হার-না-মানা: কঠোর অনুশীলন করে এমন শক্তিশালী শরীর গড়ে তুলেছেন বিনেশ। বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপে বুধবার। এপি
দশ বছর বয়সের ছোট্ট মেয়েটাকে তাঁর আখড়ায় নিয়ে গিয়ে ছেলেদের সঙ্গে কুস্তি করতে নামিয়ে দিয়েছিলেন মহাবীর সিংহ ফোগত। বিনেশ ফোগতের রূপকথার কাহিনির জন্মও সেখানে। হরিয়ানার বালালি বলে এক অখ্যাত গ্রামে। বছর পনেরো আগে।
দশ বছর বয়সের সেই অভ্যাস এখন পঁচিশ বছরে এসেও যায়নি বিনেশের। তাই মাঝে মাঝেই নেমে পড়েন ছেলেদের সঙ্গে কুস্তি করতে। আর সেটাই যে ভারতের অন্যতম সেরা মেয়ে কুস্তিগিরকে সাফল্যের রাস্তায় অনেকটা এগিয়ে নিয়ে গিয়েছে, তা জানাচ্ছেন বাস্তবের ‘আমির খান’। অর্থাৎ ‘দঙ্গল’ সিনেমার গীতা-ববিতার বাবা ও কোচ মহাবীর। যার হাতেই লেখা হয়েছে তিন কন্যার কাহিনি— গীতা, ববিতা এবং বিনেশ।
বৃহস্পতিবার হরিয়ানা থেকে ফোনে মহাবীর বলছিলেন, ‘‘ছয় মেয়েকে নিয়ে আমি কুস্তির আখড়া শুরু করেছিলাম। আমার চার মেয়ের সঙ্গে ছিল ভাইয়ের দুই মেয়ে, বিনেশ আর প্রিয়ঙ্কা। ওদের সবাইকেই ছেলেদের সঙ্গে লড়াই করাতাম।’’ যা নিয়ে সমাজের সঙ্গেও কম লড়তে হয়নি তাঁকে। মহাবীরের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল, গ্রামের সম্মানহানি করেছেন। মেয়েরা লড়ছে ছেলেদের সঙ্গে, এই দৃশ্য ভাবতে পারত না কেউ। কিন্তু সমাজ এবং রিংয়ের প্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে লড়াই করেই এই জায়গায় পৌঁছেছেন বিনেশরা।
ছোটবেলার এই অভ্যাসটা যে বিনেশের কাজে লেগেছে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে ব্রোঞ্জ জিততে, সেটাও বিশ্বাস করেন মহাবীর। বলছিলেন, ‘‘এ বার বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে যাওয়ার আগে আমার সঙ্গে বিনেশের কথা হয়েছিল। ও বলছিল, সপ্তাহ খানেক ধরে ছেলেদের সঙ্গে কুস্তি করে প্রস্তুতি নিয়েছে। আমি নিশ্চিত, এতে ওর আত্মবিশ্বাসই শুধু বাড়েনি, শারীরিক ক্ষমতাও বেড়েছে। যার ফলে অত কঠিন ড্র পেয়েও সফল হল। ’’
বছর আটেক বয়সে বাবা মারা যাওয়ার পরে জেঠু মহাবীরের কাছে মেয়ের মতোই মানুষ হয়েছেন বিনেশ। এবং, নিয়েছেন কুস্তির পাঠ। কতটা কঠিন ছিল সেই ট্রেনিং? ‘দঙ্গল’ সিনেমায় আমির খান যা তুলে ধরেছেন, সে রকম? নাকি অতটা নয়? বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে যাওয়ার আগে বিনেশ এই প্রশ্নের জবাবে আনন্দবাজারকে বলেছিলেন, ‘‘সিনেমায় কিছুই দেখানো হয়নি। তাউজি (মহাবীর) যা ট্রেনিং করাত, তা আপনারা ভাবতেও পারবেন না।’’
সেই ট্রেনিংয়ের কিছুটা আন্দাজ পাওয়া যাচ্ছিল দ্রোণাচার্য কুস্তি কোচের কথায়। বলছিলেন, ‘‘সকালে তিন ঘণ্টা, বিকালে চার ঘণ্টা নিয়মিত অনুশীলন চলত। শুধু তো কুস্তি নয়, শরীরকেও শক্তিশালী করা প্রয়োজন ছিল। যে কারণে ওদের কাঁধে বাঁক চাপিয়ে, তাতে ইট ভরে দৌড় করিয়েছি পর্যন্ত।’’ যেটা বিনেশদের কাঁধের পেশিকে শক্তিশালী করে তুলেছিল। মহাবীর বলছিলেন, ‘‘আপনারা দেখবেন, বিনেশের শরীরের উপরাংশ খুব শক্তিশালী। যে কারণে ও কাঁধের জোরে প্রতিপক্ষকে তুলে আছাড় মারতে পারে।’’ কড়া ট্রেনিংয়ের পাশাপাশি মেয়েদের জন্য যতটা সম্ভবত নিখুঁত ডায়েট চার্টের ব্যবস্থাও করেছিলেন মহাবীর। যে চার্টে বিশেষ করে ছিল— দুধ, ঘি, মাখন, সব্জি, ফল। মাংস খেতেন না বিনেশরা? মহাবীরের মন্তব্য, ‘‘প্রথম দিকে ছিল না। তার পরে সপ্তাহে দু’বার করে মাংসও যোগ হয় সেই ডায়েটে।’’
মহাবীরের ট্রেনিং থেকে বেরিয়ে বেশ কয়েক বছর ধরেই সাইয়ে বিদেশি কোচেদের কাছে অনুশীলন চলছে বিনেশের। কিন্তু নিয়মিত যোগাযোগ আছে জেঠু এবং ছাত্রীর মধ্যে। ৫০ কেজি থেকে এখন ৫৩ কেজি বিভাগে নামছেন বিনেশ। তার পিছনেও রয়েছে মহাবীরের পরামর্শ। কেন এই ওজন পরিবর্তন? একটা কারণ হচ্ছে, বিনেশের ওজন বেড়ে গিয়েছে। যে ওজন কমাতে গেলে সমস্যা হতে পারে। মহাবীর বলছেন, ‘‘আমি ওজন কমাতে বারণ করেছি। কারণ এখন ওর শরীর আরও শক্তপোক্ত হয়েছে। ওজন কমানোর চেষ্টা করলে চোট-আঘাত লাগার আশঙ্কা বেড়ে যেতে পারে।’’
মহাবীর স্বপ্ন দেখেন, কোনও এক দিন তাঁর পরিবার থেকে অলিম্পিক্স চ্যাম্পিয়ন বেরোবে। আপনার মেয়েদের মধ্যে সব চেয়ে প্রতিভাবান কে? গীতা এবং বিনেশের নাম করছেন মহাবীর। কিন্তু এখন স্বপ্ন বুনছেন বিনেশকে নিয়েই। কাজাখস্তানে ব্রোঞ্জ জেতার পরে ‘তাউজি’কে ফোন করে বিনেশ বলেছেন, ‘‘এ বার টোকিয়োয় নিজের সেরাটা দিতে চাই।’’ যে লক্ষ্যে পৌঁছনোর জন্য গুরুর মন্ত্র একটাই: এক ঘণ্টার সাফল্যের জন্য দিনে আট ঘণ্টা রক্ত ঝরাও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy