Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
ফিল্ডিং কোচের লড়াই জমিয়ে দিচ্ছেন জন্টি

ইন্টারভিউয়ে মন কাড়লেন রাঠৌর, আশা কম বাঙ্গারের

হেড কোচের পদ নিয়ে যে দড়ি টানাটানি হয়নি, তা-ই হচ্ছে সহকারী কোচেদের নিয়ে। সব চেয়ে বেশি আবেদন জমা পড়েছে ব্যাটিং কোচের জন্য।

প্রতিদ্বন্দ্বী: বাঙ্গারের (বাঁ দিকে) চাপ বাড়িয়ে দিয়েছেন বিক্রম রাঠৌর।

প্রতিদ্বন্দ্বী: বাঙ্গারের (বাঁ দিকে) চাপ বাড়িয়ে দিয়েছেন বিক্রম রাঠৌর।

সুমিত ঘোষ 
শেষ আপডেট: ২০ অগস্ট ২০১৯ ০০:০১
Share: Save:

ভারতীয় দলের নতুন ব্যাটিং কোচের দৌড়ে হট ফেভারিট হিসেবে উঠে এলেন বিক্রম রাঠৌর। সোমবারেই সহকারী কোচের ইন্টারভিউ শুরু হয়ে গিয়েছে এবং প্রথমেই ব্যাটিং কোচের পদের জন্য আবেদনকারীদের ডাকা হচ্ছে। প্রথম দিনের শেষে প্রার্থীদের যা স্কোরবোর্ড, বর্তমান ব্যাটিং কোচ সঞ্জয় বাঙ্গারকে আরও নড়বড়ে উইকেটে ঠেলে দিয়েছেন রাঠৌর।

হেড কোচের পদ নিয়ে যে দড়ি টানাটানি হয়নি, তা-ই হচ্ছে সহকারী কোচেদের নিয়ে। সব চেয়ে বেশি আবেদন জমা পড়েছে ব্যাটিং কোচের জন্য। রাঠৌর ছাড়াও ইন্টারভিউতে ডাকা হয়েছিল প্রাক্তন ভারতীয় ক্রিকেটার এবং রমাকান্ত আচরেকর স্কুলের ছাত্র প্রবীণ আমরেকে, মুম্বইয়ের প্রাক্তন ক্রিকেটার এবং সচিন তেন্ডুলকর-ঘনিষ্ঠ অমল মুজুমদারকে। এমনকি, হেড কোচের পদে ইন্টারভিউ দিয়ে নির্বাচিত না হওয়া লালচাঁদ রাজপুতও ব্যাটিং কোচের দৌড়ে ঢুকে পড়েন। কেউ খুব একটা দুর্বল প্রার্থী নন।

এমনই অবস্থা যে, বোলিং এবং ফিল্ডিং কোচেদের ইন্টারভিউ মঙ্গলবার থেকে নেওয়া হবে বলে ঠিক হয়েছে। বোলিং কোচের পদে ফেভারিট বি অরুণ। তাঁর অধীনে ভারতীয় বোলিং বিশ্বের সব জায়গায় সফল হয়েছে। ভারতীয় ফাস্ট বোলাররা বিশ্বের অন্যতম সেরা হয়ে উঠেছে। সঙ্গে কুলদীপ যাদব, যুজবেন্দ্র চহালের মতো তরুণ দুই রিস্টস্পিনারের উত্থান। বিদেশের মাঠে গিয়ে প্রায় সব ম্যাচে প্রতিপক্ষকে অলআউট করেছেন বুমরা, শামিরা। তাই বেঙ্কটেশ প্রসাদের মতো নাম দৌড়ে থাকলেও গত কয়েক বছরে বোলিংয়ের দারুণ সাফল্যের কারণে অরুণের দিকে পাল্লা ভারী।

একই কথা জোরালো ভাবে বলা যাচ্ছে না ফিল্ডিং কোচের ক্ষেত্রে। বরং আগামী দু’দিন যে ইন্টারভিউ চলবে, তাতে জোর লড়াই হওয়ার সম্ভাবনা জন্টি রোডসের সঙ্গে আর শ্রীধরের। প্রভাবশালী মহলে এখনও শ্রীধরের প্রতি সমর্থন বেশি। এঁদের মতে, গত কয়েক বছরে বোলিংয়ের মতোই দারুণ উন্নতি ঘটেছে ফিল্ডিংয়ে। ভারত এখন বিশ্বের সেরা ফিল্ডিং দলগুলির একটি। এঁরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, জন্টি রোডস এই মুহূর্তে নিজের দেশে বা কোনও আইপিএল টিমে নেই। তাই কী দরকার নিজেদের দলের ছন্দ নষ্ট করার। আবার সামান্য সংখ্যালঘু হলেও একটা অংশের বক্তব্য—তবু যে তাঁর নাম জন্টি রোডস। বিশ্বের সর্বকালের সেরা ফিল্ডারদের এক জন। এত বড় নাম। জন্টি এলে তাঁর হাত ধরে ভারতের তরুণ প্রজন্ম আরও এগোতে পারে ফিল্ডিংয়ে।

পরিবর্তন: সেই দল। শাস্ত্রীর ডান দিকে ফিল্ডিং কোচ শ্রীধর ও বোলিং কোচ অরুণ। কোহালির ডান দিকে বাঙ্গার। হয়তো ভাঙতে চলেছে এই জোট। ফাইল চিত্র

সোমবার রাত পর্যন্ত যা পরিস্থিতি, শ্রীধর কিছুটা এগিয়ে কারণ ফিল্ডিং ভাল করেছে বলে ছন্দ ধরে রাখাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হতে পারে। ব্যাটিং কোচের ক্ষেত্রে একই যুক্তি প্রযোজ্য হবে বলে মনে হয় না। লোঢা সংস্কার মেনে এই প্রথম সহকারী কোচেদের নির্বাচনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে জাতীয় নির্বাচকমণ্ডলীকে। প্রাক্তন উইকেটকিপার এম এস কে প্রসাদের নেতৃত্বাধীন নির্বাচক কমিটির সামনে রাঠৌর বেশ শক্তিশালী প্রেজেন্টেশন দিয়েছেন বলে খবর। প্রথা অনুযায়ী, প্রার্থীদের প্রেজেন্টেশনের পরে তাঁদের প্রশ্নও করেন বিচারকেরা। শোনা যাচ্ছে, সেই প্রশ্নোত্তর পর্বেও ভাল করেছেন হিমাচল প্রদেশ এবং পঞ্জাবের প্রাক্তন ব্যাটসম্যান।

ভারতীয় ক্রিকেট মহলে কেউ কেউ ব্যাটিং কোচ হিসেবে প্রবীণ আমরের দক্ষতায় উচ্ছ্বসিত। কিন্তু প্রথম দিনের শেষে ব্যাটিং কোচের দৌড় কার্যত দ্বিমুখী হয়ে পড়েছে। বাঙ্গার বনাম রাঠৌর। দু’জনের কেউ খুব বেশি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেননি। বাঙ্গার খেলেছেন ১২টি টেস্ট এবং ১৫টি ওয়ান ডে। রাঠৌরের নামের পাশে রয়েছে ৬টি টেস্ট ও ৭টি ওয়ান ডে। প্রাক্তন অলরাউন্ডার বাঙ্গারের ঘরোয়া ক্রিকেটে ব্যাটিং গড় ৩৩.৩৩। রাঠৌরের ঘরোয়া ক্রিকেটে ব্যাটিং গড় ৪৯.৬৬। বাঙ্গার যেমন অলরাউন্ডার ছিলেন, রাঠৌর ছিলেন বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যান। উইকেটকিপিংও করেছেন। বাঙ্গার মূলত অধ্যবসায়, শৃঙ্খলা এবং সাহসকে ঢাল করে ব্যাটিং করতেন। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় অধিনায়ক থাকার সময় টেস্টে ওপেনও করেছেন। তবে নিয়মিত হতে পারেননি। অন্য দিকে, রাঠৌর ঘরোয়া ক্রিকেটে রানমেশিন আখ্যা পেলেও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে টিকতে পারেননি। ইংল্যান্ডে সুইং বোলিংয়ের সামনে দুর্বল টেকনিক রাঠৌরের টেস্ট জীবনের উপর দ্রুত ‘এক্সপায়ারি ডেট’ ঝুলিয়ে দেয়।

ক্রিকেটীয় দক্ষতায় সে ভাবে কেউ কাউকে টেক্কা দিতে পারবেন না। কোচিং অভিজ্ঞতায় এগিয়ে বাঙ্গার। ২০১৪ থেকে তিনি ভারতীয় দলের সঙ্গে আছেন। রবি শাস্ত্রী ডিরেক্টর হওয়ার পরেই ভারতীয় কোচেদের সহকারী করে নিয়ে এসেছিলেন। তখনই ব্যাটিং কোচ হিসেবে বাঙ্গার, বোলিং কোচ বি অরুণ এবং ফিল্ডিং কোচ আর শ্রীধরকে নিয়োগ করা হয়। তার পর থেকে এক বছরের জন্য শাস্ত্রীকে সরিয়ে হেড কোচ হিসেবে অনিল কুম্বলে এসেছেন। বাঙ্গারকে কেউ সরাতে পারেনি।

শোনা যায়, বিরাট কোহালির খুবই প্রিয় এবং আস্থাভাজন বাঙ্গার। বহির্বিশ্ব যা-ই বিশ্লেষণ করুক, কোহালি মনে করেন, ২০১৪ থেকে ভারতীয় ব্যাটিং অনেক ইতিবাচক ভঙ্গি নিয়ে আন্তর্জাতিক মঞ্চে উপস্থিত হয়েছে। সেই অগ্রগতির জন্য অধিনায়ক যেমন বার বার শাস্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন, তেমনই বাঙ্গারের অবদান নিয়েও তাঁর মনোভাব কখনও গোপন করেননি। যদিও এ বারে সংশয় রয়েছে, অধিনায়কের সমর্থনও বাঙ্গারকে রক্ষা করার পক্ষে যথেষ্ট হবে কি না। কারণ, যাঁরা ব্যাটিং কোচ বাছার দায়িত্বে সেই জাতীয় নির্বাচকেরা পরিবর্তনের পক্ষে ঝুঁকে রয়েছেন বলে খবর। সঙ্গে ভারতীয় ক্রিকেটের হাইকম্যান্ডেও এই মুহূর্তে বাঙ্গারের চেয়ে রাঠৌরের প্রতি সমর্থনের হাওয়া বেশি জোরালো।

রাঠৌর ঘরোয়া ক্রিকেটে কোচিং করানোর পাশাপাশি ভারতীয় ‘এ’ দলের ব্যাটিং কোচের ভূমিকা পালন করেছেন। শোনা যাচ্ছে, ভারতীয় ‘এ’ এবং জুনিয়র দলের কোচ রাহুল দ্রাবিড় প্রশংসা করেছেন রাঠৌরের কাজের। তেমনই বাঙ্গারের বিপক্ষে যেতে পারে তাঁকে নিয়ে দলের অন্দরমহলে তৈরি হওয়া ধোঁয়াশা এবং বিভ্রান্তি। সব ক্ষেত্রে তাঁর ভূমিকা নিয়ে খুশি হতে পারছেন না সকলে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy