রবীন্দ্র জাডেজা তাঁর প্রথম বলেই তুলে নিলেন বিরাট কোহালিকে। অন্য দিক থেকে হরভজন সিংহ তাঁর প্রথম বলেই ফিরিয়ে দিলেন এ বি ডিভিলিয়ার্সকে। ভারতীয় ক্রিকেটের দুই মহাতারকার দ্বৈরথের ভাগ্য যেন ঠিক হয়ে গেল ওই দু’টি বলেই।
পরপর বিরাট এবং এ বি-কে হারিয়ে সেই যে আরসিবি ব্যাটিং ধাক্কা খেল, তার পর আর উদ্ধার করা যায়নি। প্রথমে ব্যাট করে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর নয় উইকেট হারিয়ে তোলে মাত্র ১২৭ রান। ওপেন করতে নেমে পার্থিব পটেল করেন ৪১ বলে ৫৩। শেষ দিকে ২৬ বলে ৩৬ করে অপরাজিত থাকেন টিম সাউদি।
বল হাতে উমেশ যাদব আরসিবিকে লড়াইয়ে রাখলেও লাভ হয়নি। মহেন্দ্র সিংহ ধোনি ব্যাট হাতে নিশ্চিত করে দেন চেন্নাইয়ের জয়। ২৩ বলে ৩১ করলেন ধোনি। যুজবেন্দ্র চহালকে পর পর তিনটি ছয় (মধ্যে একটি নো বল ছিল) মেরে চলতি আইপিএলে ক্রিস গেলকে ছাড়িয়ে সব চেয়ে বেশি ছক্কা মারায় এক নম্বরে উঠে এলেন (ধোনির ১০ ম্যাচে ২৭টি ছয়, গেলের পাঁচ ম্যাচে ২৫টি)। পাশাপাশি ‘ক্যাপ্টেন কুল’ দেখিয়ে গেলেন, কেন তিনি ভারতের সর্বকালের সফলতম অধিনায়ক। এই আইপিএলে সব চেয়ে দুর্বল বোলিং আক্রমণ সম্ভবত চেন্নাইয়ের। কিন্তু পুণের পিচে স্পিন ধরছে বুঝে দারুণ ভাবে কাজে লাগালেন জাডেজা এবং হরভজনকে।
হতাশ: গ্যালারিতে অনুষ্কা শর্মা। দেখা গেল না শেষ হাসি। ছবি: পিটিআই।
এই ম্যাচের আগে খুব ভাল ছন্দে ছিলেন না জাডেজা। অন্য অধিনায়ক হলে বসিয়েও দিতে পারতেন। ধোনি কিন্তু আস্থা হারাননি। অধিনায়কের বিশ্বাসের মর্যাদা দিলেন জাডেজা, চার ওভারে মাত্র ১৮ রান দিয়ে তিন উইকেট নিয়ে। অভিজ্ঞ এবং ভারতীয় দল থেকে ব্রাত্য হয়ে যাওয়া হরভজন নিলেন চার ওভারে ২২ রান দিয়ে দুই উইকেট। শুধু তা-ই নয়, আরসিবি-র যে ব্যাটসম্যানকে যে ভাবে আক্রমণ করা দরকার, যে ধরনের ফিল্ডিং সাজানো দরকার, ঠিক সে রকমই করলেন ধোনি।
বোঝা গেল, ভারতীয় দলের অধিনায়কত্বই তিনি ছেড়েছেন, অধিনায়কত্ব তাঁকে ছেড়ে চলে যায়নি। ম্যাচের শেষে হলুদ জার্সিতে ৭ নম্বর নম্বর লেখা এক ভক্ত ঢুকে পড়ে তাঁর পা জড়িয়ে ধরলেন। পুণের মাঠে এটাই যেন সেরা ছবি হয়ে থাকল। ‘ক্যাপ্টেন কুল’-এর প্রতি শ্রদ্ধাবনত কোহালিও। নেতৃত্বের ব্যাটন হাত বদল হলেও দু’জনের সম্পর্কে চিড় ধরেনি আগেকার ভারতীয় ক্রিকেটের পরম্পরার মতো। কোহালি বলে গেলেন, ‘‘ধোনি দারুণ খেলছে। সেটা আমাদের কাছে খুবই খুশির কারণ হওয়া উচিত। কারণ সেটাই বৃহত্তর ছবি।’’ এই ম্যাচ জিতে প্লে-অফের দিকে আরও এগিয়ে গেল চেন্নাই। ৯ ম্যাচে ৬ পয়েন্ট নিয়ে আরসিবি আরও কোণঠাসা। তবু আইপিএলের মঞ্চে দাঁড়িয়েও কোহালি ভোলেননি যে, সামনের বছর ইংল্যান্ডে বিশ্বকাপ। এবং, ফিট এবং ফর্মে থাকা ধোনি তাঁদের স্বপ্নপূরণে বড় ভূমিকা নিতে পারেন।
আর ধোনি যেন সেই চাণক্য। দুর্দান্ত ক্রিকেট বিশ্লেষকের মতোই বলে গেলেন, ‘‘পিচে পেসারদের বল পড়ে আস্তে আসছিল। সেটা দেখেই মনে হয়েছিল ভাজ্জি পাজি আর জাড্ডুকে ভাল বল করতে হবে। ওরা সেটা করে দেওয়ায় কাজ সহজ হল।’’
সত্যিই, সময়-সময় তাঁর কথা শুনে মনে হয়, ক্রিকেট কত সহজ খেলা!
স্কোরকার্ড
রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ১২৭-৯ (২০)
চেন্নাই সুপার কিংস ১২৮-৪ (১৮)
রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স রান বল
পার্থিব ক ও বো জাডেজা ৫৩ - ৪১
ম্যাকালাম ক শার্দূল বো এনগিডি ৫ - ৩
বিরাট কোহালি বো জাডেজা ৮ - ১১
ডিভিলিয়ার্স স্টা ধোনি বো হরভজন ১ - ৪
মনদীপ ক উইলি বো জাডেজা ৭ - ১৩
গ্র্যান্ডহোম ক রায়না বো উইলি ৮ - ৮
এম অশ্বিন স্টা ধোনি বো হরভজন ১ - ২
টিম সাউদি ন. আ. ৩৬ - ২৬
উমেশ যাদব রান আউট উইলি ১ - ৫
সিরাজ রান আউট রায়ডু ৩ - ৭
অতিরিক্ত ৪
মোট ১২৭-৯ (২০)
পতন: ১-৯ (ম্যাকালাম, ১.২), ২-৪৭ (কোহালি, ৬.১), ৩-৫৬ (ডিভিলিয়ার্স, ৭.৩), ৪-৭৩ (মনদীপ, ১০.৬), ৫-৮৪ (পার্থিব, ১২.৫), ৬-৮৫ (এম অশ্বিন, ১৩.১), ৭-৮৭ (গ্র্যান্ডহোম, ১৪.১), ৮-৮৯ (উমেশ, ১৫.১), ৯-১২৭ (সিরাজ, ১৯.৬)।
বোলিং: ডেভিড উইলি ৪-০-২৪-১, লুঙ্গি এনগিডি ৪-০-২৪-১, শার্দূল ঠাকুর ২-০-১৯-০, রবীন্দ্র জাডেজা ৪-০-১৮-৩, হরভজন সিংহ ৪-০-২২-২, ডোয়েন ব্র্যাভো ২-০-১৭-০।
চেন্নাই সুপার কিংস রান বল
শেন ওয়াটসন বো উমেশ ১১ - ১৪
রায়ডু ক সিরাজ বো এম অশ্বিন ৩২ - ২৫
রায়না ক সাউদি বো উমেশ ২৫ - ২১
ধ্রুব ক মনদীপ বো গ্র্যান্ডহোম ৮ - ৯
মহেন্দ্র সিংহ ধোনি ন. আ. ৩১ - ২৩
ডোয়েন ব্র্যাভো ন. আ. ১৪ - ১৭
অতিরিক্ত ৭
মোট ১২৮-৪ (১৮)
পতন: ১-১৮ (ওয়াটসন, ২.৬), ২-৬২ (রায়না, ৮.৪), ৩-৭৮ (রায়ডু, ১১.১), ৪-৮০ (ধ্রুব, ১২.২)।
বোলিং: টিম সাউদি ৩-০-৩০-০, যুজবেন্দ্র চহাল ৩-১-২৯-০, উমেশ যাদব ৩-০-১৫-২, মহম্মদ সিরাজ ২-০-১৮-০, কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম ৪-০-১৬-১, এম অশ্বিন ৩-০-১৭-১।
ছয় উইকেটে জয়ী চেন্নাই
ম্যাচের সেরা রবীন্দ্র জাডেজা
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy