Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
olympic

আঁধার পেরিয়ে উদিত সূর্যের দেশে সুতীর্থা

নির্বাসন উঠে যাওয়ার পরে ২০১৭ সালে রাঁচীতে মনিকাকে হারিয়েই প্রথম জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হওয়া। তার পরে ২০১৯ সালে হায়দরাবাদে কৃত্তিকা সিংহ রায়কে হারিয়ে দ্বিতীয় বার জাতীয় সেরা হয়েছেন সুতীর্থা

 উচ্ছ্বাস: টোকিয়ো অলিম্পিক্সে যোগ্যতা অর্জন করে সুতীর্থা

উচ্ছ্বাস: টোকিয়ো অলিম্পিক্সে যোগ্যতা অর্জন করে সুতীর্থা নিজস্ব চিত্র

দেবাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ মার্চ ২০২১ ০৭:৪৭
Share: Save:

পাঁচ বছর আগে বয়স ভাঁড়ানোর অপরাধে নির্বাসিত হয়েছিলেন। দু’টো জাতীয় প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারেননি। রিয়ো অলিম্পিক্সের স্বপ্নও ভেঙে চুরমার হয়ে গিয়েছিল।

সেই মেয়েই কি না প্রত্যাবর্তনের পরে দু’বার জাতীয় চ্যাম্পিয়ন। বৃহস্পতিবার রাতে কাতারের রাজধানী দোহায় সেই বঙ্গকন্যা টেবল টেনিস খেলোয়াড় সুতীর্থা মুখোপাধ্যায় অলিম্পিক্সের এশীয় পর্বের ম্যাচে মনিকা বাত্রাকে হারিয়ে টোকিয়োর ছাড়পত্র আদায় করে নিয়েছেন। ম্যাচের ফল ৪-২ (৭-১১, ১১-৭, ১১-৪, ৪-১১, ১১-৫, ১১-৪)। নৈহাটির ব্যানার্জি পাড়ার মেয়ে এ বারের অলিম্পিক্সে দ্বিতীয় বাঙালি, যিনি যোগ্যতা অর্জন করলেন। প্রথম জন তিরন্দাজ অতনু দাস।

ভারতীয় টেবল টেনিস দলের হয়ে সিঙ্গলসে সুতীর্থা ছাড়াও ইতিমধ্যেই টোকিয়ো অলিম্পিক্সের ছাড়পত্র পেয়ে গিয়েছেন মনিকা বাত্রা, শরৎ কমল ও জি সাথিয়ান। শুক্রবার মিক্সড ডাবলসের ফাইনালে উঠলেন মনিকা-শরৎ জুটি। শনিবার কোরীয় জুটিকে ফাইনালে হারালে মিক্সড ডাবলসেও অলিম্পিক্সে খেলার ছাড়পত্র পাবেন তাঁরা।

শুক্রবার বিকেলে দোহায় যখন সুতীর্থাকে ফোনে যোগাযোগ করা হল, তখন বিশ্রাম নিচ্ছেন তিনি। কিছুক্ষণ পরেই যাবেন স্টেডিয়ামে। ফোন ধরেই সুতীর্থা বললেন, ‍‘‍‘অনেক লড়ে এই সাফল্য এসেছে। বৃহস্পতিবার রাতে মনিকাকে হারানোর পরে মনে পড়ছিল মায়ের মুখটা। মা অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছেন।’’ যোগ করেন, ‍‘‍‘বাংলার টেবল টেনিস খেলোয়াড়দের মধ্যে এর আগে অলিম্পিক্সে গিয়েছেন পৌলমীদি (ঘটক), মৌমাদি (দাস), অঙ্কিতাদি (দাস), সৌম্যজিৎ ঘোষেরা। এঁরা সবাই আমার আদর্শ। ভিডিয়ো কলে সবাই শুভেচ্ছা জানিয়েছেন অলিম্পিক্সে যোগ্যতা অর্জনের জন্য।’’আর পাঁচ বছর আগে নির্বাসিত থাকার সময়ে যন্ত্রণার দিনগুলো? এ বার নৈহাটি গার্লস মডেল স্কুলের প্রাক্তন ছাত্রী শোনান, চোয়াল শক্ত করা জেদের কথা। ২৬ বছরের সুতীর্থা বলেন, ‍‘‍‘মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছিলাম। টিভিতে দেখতাম বন্ধুরা দেশে-বিদেশে খেলছে। অথচ আমি ঘরে। টিভি বন্ধ করে দিতাম। ভাতাও বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু অনুশীলন ও ফিটনেসে খামতি রাখিনি। সেই কারণেই ফিরতে পেরেছি।’’

সুতীর্থার পাশেই ছিলেন ভারতীয় দলের কোচ সৌম্যদীপ রায়। তিনি বলেন, ‍‘‍‘নির্বাসিত থাকার সময়ে একদিন আমার কাছে এসে বলল, খেলতে চাই। ওকে যাদবপুরে আমার অ্যাকাডেমিতে নিয়ে আসি। সেখানেই ঘর ভাড়া নিয়ে মাকে নিয়ে এখন থাকে ও।’’ যোগ করেন, ‍‘‍‘নির্বাসনের সময়ে সুতীর্থা সকাল সাড়ে পাঁচটা থেকে বেলা বারোটা, আবার বিকেল চারটে থেকে রাত আটটা পর্যন্ত অনুশীলন করত। ফাঁকি দেয়নি।’’

নির্বাসন উঠে যাওয়ার পরে ২০১৭ সালে রাঁচীতে মনিকাকে হারিয়েই প্রথম জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হওয়া। তার পরে ২০১৯ সালে হায়দরাবাদে কৃত্তিকা সিংহ রায়কে হারিয়ে দ্বিতীয় বার জাতীয় সেরা হয়েছেন অরিজিৎ সিংহের গানের ভক্ত সুতীর্থা। কোচ সৌম্যদীপ বলেন, ‍‘‍‘২০১৭ সাল থেকেই শুরু হয়েছে ওর স্বপ্নের দৌড়। ওকে বলতাম, এ বার তুই ভারতসেরা। আন্তর্জাতিক মঞ্চেও সফল হতে হবে। লক্ষ্য ছিল, ২০১৮ সালের কমনওয়েলথ গেমস ও টোকিয়ো অলিম্পিক্সে যোগ্যতা অর্জন। তাতে ও সফল হয়েছে।’’ যোগ করেন, ‍‘‍‘২০১৮ সালে বুদাপেস্টে বিশ্বচ্যাম্পিয়শিপে প্রথম পঞ্চাশের মধ্যে থাকা তিন জনকে হারিয়েছিল। যার ফলে বিশ্ব ক্রমপর্যায়ে ৫৫০ থেকে তিনশোতে চলে আসে ও। বর্তমানে সুতীর্থা বিশ্বের ৯৫ নম্বর।’’

বাবা অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় সেনা কর্মী। মা নীতা মুখোপাধ্যায় মেয়ের খেলার সব দেখভাল করেন। নীতাদেবীর কথায়, ‍‘‍‘শরীর ফিট রাখতে পাঁচ বছর বয়সে নৈহাটি ইয়ুথ অ্যাসোসিয়েশনে ভর্তি করিয়ে দিয়েছিলাম কোচ মিহির ঘোষের কাছে। সেখানেই সাব- জুনিয়র স্তর পর্যন্ত খেলেছে।’’ আর মিহিরবাবু বললেন, ‍‘‍‘জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হতে পারিনি। কিন্তু আমার ছাত্রী অলিম্পিক্সে যাচ্ছে। এটাই প্রাপ্তি। মেয়েটার বড় গুণ ও টানা পরিশ্রম করতে পারে। দোহা থেকে ফোন করেছিল। বলেছি ফিটনেসটা আরও বাড়াতে হবে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

olympic
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy