প্রথম দুটো প্রস্তুতি ‘থ্রো’-এর পরে একটা জিনিস বুঝতে পেরেছিলেন নীরজ চোপড়া। খুব উঁচুতে জ্যাভলিনটা ছুড়লে, সেটা হয়তো বেশি দূরে যাবে না। কারণ, যেখানে এই জ্যাভলিন প্রতিযোগিতা হচ্ছে, সেটা অনেকটা ঘেরা। একে প্রচণ্ড গরম, তার উপরে হাওয়ার বেগও কিছুটা অন্য রকম। এই ব্যাপারটা মাথায় রেখে টেকনিকে সামান্য একটু বদল করেন নীরজ।
জ্যাভলিনটা আর তিন তলা বাড়ির উচ্চতায় না ছুড়ে, একটু নিচু করে ছোড়েন। কারণ নীরজ বুঝেছিলেন, উপরের দিকে হাওয়াটা যত বেশি, নীচের দিকে ততটাই কম। যে কারণে হাওয়ার বাধা অতিক্রম করতে একটু নিচু করেই ছুড়তে হবে জ্যাভলিনটা।
নীরজের হাত থেকে বিদ্যুতের মতো বেরিয়ে গিয়ে জ্যাভলিনটা গেঁথে যায় অনেকটাই দূরে। একটু পরেই স্কোরবোর্ডে ভেসে উঠল সেই দূরত্বটা। ৮৬.৬৫। ওই একটা থ্রোতেই ফাইনালের ছাড়পত্র আদায় করে নিলেন ভারতীয় অ্যাথলিট। সোনা জয়ের প্রধান দাবিদার, জার্মানির ইয়োহানেস ফেটা ছোড়েন ৮৫.৬৪ মিটার। তিন নম্বরে রয়েছেন পাকিস্তানের আর্শাদ নাদিম (৮৫.১৬ মিটার)।
এটা যদি ফাইনাল হত, তা হলে বুধবারই নীরজের গলায় ঝুলত সোনার পদক। নীরজের এই কীর্তি ইতিমধ্যেই ভারতীয় ক্রীড়া ইতিহাসে জায়গা করে নিয়েছে। এই প্রথম কোনও ভারতীয় ক্রীড়াবিদ জ্যাভলিনের ফাইনালে উঠলেন। প্রাথমিক পর্বে সব মিলিয়ে শীর্ষে থাকাটাও নজিরবিহীন। এর পরে শনিবার ফাইনালে আবার লড়াই যোগ্যতা অর্জন পর্বের প্রথম ১২ জনের মধ্যে।
হরিয়ানার ছোট্ট একটা গ্রাম থেকে উঠে আসা ২৩ বছর বয়সি নীরজ অ্যাথলেটিক্সে আসেন একটু রোগা হওয়ার জন্য। কারণ ছোট থেকে কিছুটা মোটাসোটাই ছিলেন তিনি। আজ সেই নীরজ দাঁড়িয়ে অ্যাথলেটিক্স থেকে ভারতের পদক জয়ের স্বপ্নপূরণ
করার সামনে।
যোগ্যতা অর্জন পর্বে সবাইকে ছাপিয়ে গেলেও নীরজ কিন্তু সন্তুষ্ট হতে পারছেন না। সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে তিনি বলেছেন, ‘‘ফাইনাল অন্য রকমের হবে। প্রথম থ্রো-টা ঠিকঠাকই হয়েছে। কিন্তু ফাইনালে আরও উন্নতি করতে হবে।’’ এ দিনের পারফরম্যান্স নিয়ে নীরজের মন্তব্য, ‘‘এটাই আমার প্রথম অলিম্পিক্স। এ দিন প্রস্তুতিতে আমার থ্রো নিয়ে একটু সমস্যা হচ্ছিল। কিন্তু যোগ্যতা অর্জন পর্বে থ্রো যে রকম চেয়েছিলাম, সে রকম ছুড়তে পেরেছি।’’ যোগ করেন, ‘‘আমার থ্রোয়ের উপরে আরও নজর দিতে হবে। আরও ভাল স্কোর করতে হবে।’’ মোট ৩২ জন প্রতিযোগীর মধ্যে নীরজ শেষ করেন এক নম্বরে।
অলিম্পিক্সে নামার কিছু দিন আগে কনুইয়ে অস্ত্রোপচার হয় নীরজের। যে কারণে বেশ কিছু প্রতিযোগিতায় নামতে পারেননি। এর পরে করোনা অতিমারির কারণে ধাক্কা খায় প্রস্তুতি পর্বও। নীরজ বলেছেন, ‘‘গত বছরটা খুব কঠিন গিয়েছে। আমরা অলিম্পিক্সের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। তার পরে অতিমারির কারণে সব কিছু থেমে যায়। একটু দুঃখ তো পেয়েছিলামই। কিন্তু ট্রেনিং শুরু করি। প্রত্যেকটা দিন ট্রেনিং চলছিল। ব্যাপারটা খুব সহজ ছিল না।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘এর পরে জাপান যখন জানিয়ে দিল, অলিম্পিক্স হবে, তখন মানসিক প্রস্তুতি নিতে শুরু করে দিই।’’
ফাইনালে জার্মানির চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে নীরজকে। ৯০ মিটারের বেশি জ্যাভলিন ছোড়ার নজির আছে ফেটার। নীরজ তা ভালই জানেন। যে কারণে প্রস্তুতিতে কোনও ফাঁক রাখতে চান না। বলছেন, ‘‘ফাইনালের অনুভূতিটা অন্য রকম। আমরা সবাই শারীরিক ভাবে তৈরি। ফাইনালে মানসিক ভাবেও আমাদের সেরা জায়গায় থাকতে হবে।’’
নীরজের এই কৃতিত্বের পরে গণমাধ্যমে একের পর এক অভিনন্দন-বার্তা ভেসে আসছে। বীরেন্দ্র সহবাগ থেকে ভিভিএস লক্ষ্মণ, সবাই মুগ্ধ এই তরুণ অ্যাথলিটের কৃতিত্বে। নীরজের অবশ্য একটা আক্ষেপ রয়ে গিয়েছে। জাপানের আবহাওয়ার সঙ্গে মানাতে গিয়ে তাঁর শখের লম্বা চুল কেটে ফেলতে হয়েছে। টোকিয়োয় উপস্থিত সাংবাদিকদের মজা করে সে কথা জানিয়েওছেন নীরজ!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy