সম্মান: ইস্টবেঙ্গল দিবসের মঞ্চে ‘ভারত গৌরব’ ধনরাজ পিল্লাই ও জীবনকৃতি প্রাপক সুভাষ ভৌমিক। মঙ্গলবার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
যে রাজ্য থেকে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তিনি ‘ভারতগৌরব’ হয়ে ফিরছেন, সেখানে হকি প্রায় উঠে যাওয়ার মুখে।
যে শহর থেকে তিনি পুরস্কার নিতে এসেছিলেন, সেখানে এখনও হকি খেলা হয় ঘাসের মাঠে।
যে মঞ্চে নীল ব্লেজার পরে তিনি দাঁড়ানোর পর গ্যালারি উত্তাল হল, সেই আটানব্বই ছোঁয়া ইস্টবেঙ্গলেরও তো এখন আর হকি টিম নেই।
সে জন্যই কি পুরস্কার নেওয়ার পর ভারতের সর্বকালের অন্যতম সেরা হকি তারকা ধনরাজ পিল্লাই কিছুটা নস্টালজিক? চার বার অলিম্পিক্স, চার-চারটে বিশ্বকাপ খেলেছেন। তাঁর নেতৃত্বে এশিয়ান গেমস, এশীয় কাপে সোনা জিতেছে ভারত। তাঁর বিখ্যাত স্টিকের জাদুতে হয়েছে ৮৭ গোল। পদ্মশ্রী, অর্জুন, খেলরত্ন—বাদ নেই কিছুই। তবুও। হ্যাঁ, তবুও তাঁর মুখ থেকে বেরোল, ‘‘আমার কাছে ইস্টবেঙ্গলের দেওয়া এই ভারতগৌরব আসলে ভারতরত্ন!’’ কাঁপছেন তিনি, আনন্দে। ‘‘ইস্টবেঙ্গল দেশের অন্যতম সেরা ক্লাব। খেলোয়াড় জীবনে ইস্টবেঙ্গলকে দেখে কিলার ইনস্টিংক্ট পেতাম। সেই ক্লাব থেকে এই সম্মান পেয়ে আমি আপ্লুত,’’ বলছিলেন ধনরাজ। ভাইচুং ভুটিয়া, চিমা ওকোরির কথা বললেন। মনে হল, তৈরি হয়েই এসেছেন। কিন্তু একান্তে যখন ধনরাজকে প্রশ্ন করা হল, যে-শহরে হকি এখন অন্ত্যজ, সেখান থেকেই ভারতগৌরব হলেন, কেমন লাগছে ব্যাপারটা? বেশ বিব্রত তিনি, ‘‘ভাল হকি খেলার জন্য অস্ট্রোটার্ফ দরকার। সাইতে একটা আছে। কিন্তু ময়দানেও দরকার। তা হলে হকিটা বাঁচবে।’’
ইস্টবেঙ্গলের প্রতিষ্ঠা দিবসের অনুষ্ঠান। নেতাজি ইন্ডোরে মঞ্চের আলো থেকে গ্যালারি লাল-হলুদে মাখামাখি। চারিদিকে নানা স্বপ্নের ব্যানার টাঙানো। চোখ টানল একটা ব্যানার, সেখানে লেখা ‘নিউ কোচ, নিউ টিম, নিউ সিজন, নিউ ড্রিম’। চোদ্দো বছর ধরে আই লিগ না পাওয়ার আক্ষেপের প্রতিফলন যেন। বহু আগে দু’বার যিনি সেই স্বপ্ন পূরণ করেছিলেন সেই সুভাষ ভৌমিক যখন জীবনকৃতি সম্মান নিতে উঠলেন, তখন উচ্ছ্বাসের ঢেউ উঠবে স্বাভাবিক। উঠলও। কিন্তু সেটা যে থামতেই চায় না। সুভাষ নাটকীয় ভাবে জোড়হাত করে উঠে দাঁড়ালেন। হাত নাড়লেন। যা ফেরাল ২০০৩-এর আসিয়ান কাপ জয়ের স্মৃতি। মাঠের কঠোর-কঠিন সুভাষও তো আপ্লুত! ‘‘আমি অর্জুন হইনি। তাতে দুঃখ নেই। কিন্তু সবাই যখন ইস্টবেঙ্গল থেকে জীবনকৃতি হত, তখন সামান্য একটু কষ্ট তো হতই। এটা পেয়ে ইস্টবেঙ্গলে আমার বৃত্তটা যেন সম্পূর্ণ হল। আমি বোহেমিয়ান মানুষ, তাই মাঝেমধ্যে হয়তো ছিটকে গিয়েছি। কিন্তু আমি তো ইস্টবেঙ্গলেরই,’’ তাঁকে নিয়ে পুরনো বিতর্ক যেন উস্কে দিলেন। তবে তিনি সুভাষ—একটা গর্জন তো উঠবেই। ‘‘আই লিগটা এ বার চাই গুরবিন্দর, অর্ণব। কোনও অজুহাত দিলে হবে না। পেতেই হবে।’’
ধনরাজ, সুভাষের উচ্ছ্বাসের মাঝে ফুটবল দ্রোণাচার্যকে যেন কিছুটা শান্ত লাগল এ দিন। নিজের অতি শৃঙ্খলিত জীবনের সঙ্গেই যা মানায়—সৈয়দ নইমুদ্দিন সেটাই করলেন জীবনকৃতি পুরস্কার নিয়ে। ‘‘জ্যোতিষ গুহ, মাদার ক্লাব ইস্টবেঙ্গল, গ্রেট ক্লাব,’’ বলেই বসে পড়েন এশিয়ান গেমসের ব্রোঞ্জজয়ী ভারতীয় দলের অধিনায়ক। যাঁর ঝলমলে ফুটবল জীবন সম্পর্কে এই প্রজন্মের অনেকেরই ধারণা নেই। সেটা মালুম হয় একটু পরে। নইমের চেয়ে একশোগুণ উচ্ছ্বাস বেশি ওঠে গুরবিন্দর সিংহের জন্য! সোনার বুট পেলেন বর্ষসেরা হওয়ার জন্য। পাগড়ি বেঁধে-আসা পঞ্জাব তনয়ের মুখ দিয়ে বেরোল, ‘‘আয়েগা, ইস বার আয়েগা আই লিগ!’’
আই লিগ আসবে কি না, সময়ই বলবে। তবে ট্রফি না পেলে কিন্তু এমন ঝলমলে অনুষ্ঠানও জমে না। ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস সেই সুরটা তুলে দিলেন এই বলে যে, ‘‘আই লিগ চাই। বাংলার ফুটবলকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব নিতে হবে ইস্টবেঙ্গলকে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy