গোটা মরসুম জুড়ে এত আলোচনার ফল শূন্য। ফাইল চিত্র
গোটা দেশ জুড়ে একের পর এক ক্রিকেটার উঠে আসছেন। ঘরোয়া মঞ্চে মেলে ধরার পর আইপিএলে নজর কাড়ছেন। সেখানে বাংলা এক অদ্ভুত কারণে অন্ধকুপে চলে যাচ্ছে। ২০২১ সালেও তার প্রতিফলন ঘটল। দলের প্রধান কোচ অরুণ লাল থেকে শুরু করে সিএবি সভাপতি অভিষেক ডালমিয়া পর্যন্ত এমন বিপর্যয়ের কুল কিনারা খুঁজে পাচ্ছেন না। আর অধিনায়ক অনুষ্টুপ মজুমদার, তিনিও নিজের মত করে সাফাই দেওয়ার চেষ্টা করলেন।
ভারতীয় ক্রিকেট থেকে ক্রমাগত পিছিয়ে থাকার জন্য লালজি অবশ্য আইপিএলে সুযোগ না পাওয়াকে দায়ী করছেন। বললেন, “ঋদ্ধি, শামি, শ্রীবৎস ও শাহবাজকে বাদ দিলে আর কেউ আইপিএলে নেই। ফলে ক্রিকেটারদের মনে আঘাত লাগতে বাধ্য।” যদিও দলের অধিনায়ক কিন্তু কোচের বক্তব্যে একমত নন। বরং অনুষ্টুপ বলছেন, “আইপিএলে সুযোগ না পেলে হতাশা থাকলেও বাংলার হয়ে খেলতে নামলে তো ওটাই বড় অনুপ্রেরণা হওয়া উচিত। আমরা দুটো প্রতিযোগিতায় ধারাবাহিকভাবে ভাল খেলতে পারিনি। ওপেনাররা ধারাবাহিক নয়। সৌরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কোনও বিভাগেই দাঁড়াতে পারিনি। চণ্ডীগড়ের বিরুদ্ধে ক্যাচ পড়েছে। অসমের বিরুদ্ধেও ভাল ব্যাট করতে পারিনি। দলের খেলায় অনেক গলদ আছে। আমরা অনেক ভুল করেছি। তাই আইপিএলে সুযোগ না পাওয়াকে সামনে ঢাল করা উচিত নয়।”
ভাল শুরু করেও গত জানুয়ারি মাসে দুর্বল অসমের কাছে হারের পর তামিলনাড়ুর কাছে উড়ে যাওয়া। সৈয়দ মুস্তাক আলি টি-টিয়েন্টি প্রতিযোগিতা থেকে বিদায় নিয়েছিল অনুষ্টুপ মজুমদারদের দল। বিজয় হজারে ট্রফিতেও সেই একই খারাপ খেলার নমুনা। এবার তো চণ্ডীগড়ের কাছে ৫ উইকেটে হেরে যাওয়ার পর তৃতীয় ম্যাচে সৌরাষ্ট্রের কাছে ১৪৯ রানে হেরেছিল দল। তাই গত ম্যাচে জম্মু-কাশ্মীরকে ৮২ রানে হারিয়েও লাভ হয়নি। ১ মার্চ হরিয়ানার বিরুদ্ধে ম্যাচটা যে নিয়ম রক্ষার।
অরুণ লালের মতো বহু যুদ্ধের নায়ক পর্যন্ত অবাক হয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু কেন তাঁর বাংলা পিছিয়ে যাচ্ছে? লালজি বলছেন, “এর উত্তর আমার কাছেও নেই! ছেলেরা নেটে খুবই পরিশ্রম করছে। প্রত্যেকের নিষ্ঠা আছে। কিন্তু ম্যাচে নামলেই কোনও মানসিক সমস্যা ওদের ঘিরে ধরছে। না হলে অসম, চণ্ডীগড়ের কাছে আমরা হারি! ধারাবাহিকতার অভাব স্পষ্ট লক্ষ্য করতে পাচ্ছি। কিন্তু কী আর করা যাবে। সোমবার হরিয়ানার বিরুদ্ধে শেষ ম্যাচ। সম্মান বজায় রাখার জন্য সেই ম্যাচ জিততে চাই।”
ময়দানে কান পাতলে একটা কথা খুবই শোনা যায়। বাংলা নাকি সীমিত ওভারের ক্রিকেটে দারুণ দল। তাহলে একটা ছোট্ট পরিসংখ্যান তুলে ধরা যাক। সেই ২০১১-১২ মরসুমে শেষ বার বিজয় হজারে ট্রফি জিতেছিল বাংলা। ব্যাটে, বলে লক্ষ্মীরতন শুক্লর দাপটে সেবার মুম্বইকে হারিয়েছিল বঙ্গব্রিগেড। ২০০২-০৩ থেকে ২০১৬-১৭, এই ১৪ মরসুমের মধ্যে মাত্র পাঁচ বার ফাইনালে উঠেছে বাংলা। প্রতিবারই রানার্স হয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে। শেষ তিন মরসুমে তো প্রথম রাউন্ড থেকেই বিদায় নিয়েছে দল। এবারও সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। মুস্তাক আলি ট্রফিতেও একই ছবি। ২০১০-১১ মরসুমে মধ্যপ্রদেশকে হারিয়ে ট্রফি হাতে তুলেছিল বাংলা। তারপর ২০১৬-১৭ মরসুমে মনোজ তিওয়ারির নেতৃত্বে ট্রফি জিতল পূর্বাঞ্চল। কিন্তু সেটা তো সম্মিলিত চেষ্টা। বাংলার একক দক্ষতা কোথায়!
দলের এমন হতশ্রী ফল নিয়ে বেশ বিরক্ত কর্তারা। শোনা যাচ্ছে মাঠে খারাপ পারফরম্যান্স দেখার পর দল নিয়ে কর্তারা মাথা ঘামাচ্ছেন। সিএবি প্রধান অভিষেক ডালমিয়া তো বলেই দিলেন, “আর তো একটা ম্যাচ বাকি। এখনই কিছু বলা উচিত নয়। তবে এই ম্যাচটা শেষ হলে কোচ ও অধিনায়ককে নিয়ে বসব।”
এমন আলোচনা তো প্রতি মরসুম হয়। একটা করে মরসুম চলে যায় অপেক্ষা বাড়তেই থাকে। একই সঙ্গে বাড়তে থাকে শূন্যতা। ‘ভিশন ২০২০’ এখন ‘ভিশন ২০২৫’ হয়ে গিয়েছে। সুফল কি মিলবে? আর কবে মিলবে?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy