হতাশ: ওয়াংখেড়েতে লজ্জার হার। বিষণ্ণ কোহালি। এএফপি
অস্ট্রেলীয় বোলারদের বিরুদ্ধে কি অতি সাবধানী ছিলেন তাঁর দলের ব্যাটসম্যানেরা? ঘুরিয়ে তেমনই কি ইঙ্গিত করে গেলেন বিরাট কোহালি?
ম্যাচের পরে পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে এসে কোহালি বলেন, ‘‘কয়েকটি পর্বে ওদের বোলারদের আমরা অতিরিক্ত সম্মান করেছি। ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ হাতে তুলে নেওয়ার চেষ্টা করিনি। অস্ট্রেলিয়া খুবই ভাল দল। ওদের বিরুদ্ধে খুব ভাল খেলতে না পারলে ওরা আঘাত করবেই।’’
ভারত অধিনায়কের কথা শুনে মনে হচ্ছে, শুরুর দিকে অতিরিক্ত মন্থর ব্যাটিং নীতি নিয়ে তাঁর ধৈর্যচ্যুতি ঘটতে শুরু করেছে। বেশ কিছুটা সময় ধরেই প্রথম দশ ওভারে অতিরিক্ত মন্থর ব্যাটিং করছেন ভারতীয়রা। বিশ্বকাপে কয়েকটা ম্যাচে এমনকি, দশ ওভারে ৩০-৪০ করে তুলেছেন। এ দিনও ওয়াংখেড়েতে প্রথম দশ ওভারে ওঠে মাত্র ৪৫ রান। অথচ, তখনই ফিল্ডিং বিধিনিষেধ থাকে বলে সাহসী হয়ে ঝুঁকিও নেওয়া যায়। প্রশ্ন উঠছে, শুরুর দিকের ভারতীয় ব্যাটসম্যানেরা স্বার্থপরের মতো নিজেদের দুর্গ বাঁচানোর ব্যাটিং করছেন কি না?
এ দিন প্রথম তিন জন ভারতীয় ব্যাটসম্যানের রান ও বলের হিসাব এ রকম: রোহিত ১৫ বলে ১০ (স্ট্রাইক রেট ৬৬.৬৬) ধওয়ন ৯১ বলে ৭৪ (স্ট্রাইক রেট ৮১.৩১)। রাহুল ৬১ বলে ৪৭ (স্ট্রাইক রেট ৭৭.০৪)। কোহালি ক্রিজে আসার পর থেকে তাঁর মধ্যে তাড়াহুড়ো লক্ষ্য করা যাচ্ছিল। ১৪ বলে ১৬ করে আউট হন তিনি। রাহুলের সাম্প্রতিক ফর্ম দেখে তিন নম্বর জায়গা তাঁকে ছেড়ে দিয়েছিলেন কোহালি। তা নিয়েও বিস্তর কথা উঠছে যে, দলের সেরা ব্যাটসম্যান কেন তাঁর স্বাচ্ছন্দের জায়গায় ব্যাট করবেন না? কোহালি ইঙ্গিত দিয়ে গেলেন, এ নিয়েও ফের ভাবা হতে পারে। রাজকোটে পছন্দের তিন নম্বরে তিনি নামলে অবাক হওয়ার থাকবে না। কিন্তু শুরুতে পাওয়ার প্লে-তে বল নষ্ট করার এই রোগ সারাতেই হবে।
মন্থর ব্যাটিং নিয়ে শিখর ধওয়নের কাছে জানতে চাওয়া হল সাংবাদিক সম্মেলনে। তাঁর ব্যাখ্যা, ‘‘ঠিক যে সময়টা আমরা রানের গতি তুলব ভাবছিলাম, তখনই চার উইকেট পড়ে গেল। তাই কিছুটা ধাক্কা খেল আমাদের পরিকল্পনা। না হলে তিনশো রানের লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছিলাম আমরা। উইকেট পড়ে যাওয়াতে আটকে যাই।’’ বোঝাই যাচ্ছে, পুরাতন প্রস্তর যুগের ওয়ান ডে চিন্তাভাবনায় পড়ে আছেন ধওয়ন। এখনকার দিনে ওয়াংখেড়ের মতো ব্যাটিং-বন্ধু মাঠে সব দল সাড়ে তিনশোর টার্গেট করে। তিনশোর সীমান্ত অনেক আগেই পার করা হয়ে গিয়েছে ওয়ান ডে ক্রিকেটে। এখন আর তিনশো নিরাপদ স্কোর নয়। বিশেষ করে উপমহাদেশের মাটিতে তো নয়ই। ধওয়ন আরও যুক্তি দেওয়ার চেষ্টা করলেন, ‘‘শুরুতে পিচে ভিজে ভাব ছিল। ওদের প্যাট কামিন্স আর মিচেল স্টার্ককে দেখে দেখে খেলতে হচ্ছিল। আমরা সারা বছর ভাল ক্রিকেট খেলেছি। একটা বাজে দিন গেল অফিসে।’’
ফের সেই অতীত থেকে শিক্ষা নেওয়ার অনীহা। বিশ্বকাপে একটা বাজে দিনই স্বপ্নভঙ্গ ঘটিয়েছিল, এত তাড়াতাড়ি ভুলে গেলে চলবে কী করে? ধওয়ন সেই সময় দলের সঙ্গে ছিলেন না কিন্তু মাত্র পনেরো মিনিটের বাজে ক্রিকেট কী ভাবে গুঁড়িয়ে দিয়েছিল ভারতীয়দের স্বপ্ন, তা তো নিশ্চয়ই টিভিতে দেখেছিলেন। প্রচুর ডট বল খেলা নিয়ে বলে গেলেন, ‘‘আমরা ইনিংসটাকে গড়ে তোলার চেষ্টা করছিলাম। উইকেট হাতে রাখার দিকে মন দিয়েছিলাম।’’ রাহুল ভাল ফর্মে আছেন বলে তিন নম্বরে খেলাতে হচ্ছে। আপনাকে বললে কি তিনে নামতে রাজি হবেন? ধওয়নের জবাব, ‘‘অবশ্যই। আমাকে যেখানে নামতে বলা হবে, সেখানেই খেলতে রাজি। দেশের জন্য সব কিছু করার জন্য তৈরি আমি।’’ রাহুলের প্রশংসা করে যোগ করলেন, ‘‘ও দারুণ ব্যাট করছে। আরও অনেক ভাল খেলবে রাহুল।’’
কোহালির কথাবার্তায় ফিরে আসার আহ্বান ধরা পড়ল, ‘‘এখান থেকে প্রত্যাবর্তন ঘটানোটা আর একটা চ্যালেঞ্জ হতে যাচ্ছে। আমাদের সেটা নিতে হবে।’’ আর ম্যাচের সেরা ডেভিড ওয়ার্নার বলে গেলেন, ‘‘আমার মধ্যে সব সময়ই বড় রানের খিদেটা ছিল। সেটা কোথাও চলে যাওয়ার নয়। আর আমরা জানতাম, যত ক্ষণ পারব যদি ক্রিজে থাকতে পারি, তা হলে রানটা তুলে দিতে পারব। আমার লক্ষ্য হচ্ছে, সব সময় একশো শতাংশ দেওয়া।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy