প্রশ্ন: মাত্র উনত্রিশ রানে টিমের অর্ধেক উইকেট পড়ে যাওয়ার পরেও কি ভাবতে পেরেছিলেন এই ম্যাচ আপনারা জিতে যাবেন?
ডে’ভিলিয়ার্স: একদম সত্যি বললে, এখনও স্তম্ভিত হয়ে আছি! ভাবতে পারিনি ওই জায়গা থেকে জেতা সম্ভব। আমি এক দিকে দাঁড়িয়ে আর অন্য দিকে উইকেট পড়ছে। আমাদের তখন পাঁচ বা ছ’উইকেট পড়ে গিয়েছে আর আমি মনে মনে ভাবছি, এই রে, আজ সত্যিই বিপদে পড়লাম। সামনে তখন একটা বিশাল পাহাড় যেটা আমাদের পেরোতে হবে। ও দিকে ধবল কুলকার্নি তখন একটা স্বপ্নের স্পেল করছে। ও তো প্রায় একার হাতেই গুজরাতকে জিতিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু ওই যে বলে না, ক্রিকেটে শেষ বলটা খেলা না হওয়া পর্যন্ত ম্যাচ শেষ হয় না।
প্র: তার মানে আপনার মাথায় একটা গেমপ্ল্যান ছিল?
ডে’ভিলিয়ার্স: সেই সময় মনে হচ্ছিল আমাদের প্রায় সব আশাই শেষ। তবু ঠিক করি প্রতিটা বল দেখে খেলব এবং চাপ না নিয়ে খেলাটা উপভোগ করব। মূল টার্গেটটা আমি নিজের মতো কয়েকটা ছোট ছোট টার্গেটে ভেঙে নিয়ে এগনোর চেষ্টা করেছিলাম। আর মনের মধ্যে কোথাও একটা বিশ্বাস কাজ করছিল যে পারব। আসলে এই ধরনের ম্যাচ বুঝিয়ে দেয় ক্রিকেট ঠিক কতটা মজার খেলা। টিমকে ফাইনালে তোলায় একটা ভূমিকা নিতে পেরে আমি অসম্ভব খুশি। আমরা সত্যিই খুব ভাল খেলেছি।
প্র: এই টুর্নামেন্টে সেঞ্চুরি করেছেন, বিরাট কোহালির সঙ্গে আপনিও স্বপ্নের ফর্মে। এই মরসুমের সব ক’টা ইনিংসের মধ্যে মঙ্গলবারের ইনিংসটাকে কোথায় রাখবেন?
ডে’ভিলিয়ার্স: আমার ব্যাট থেকে বেরনো যে কোনও সেঞ্চুরির চেয়ে এই ইনিংসটা কয়েক লক্ষ গুণ এগিয়ে থাকবে। আমি কখনও পরিসংখ্যান ব্যাপারটাকে গুরুত্ব দিই না। দেখতে যাই না ক’টা সেঞ্চুরি বা ক’টা ডবল সেঞ্চুরি রয়েছে। এ সব আমার ননসেন্স বলে মনে হয়। আমার কাছে শুধু একটা ব্যাপারই গুরুত্বপূর্ণ। টিমকে জেতানো। আর এই ইনিংসটা তার অন্যতম সেরা উদাহরণ হয়ে থাকবে। এর আগে এমন চাপের মুখে কত বার যে ব্যর্থ হয়ে ফিরেছি! কিন্তু এখানে আমার অভিজ্ঞতাটা দারুণ কাজে দিল। তার সঙ্গে চিন্নাস্বামীর বিরামহীন সমর্থনের কথাও বলব। সমর্থকরা এই ভাবে পিছনে থাকলে লড়াইটা সহজ হয়ে যায়। আর ইকবাল আবদুল্লাকে ভুলবেন না। দারুণ খেলেছে ও। আমাদের বোলাররাও দুর্দান্ত বোলিং করেছে।
প্র: ইকবাল আবদুল্লার কথা বললেন। উনি তো এমন চাপের পরিস্থিতিতে ব্যাট করায় মোটেই অভ্যস্ত নন। আপনি কী বলেছিলেন ওনাকে? এক সঙ্গে ব্যাট করার অভিজ্ঞতাটা কেমন?
ডে’ভিলিয়ার্স: কার সঙ্গে ব্যাট করছি সেটা কখনও আমার কাছে বড় নয়। আসল হল উল্টো দিকের ব্যাটসম্যানের সঙ্গে বোঝাপড়া তৈরি করে নিয়ে একটা জমাট পার্টনারশিপ গড়ার চেষ্টা করা। ইকবাল যে মুহূর্তে ক্রিজে এল দেখলাম ছেলেটার চোখমুখে একটা শান্ত আত্মবিশ্বাস। চোখ কান খোলা রেখে ব্যাট করল। আর আমি ওকে যা যা বলছিলাম, সেটা খুব ভাল করে বুঝে নিয়ে আমাকে দারুণ সাপোর্ট করার পাশাপাশি নিজেও অসাধারণ একটা ইনিংস খেলল। আমি তো বলব এমন চাপের পরিস্থিতি ও আগেও সামলেছে। ভারতের ঘরোয়া ক্রিকেটের খবর আমার তেমন রাখা হয় না ঠিকই কিন্তু জোর দিয়ে বলতে পারি, ইকবাল সেই প্লেয়ারদের একজন যে টিমের জন্য শেষ পর্যন্ত লড়াই করায় বিশ্বাসী।
প্র: ঠিক কোন সময়টায় সিদ্ধান্ত নিলেন যে এ বার আমি চালাব?
ডে’ভিলিয়ার্স: ডোয়েন স্মিথের ওই ওভারটায়। পনেরো নম্বর। বিরাট একটা বার্তা পাঠিয়েছিল যে আবহাওয়া খারাপ হচ্ছে, বৃষ্টি নামতে পারে। আমরা যেন রান রেট বাড়াতে শুরু করি। তাই ঠিক করি স্মিথের ওভারটায় চালিয়ে দেখব কোথায় পৌঁছনো যায়। খুব ভাল কানেক্ট করলাম ওই ওভারে, গ্যালারির সমর্থনটাও পেলাম। তার পর আর ফিরে তাকাতে হয়নি। আসলে ১৫৯ রান তাড়া করে জিততে পারব না, এমন নেতিবাচক চিন্তা আমাদের টিম এক মুহূর্তের জন্য মনে আসতে দেয়নি। শুধু ফাইনাল নয়, শুরুর দিকে যখন পর পর হারছিলাম, লোকে বলা শুরু করেছিল আমরা নক আউটেই উঠতে পারব না, তখনও কিন্তু এক মুহূর্তের জন্য আমরা লড়াই ছাড়িনি। আর এখন প্রথম টিম হিসাবে ফাইনালে উঠতে পেরে আমরা অসম্ভব খুশি। আশা করছি রবিবারও দর্শক আর সমর্থকদের ভরপুর আনন্দ দিতে পারব।
প্র: আপনি ছ’বছর হল আরসিবিতে খেলছেন। এ বার ফাইনালে উঠতে পারা কতটা তৃপ্তির?
ডে’ভিলিয়ার্স: অসম্ভব তৃপ্তির। এই ফাইনালটা এখন আমাদের কাছে সবকিছু। এত বছর ধরে লোকে বলেছে আমরা নিজেদের ক্ষমতা অনুযায়ী খেলতে পারছি না, আন্ডারপারফর্ম করছি। আমি কিন্তু বরাবর বিশ্বাস করেছি আমাদের টিমটা অসাধারণ। দারুণ সব চরিত্র রয়েছে টিমে, আমাদের টিম স্পিরিট দুর্দান্ত। তা সত্ত্বেও এত দিন যে আমরা পারিনি, সেটাকে স্রেফ দুর্ভাগ্য ছাড়া আর কিছু নয়। প্রতি বার আমরা দারুণ এগোতে এগোতে একদম ভুল সময়ে গিয়ে হোঁচট খেয়ে মুখ থুবড়ে পড়ছিলাম। তবে এ বছর সবকিছু ঠিক হয়েছে। শুরুতে হোঁচট খেলেও আসল সময় আমাদের টিম সেরা ছন্দে পৌঁছে গিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy