আজ ওয়েলসের বিরুদ্ধে নামছে ডেনমার্ক। ছবি রয়টার্স
রাশিয়ার বিরুদ্ধে ম্যাচ জিতেই অদ্ভুত কাণ্ড করে বসেছিলেন ডেনমার্কের ফুটবলাররা। সোজা ছুটে গিয়েছিলেন রিজার্ভ বেঞ্চের দিকে। প্রত্যেকে চোখ রেখেছিলেন ফোনে। মাত্র কয়েক মুহূর্তের অপেক্ষা। তারপরেই গোটা দল ফেটে পড়ল উচ্ছ্বাসে। সেই সঙ্গে উৎসবে মাতলেন কোপেনহাগেনের পার্কেন স্টেডিয়ামের হাজার হাজার দর্শক। কী দেখছিলেন ফোনে? চোখ ছিল বেলজিয়াম-ফিনল্যান্ড ম্যাচের দিকে। কারণ, ওই ম্যাচের উপরেই নির্ভর করছিল ডেনমার্কের ইউরো-ভাগ্য। দু’ম্যাচে যাদের খাতায় কোনও পয়েন্ট ছিল না, তারাই গ্রুপে দ্বিতীয় হয়ে শেষ ষোলোয় উঠে গেল।
ডেনমার্কের উড়ান সম্ভবত এবারের ইউরো কাপে সব থেকে মনে রাখার মতো। ফুটবল মাঠে যেন রূপকথা তৈরি করেছেন ১১ জন ড্যানিশ। যতটা খারাপ হতে পারে, ততটাই খারাপ ভাবে প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছিল ডেনমার্কের। প্রথম ম্যাচের ৪০ মিনিটের মাথাতেই দলের সেরা ফুটবলার ক্রিশ্চিয়ান এরিকসেন আচমকাই অজ্ঞান হয়ে গেলেন। প্রাথমিক ধাক্কা সামলে তাঁকে আগাগোড়া আগলে রাখলেন সতীর্থরা। ড্রেসিংরুমে ফিরে তিনি ভাল আছেন শোনার পরে হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন। কিন্তু সমস্যা মেটেনি। উয়েফার বদান্যতায় ফের মাঠে নামতে হল। ফলাফল? হারতে হল ফিনল্যান্ডের মতো অখ্যাত দলের কাছে।
পরের ম্যাচে সামনে ফিফা ক্রমতালিকায় এক নম্বরে থাকা বেলজিয়াম। অঘটন ঘটার কথা ছিল না। ঘটেওনি। কিন্তু এরিকসেনকে হারানোর ধাক্কা তখনও সামলাতে পারেনি ডেনমার্ক। ফুটবলারদের শরীরীভাষা দেখে গোটা দলকে মনোবিদ দেখানোর কথা ভেবেছিলেন ডেনমার্ক কোচ ক্যাসপার হুলমান। কিন্তু ডেনমার্কের কাছে তখনও একটা সুযোগ বাকি ছিল।
প্রতি আক্রমণে ডেনমার্ককে বধ করার ছক কষেছিল রাশিয়া। পাশাপাশি, সময় নষ্ট করার খেলাতেও মেতেছিল। কিন্তু ড্যানিশরা ছিলেন অদম্য। এক সময় দু’গোলে এগিয়ে যায় তারা। এমন সময় ১৫০০ কিমি দূরে সেন্ট পিটার্সবার্গে এগিয়ে যায় বেলজিয়াম। উচ্ছ্বাসে মাতার কিছুক্ষণ পরেই ঘোর কাটে ড্যানিশ সমর্থকদের। বেলজিয়ামের গোল বাতিল হয়ে যায় অফসাইডে। প্রায় একই সময় পেনাল্টি পায় রাশিয়া এবং ব্যবধান কমিয়ে দেয়। কিন্তু দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ডেনমার্ক ফুটবলাররা নিজেদের তরফে কোনও খামতি রাখতে চাননি। ভাগ্যও সহায় ছিল তাদের প্রতি।
ভাবতে অবাক হতে হয়, ৫০ বছর আগেও ডেনমার্কের জাতীয় দলে খেলতেন না কোনও পেশাদার ফুটবলার। কারণ, সে দেশের ফুটবল সংস্থা পেশাদারদের খেলানোর প্রয়োজনই মনে করেনি। অ্যামেচার ফুটবলারদের নিয়েই ১৯৬৬ বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করে ডেনমার্ক এবং শেষ করে সবার শেষে। ১৯৭১ সালে প্রথম পেশাদার ফুটবলার খেলানো শুরু হয়। এর ঠিক ১৩ বছর পর বড়সড় সাফল্য পায় ডেনমার্ক। সেমিফাইনালে উঠেছিল তারা। ১৯৮৬-তে প্রথম বিশ্বকাপেও কাঁপিয়ে দেয় তারা। প্রথম ম্যাচেই স্কটল্যান্ডকে হারিয়েছিল, যে দলের কোচ ছিলেন স্যর অ্যালেক্স ফার্গুসন। পরের ম্যাচে দু’বারের বিশ্বকাপজয়ী উরুগুয়েকে হারিয়ে দেয় তারা। বিশ্বকাপে ডেনমার্কের প্রথম ফুটবলার হিসেবে হ্যাটট্রিক করেন প্রেবেন এলকায়ের।
তবে ডেনমার্কের ইতিহাসে স্বর্ণালী সময় ১৯৯২। সেই ইউরো কাপে যোগ্যতাই অর্জন করতে পারেনি ডেনমার্ক। কিন্তু গৃহযুদ্ধের কারণে উয়েফা যুগোশ্লাভিয়াকে নির্বাসিত করায় ডেনমার্ককে সুযোগ দেওয়া হয়। গ্রুপ পর্যায়ে ফ্রান্সকে হারানোর পর কোয়ার্টার ফাইনালে রুড খুলিট, ডেনিস বার্গক্যাম্প, ফ্র্যাঙ্ক রাইকার্ডের নেদারল্যান্ডসকে হারিয়ে দেয়। গোটা বিশ্বকে স্তম্ভিত করে ফাইনালে হারায় জার্মানিকে।
উত্থান-পতন এরপরেও অনেক বার এসেছে। কিন্তু এবারের ডেনমার্ক যেন সেই ১৯৯২-এর সোনালি দিন ফিরিয়ে আনার স্বপ্ন দেখাচ্ছে। শনিবার কোয়ার্টার ফাইনালে প্রতিপক্ষ ওয়েলস। হুলমানের ছেলেদের চোখে এখন শুধুই স্বপ্ন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy