জয়ের পর নীরজ চোপড়া।
এক জার্মান গুরুর মন্ত্র ও নতুন অস্ত্রে টোকিয়োয় স্বর্ণশিকার করলেন নীরজ চোপড়া। এই দুইয়ের নাম— ক্লাউস বার্তোনিজ় এবং ‘ভালহালা’।
বার্তোনিজ়ের সঙ্গে গত দু’বছর ধরে রয়েছেন নীরজ। ইদানীং শুধু জার্মানির এই বায়োমেকানিক্স বিশেষজ্ঞের সঙ্গেই কাজ করেছেন ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ড থেকে স্বাধীন ভারতকে প্রথম পদক এনে দেওয়া অ্যাথলিট। জ্যাভলিন থ্রো এমনই একটা প্রতিযোগিতা যেখানে শরীরের বিভিন্ন পেশিকে কাজে লাগাতে হয় সেরা ফলটা পেতে গেলে। পাশাপাশি অঙ্ক কষে দেখতে হয়, কতটা উঁচুতে, কী রকম কোণ দিয়ে ছুড়লে সব চেয়ে বেশি দূরে যাবে বর্শা। খেয়াল রাখতে হয়, যাতে শরীর শক্তিশালী হওয়ার পাশে নমনীয়ও থাকে। এক জন বায়োমেকানিক্স বিশেষজ্ঞের পক্ষে এই দিকগুলোয় নজর রাখা সহজ।
বার্তোনিজ়ের সঙ্গে বেশ কিছু দিন ধরে কাজ করলেও নীরজ তাঁর নতুন অস্ত্র হাতে পেয়েছেন এই বছরের গোড়ার দিকেই। নাম— ‘ভালহালা’। এই জ্যাভলিনটার কয়েকটা বিশেষত্ব আছে। যেমন, কার্বন ফাইবারে তৈরি। যা স্টিলের চেয়েও ১৪ শতাংশ বেশি মজবুত। এই জ্যাভলিনের আরও একটা বিশেষত্ব হল, ১০০ শতাংশ কার্বনের তৈরি বলে খুব শক্ত। যে কারণে শূন্যে ছোড়ার পরে হাওয়ার ধাক্কায় খুব একটা দিক পরিবর্তন করে না। তবে এর একটা অন্য দিকও আছে।
বলা হয়, নিখুঁত টেকনিকের অধিকারী থ্রোয়াররাই এই জ্যাভলিনটা ভাল ছুড়তে পারেন। কারণ, এটা নমনীয় নয়। তবে ঠিক মতো ছুড়তে পারলে এই জ্যাভলিন অনেক বেশি দূরত্ব যাওয়ার ক্ষমতা রাখে। এর আগে নীরজ ব্যবহার করতেন ‘নেমেথ’ বলে অন্য এক ধরনের জ্যাভলিন। সেই জ্যাভলিন কিছুটা নমনীয়, ফলে হাওয়ার ধাক্কায় দিক পরিবর্তনের একটা আশঙ্কা থাকত। এই বছরের মার্চে নতুন জ্যাভলিনে ছুড়ে জাতীয় রেকর্ডও ভেঙেছিলেন নীরজ।
নতুন অস্ত্র হাতে তুলে নেওয়ার পাশাপাশি গুরুর পরামর্শে নিজের টেকনিকে দু’একটা ছোটখাটো পরিবর্তন করেছিলেন নীরজ বলে জানা যাচ্ছে। এর আগে নীরজের ‘থ্রো’ একটু বেশি বাঁ-দিক ঘেঁষে চলে যাচ্ছিল। যে কারণে জ্যাভলিন ছোড়ার মুহূর্তে কব্জি এবং সামনের পায়ের অবস্থানে সামান্য বদল এনেছিলেন তিনি। পাশাপাশি আরও একটা সমস্যায় পড়েছিলেন নীরজ। জ্যাভলিন ছোড়ার মুহূর্তে তাঁর সামনের হাঁটু একটু বেঁকে যাচ্ছিল, যে কারণে জোরটা সে ভাবে পাচ্ছিলেন না। তাই নজর দিয়েছিলেন হাঁটু ‘ব্লক’ করার দিকে। অর্থাৎ, ছোড়ার মুহূর্তে সামনের পা সোজা থাকবে।
একজন জ্যাভলিন থ্রোয়ারের মধ্যে বেশ কিছু অ্যাথলিটের গুণ থাকতে হয়। নীরজের কোচ মনে করেন, তাঁর ছাত্রের মধ্যে সে রকম গুণ বেশ কয়েকটা আছে। যেমন, দ্রুত ছুটতে পারেন। লাফাতে পারেন। ওজন তুলতে পারেন। এবং জিমন্যাস্টদের মতো নমনীয় শরীরের অধিকারীও তিনি। টোকিয়োয় বার্তোনিজ় সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘‘নীরজ খুব ভাল স্প্রিন্টার। শুরুতে ওর মতো গতি খুব কম জ্যাভলিন থ্রোয়ারের আছে। ওই গতির সাহায্যে থ্রোয়ের সময় শক্তিটা পায় নীরজ। নমনীয় শরীর হওয়াতে ওর খুব সুবিধে হয়ে গিয়েছে। জিমন্যাস্টদের মতোই শরীরের ভারসাম্যটা খুব ভাল ধরে
রাখতে পারে।’’
এই বিশেষজ্ঞকে এখন ভারতীয় ক্রীড়ামহলে ডাকা হচ্ছে ‘কিং ক্লাউস’ বলে। এ দিন তিনি ভারতীয় অ্যাথলেটিক্স সংস্থার টুইটারে তুলে ধরা এক ভিডিয়োয় বলেছেন, ‘‘প্রচণ্ড আনন্দ হচ্ছে। নীরজ শুধু পদকই পায়নি, একেবারে সোনা জিতে নিয়েছে। আর দেখিয়ে দিয়েছে, বিশ্বের সেরা জ্যাভলিন থ্রোয়ার এই মুহূর্তে কে। নীরজের এই কৃতিত্ব নিঃসন্দেহে খুশি করেছে অ্যাথলেটিক্সের সঙ্গে জড়িত সবাইকে। এবং,
ভারতের মানুষকেও।’’
টোকিয়ো অলিম্পিক্সে সোনা জেতার পরে নীরজ তাঁর পরবর্তী লক্ষ্যও ঠিক করে ফেলেছেন। জানিয়েছন, এ বার তিনি ৯০ মিটারের উপরে জ্যাভলিন ছুড়তে চান। ‘কিং ক্লাউস’ আর ‘ভালহালা’র সাহায্যে এখন কত দ্রুত এই লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যেতে পারেন নীরজ, দেখার।-
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy