Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
বাহুতুলে-বিতর্কে আক্রান্ত মুম্বই থেকে বাংলা

সাইরাজ অনৈতিক কাজ করেছে, বিস্ফোরণ ক্ষুব্ধ বেঙ্গসরকরের

দিলীপ বেঙ্গসরকর প্রবল উত্তেজিত। মঙ্গলবার সকালে সাইরাজ বাহুতুলের নম্বর থেকে তাঁর মোবাইলে একটা মেসেজ ঢুকেছিল। কিন্তু ভারতীয় ক্রিকেটের ‘কর্নেল’ উত্তর দেননি। কেন? ‘‘কারণ, নষ্ট করার মতো বাজে সময় আমার নেই,’’ মুম্বই থেকে ফোনে বলার সময় ক্ষুব্ধ শোনাচ্ছিল এমসিএ ভাইস প্রেসিডেন্টের গলা। এক টাকা নাকি এক লক্ষ টাকা—সাইরাজ বাহুতুলের সঙ্গে চুক্তির অঙ্কটা নিয়ে নাকি কোনও ধারণা নেই সিএবি কোষাধ্যক্ষ বিশ্বরূপ দে-র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ অগস্ট ২০১৫ ০৩:০৩
Share: Save:

দিলীপ বেঙ্গসরকর প্রবল উত্তেজিত। মঙ্গলবার সকালে সাইরাজ বাহুতুলের নম্বর থেকে তাঁর মোবাইলে একটা মেসেজ ঢুকেছিল। কিন্তু ভারতীয় ক্রিকেটের ‘কর্নেল’ উত্তর দেননি। কেন? ‘‘কারণ, নষ্ট করার মতো বাজে সময় আমার নেই,’’ মুম্বই থেকে ফোনে বলার সময় ক্ষুব্ধ শোনাচ্ছিল এমসিএ ভাইস প্রেসিডেন্টের গলা।
এক টাকা নাকি এক লক্ষ টাকা—সাইরাজ বাহুতুলের সঙ্গে চুক্তির অঙ্কটা নিয়ে নাকি কোনও ধারণা নেই সিএবি কোষাধ্যক্ষ বিশ্বরূপ দে-র। সদস্যরা জিজ্ঞেস করলে কোনও উত্তর দিতে পারছেন না। ‘‘আমার মনে হয় সেটা জানা থাকলে সিএবি প্রশাসনের স্বচ্ছতা আরও বেশি থাকত। এত দিন কোচ নিয়োগ করা হলে কোষাধ্যক্ষকে জানানো হত কত টাকায় হচ্ছে। আমি এখনও সেটা জানি না,’’ বলে দিলেন বিশ্বরূপ।
এক কোচ। দুই ক্রিকেট সংস্থা। মহানাটকীয় এক পট-পরিবর্তন। আর তা নিয়ে দুই ক্রিকেট সংস্থায় উদ্ভূত বিতর্ক।
সাইরাজ বাহুতুলে বাংলায় আসছেন ঠিকই। কিন্তু আসছেন, বিতর্ককে সঙ্গী করে। বিতর্ক মুম্বইয়ে। বিতর্ক বাংলায়।
মুম্বই ক্রিকেট সংস্থার কর্তারা এতটাই স্তম্ভিত যে, বাহুতুলের নাম শুনলেও রেগে যাচ্ছেন। ‘‘ওর সঙ্গে আমরা সব ঠিক করলাম। টাকাপয়সা নিয়ে কথা হল। গত পনেরো দিন ধরে অনূর্ধ্ব ২৩ টিমের সঙ্গে প্র্যাকটিস করল। আর তার পর আচমকা দায়িত্ব ছেড়ে বাংলায় চলে গেল। আনএথিক্যাল। চরম অনৈতিক কাজ করল সাইরাজ,’’ বলছিলেন অসন্তুষ্ট বেঙ্গসরকর। মুম্বই ক্রিকেট-কর্তাদের সবচেয়ে আঘাত লেগেছে সাইরাজের এমন চুপিসাড়ে বাংলায় যোগ দেওয়া নিয়ে। সোমবার সন্ধে পর্যন্ত নাকি মুম্বইয়ের সিনিয়র টিমের কোচ চন্দ্রকান্ত পণ্ডিতের সঙ্গে কথা বলেছেন বাহুতুলে। ঠিক করেছেন, আসন্ন বুচিবাবু ট্রফিতে কেমন টিম যাবে। কিন্তু কাউকে নাকি ঘুণাক্ষরেও টের পেতে দেননি যে, বুচিবাবু দূরে থাক। আর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তিনি অনূর্ধ্ব ২৩ টিমের দায়িত্বটাই ছেড়ে দিচ্ছেন!

‘‘ও আমাকে মেসেজে বলছে, এটা নাকি ওর কাছে একটা ভাল সুযোগ। বলছে, আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিন। বলছে, মুম্বইয়ের দায়িত্বটা রঞ্জি টিমের ছিল না। তা হলে তুমি কেন বিদর্ভ, কেরল ছেড়ে মুম্বইয়ের জুনিয়র টিমের দায়িত্ব নিলে? ওগুলো তো রঞ্জি টিম ছিল,’’ প্রশ্ন তুলে দিচ্ছেন বেঙ্গসরকর। এখানেই না থেমে তাঁর আরও সংযোজন, ‘‘আজ যদি বাংলার কোচ ভারতীয় দলের দায়িত্ব পায়, সে দুম করে সেখানে চলে যাবে? বাংলায় তার কোনও দায়িত্ব থাকবে না? অবাক হয়ে যাচ্ছি ওর ব্যাপার দেখে।’’

যা শুনে মুম্বই ক্রিকেট সংস্থার কোনও কোনও কর্তা বললেন, কর্নেলের রাগ যুক্তিযুক্ত। তাঁদের বক্তব্য হল, মুম্বইয়ের জুনিয়র টিমের দায়িত্ব নেওয়ার সময় সাইরাজকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, তাঁর অন্য কোথাও কোচিংয়ের দায়িত্ব নেওয়ার সম্ভাবনা আছে কি না। সাইরাজ নাকি তখন কিছু বলেননি। নিজেই আগ্রহী হয়ে দায়িত্ব নেন। নিজেই তার পর আচমকা ছেড়ে দিলেন। চন্দ্রকান্ত পণ্ডিত যেমন বলে দিচ্ছেন, ‘‘আমি কিছু জানতেই পারলাম না। জানলে সুবিধে হত। কো-অর্ডিনেশন বলেও একটা ব্যাপার থাকে।’’ এঁরা আশ্চর্য ভেবে যে, সাইরাজ নিজে কেন কিছু বললেন না? মিডিয়া থেকে কেন জানতে হল?

সিএবির একাংশের অভিযোগও তাই। নয়াদিল্লিতে আইপিএল ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকে যোগ দিতে গিয়ে সোমবার বাংলা কোচের নাম মিডিয়াকে বলে দেন সিএবি যুগ্ম সচিব সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। যা সিএবির একাংশকে অবাক করে দেয়। প্রকাশ্যে অস্বস্তিকর মন্তব্যের রাস্তায় যাওয়া হচ্ছে না। সিএবি-র আর এক যুগ্ম সচিব সুবীর গঙ্গোপাধ্যায় বললেন, ‘‘সিএবি একটা পরিবার। কোচ নিয়োগ থেকে তাঁর চুক্তি, সবই এত দিন একসঙ্গে আলোচনা করে ঠিক হত। সবাই জানতে পারত। এ বার তা হয়নি। কিন্তু এতে বাংলার ভাল হলে আমার সমস্যা নেই।’’ কিন্তু কেউ কেউ ঠারেঠোরে বোঝালেন, সিএবির এত গুরুত্বপূর্ণ একটা সিদ্ধান্তে কাগজ পড়ে জানতে হচ্ছে, সেটা খুব অভিপ্রেত নয়।

আর যে দুইয়ের সিদ্ধান্ত ঘিরে এত কিছু— তাঁরা কী বলছেন?

সিএবি যুগ্ম সচিব সৌরভকে পাওয়া গেল না। তাঁর মোবাইল বেজে গেল। মেসেজ করা হলেও উত্তর আসেনি। সাইরাজ বাহুতুলেকে পাওয়া গেল। বেঙ্গসরকরদের অসন্তোষের কথা শুনে বাংলার নতুন কোচ ফোনে বললেন, ‘‘দিলীপ স্যরের বক্তব্য নিয়ে আমার কিছু বলার নেই। উনি অত্যন্ত শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি। কিন্তু মুম্বইয়ের সঙ্গে আমার কোনও চুক্তি হয়নি। আর এটা আমার কাছে বড় সুযোগ। আমার পরিবার আছে। তাদের কথাও ভাবতে হয়। নিজের কথা ভাবতে হয়। তাই আমার পরিবার, আমি নিজে যা ঠিক মনে করেছি, সেটাই করেছি।’’ একটু থেমে ফের বললেন, ‘‘আমি সবার সাপোর্ট চাই। বিতর্ক নয়। মিডিয়াকে অনুরোধ, আপনারা প্লিজ এটা নিয়ে বাড়াবাড়ি করবেন না।’’

বাংলায় সাইরাজ বাহুতুলের কোচিং কেরিয়ার শেষ পর্যন্ত কোন দিকে যাবে, সময় বলবে। তবে আগমনের রাস্তায় যে গোলাপ পাপ়ড়ির চেয়ে কাঁটা বেশি, আপাতত বোধহয় সেটা বলাই যায়।

অন্য বিষয়গুলি:

Vengsarkar Sairaj Bahutule bengal coach cricket
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE