরা পায়নি উইকেট থেকে। অনেকে হয়তো আমাদের উপরে আস্থা রাখেনি। কিন্তু আমাদের নিজেদের উপরে বিশ্বাস ছিল। আমরা জানতাম, চাপের মুহূর্তগুলোতে যদি আমরা আরও ভাল খেলতে পারি, তা হলে আমরা জিততে পারব। সেটা এই টেস্টে করে দেখাতে পেরেছে টিম।’’ ওয়ান্ডারার্সের এই জয়ের সঙ্গে লর্ডসের জয়ের তুলনা টেনে বললেন, ‘‘লর্ডসের পিচটা হয়তো এতটা ফাস্ট, বাউন্সি ছিল না। কিন্তু ওখানেই পরিস্থিতি কঠিন ছিল।’’ সমালোচনায় দগ্ধ হচ্ছিলেন তিনি এবং তাঁর টিম। তা নিয়ে কোহালির মন্তব্য, ‘‘যখন কেউ আপনার উপরে বিশ্বাস রাখবে না, কেউ আপনাকে সমর্থন করবে না, তখন নিজেদের সমর্থন করা খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। বাইরে থেকে কে কী বলছে, সেটা নিয়ে আমরা খুব একটা ভাবি না। টিম হিসেবে নিজেদের দক্ষতার প্রতি আস্থা রাখাটা আমাদের কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।’’

ওয়ান্ডারার্সের পিচ কঠিন ছিল বলে কি এখানে জিতে বেশি আনন্দ হচ্ছে? কোহালি বলেন, ‘‘আমরা কখনও পিচ নিয়ে অভিযোগ করিনি। এই পিচটা প্রথম দেখেই মনে হয়েছিল, দু’টো দলের জন্য সমান সুযোগ থাকবে। আমরা ঠিক করি, চ্যালেঞ্জটা নিতেই হবে। আমি ভেবে খুশি হচ্ছি যে, পেস আর বাউন্সের জন্য এই পিচটা তৈরি করা হয়েছিল। আর সেটা আমাদের পক্ষে গিয়েছে।’’ যখন উইকেট পড়ছিল না, তখন কী চলছিল আপনার মনের মধ্যে? ফের কোহালির আগ্রাসী শট, ‘‘আমি বাইরের লোকদের কথা ভাবি না। নিজের টিমের প্রতি বিশ্বাস রাখি। আমি জানতাম, একটা উইকেট নিতে পারলেই ম্যাচটা ঘুরে যাবে। তখন নতুন ব্যাটসম্যানের পক্ষে ক্রিজে এসে কাজটা করা সহজ হবে না।’’

কোহালির কথা একদমই ঠিক প্রমাণিত হল ওয়ান্ডারার্সে। হাসিম আমলা এবং ডিন এলগারের জুটি ভাঙার পরে শেষ আট উইকেট পড়ল ৫৩ রানে। ইশান্ত শর্মা ম্যাচ ঘোরালেন আমলার উইকেট তুলে। তার পরে নিলেন ফ্যাফ ডুপ্লেসি-র উইকেট। যশপ্রীত বুমরার শিকার এ বি ডিভিলিয়ার্স এবং কুইন্টন ডি’কক। মহম্মদ শামি নিলেন পাঁচ উইকেট। গতির বদলে গতি, আগুনের পাল্টা আগুন— ক্রিকেট বিশ্বকে বার্তা দিয়ে রাখল কোহালির ভারত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE