Advertisement
২৮ নভেম্বর ২০২৪

বিদেশেও এই ভারতের উপর বাজি ধরব

বিরাট কোহালিদের দেখে মনে হচ্ছে, এত দিন যে ফাঁকফোকরগুলো টিমে ছিল, সেগুলো ক্রমশ ভরাট হচ্ছে। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজ জয়, তার পর এ দিন ২-০ এগিয়ে যাওয়া। অনেকে বলবেন, এটা ঘরের মাঠে পারফরম্যান্স। এখানে জয় দিয়ে কী প্রমাণ হয়?

দীপ দাশগুপ্ত
শেষ আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০১৬ ০৩:০৩
Share: Save:

বিরাট কোহালিদের দেখে মনে হচ্ছে, এত দিন যে ফাঁকফোকরগুলো টিমে ছিল, সেগুলো ক্রমশ ভরাট হচ্ছে। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজ জয়, তার পর এ দিন ২-০ এগিয়ে যাওয়া। অনেকে বলবেন, এটা ঘরের মাঠে পারফরম্যান্স। এখানে জয় দিয়ে কী প্রমাণ হয়? তাঁদের বলব, যে কোনও টিমের ‘ভাল টিম’ হয়ে ওঠার প্রথম ধাপ, ঘরের মাঠে অপ্রতিরোধ্য থাকা। ঘরের মাঠকে নিজেদের দুর্গ করে তোলা। ঘরের মাঠে টিমের উপর অনেক বেশি চাপ থাকে। সেই চাপটা নিয়ে বিরাটরা শুধু জেতেইনি, কর্তৃত্ব রেখে জিতেছে। সিরিজটাও মনে হচ্ছে বিরাটদেরই হবে। কতটা সহজে হবে, সেটাই দেখার।

হালফিলে ভারতের সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিল ম্যাচ জেতানো বোলারের অভাব। বিশেষ করে বিদেশে। বিদেশে আমাদের জন্য গ্রিন টপ তৈরি করা হত কারণ ওরা আমাদের বোলারদের ভয় পেত না। ওরা জানত যে, আমাদের পেস আক্রমণ ওদের পিচে সুবিধে করতে পারবে না। এই যে আমরা ইংল্যান্ডকে টার্নার দিচ্ছি, কারণ ওদের স্পিনারদের আমরা ভয় করি না। এ বার কিন্তু ইংল্যান্ড সফরে গেলে ওরা আমাদের পেস-সহায়ক পিচ দেওয়ার আগে দু’বার ভাববে।

যার জন্য শামি আর উমেশকে ধন্যবাদ দেওয়া উচিত। ওরা দুর্দান্ত বল করছে। প্রায় প্রতিটা ইনিংসে উইকেট নিচ্ছে। ভাল লাইন-লেংথে রাখছে। ভারতের শেষ বড় বিদেশ সফর বলতে ২০১৪-’১৫ অস্ট্রেলিয়া। সেখানে আমাদের বোলিংয়ের সমস্যা ছিল, শৃঙ্খলার অভাব। সেই শৃঙ্খলাটা এই টিমে ভীষণ ভাবে দেখতে পাচ্ছি। এক লাইনে একটা নির্দিষ্ট জায়গায় বল করে যাচ্ছে শামিরা। রাজকোটে ব্যাটিং ট্র্যাকেও ওরা ভাল করেছে। অ্যান্ডারসন, ব্রডের মতো একশোটা টেস্ট খেলা পেসারদের রীতিমতো সমানে-সমানে টক্কর দিচ্ছে।

আর একটা জিনিস খুব গুরুত্বপূর্ণ। বোলিংয়ের প্রতিটা পজিশনের জন্য এখন লড়াই হবে। পেস বিভাগ এখন শামি-উমেশের দায়িত্বে, ইশান্ত আর ভুবনেশ্বর সুযোগের অপেক্ষায় বসে। স্পিনে অমিত মিশ্র খেলছে না তো জয়ন্ত যাদব এসে দারুণ করে দিচ্ছে। জয়ন্ত আসার পর জাডেজার ব্যাটিংটা খুলে গিয়েছে। ওর হয়তো মনে হচ্ছে যে, ইংল্যান্ড টিমে এতজন বাঁ-হাতি। পরের টেস্টে যদি ভারত দু’জনই অফস্পিনার খেলিয়ে দেয়, তা হলে? তাই হয়তো ব্যাটিংয়ে আরও ফোকাস করছে জাডেজা। এই লড়াইটা টিমের উন্নতির জন্য খুব স্বাস্থ্যকর।

জয়ন্ত দারুণ আবিষ্কার। ঘরোয়া ক্রিকেটে গ্রিন টপে নিয়মিত উইকেট নিয়েছে এই অফস্পিনার। ওর ব্যাটিং দেখে মনে হবে বুঝি টপ অর্ডারের কেউ ব্যাট করছে। টেকনিক্যালি কমপ্যাক্ট ক্রিকেটার। অশ্বিনের ব্যাটিং নিয়ে নতুন কী বলব? সব মিলিয়ে লোয়ার অর্ডার দুর্দান্ত ফর্মে। যেটা খুব ভাল লক্ষণ। কারণ বিশ্ব ক্রিকেট যে ক’টা টিম শাসন করেছে, তাদের সবার লোয়ার অর্ডার খুব শক্তিশালী ছিল। অস্ট্রেলিয়া টিমে এক সময়কার গিলক্রিস্ট, ওয়ার্ন, গিলেসপি যেমন।

অধিনায়ক বিরাটও উন্নতি করছে। দরকারে ও যেমন নিষ্ঠুর, তেমন নিজের প্লেয়ারকে আগলে রাখতেও পারে। মঙ্গলবার যেমন ও বোলিং শুরু করাল এমন দু’জনকে দিয়ে, যারা সেই ইনিংসে উইকেট পায়নি। যেন ওদের বুঝিয়ে দেওয়া যে, তোমাদের উপর আমার আস্থা আছে। এই ব্যাপারটা আমার দারুণ লেগেছে।

এ সবের মধ্যে হতাশা বলতে কোহালি-পূজারা বাদে ভারতীয় ব্যাটিং। বিশেষত ওপেনাররা। তবে পার্থিবের ব্যাটিং দেখে মনে হচ্ছে বিদেশে ওকে দ্বিতীয় বা তৃতীয় ওপেনার হিসেবে ভাবা যেতে পারে। ও পেসটা ভাল খেলে। আমাদের বেঞ্চ স্ট্রেংথ কী, তার জলজ্যান্ত প্রমাণও।

এই টিমটা তরুণ। এরা সবাই অন্তত তিন-চার বছর একসঙ্গে খেলবে। যেটা খুব জরুরি। মনে রাখবেন, সৌরভ-সচিন-কুম্বলেদের ফ্যাব ফাইভ ব্যক্তিগত ভাবে উজ্জ্বল হলেও ওরা একসঙ্গে টানা খেলা শুরু করার পরই বিদেশে ভারতের সাফল্য শুরু। আমার বিশ্বাস, এই টিমটা যত বেশি একসঙ্গে খেলবে, তত ভাল করবে। এদের সেরা পারফরম্যান্স আমরা এখনও দেখিনি। আর হ্যাঁ, বিদেশেও এদের উপর বাজি ধরা যেতে পারে।

অন্য বিষয়গুলি:

Overseas performance Perform Better Team India
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy