প্রতীকী ছবি
করোনা অতিমারির জেরে খেলায় নানা ধরনের পরিবর্তনের হাওয়া বইছে। ক্রিকেটে সব চেয়ে চর্চার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে থুতু ও লালার ব্যবহার বন্ধ করা। এমনকি, অনিল কুম্বলের নেতৃত্বাধীন আইসিসি ক্রিকেট কমিটি পর্যন্ত সুপারিশ করেছে, থুতুর ব্যবহার বন্ধ করা হোক। সেই সঙ্গে আইসিসি একগুচ্ছ নির্দেশিকা জারি করেছে সব দেশের জন্য।
আইসিসি বলে দিয়েছে, ক্রিকেটারদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে দেড় মিটারের দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। কিটব্যাগে সঙ্গী হবে স্যানিটাইজ়ার। এমনকি, ওভার শুরু করার আগে আম্পায়ারের হাতে তুলে দেওয়া যাবে না টুপি অথবা সোয়েটার। তার মানে কোনও ক্রিকেটারও বোলারের থেকে টুপি নিয়ে আম্পায়ারের দিকে এগিয়ে দিতে পারবেন না। ট্রেনিং চলাকালীন কোনও ক্রিকেটার শৌচালয় ব্যবহার করতে পারবেন না বলেও সুপারিশ করেছে আইসিসি। সিরিজ শুরু হওয়ার আগে ও পরে ১৪ দিনের নিভৃতবাসে থাকতে হবে। সঙ্গে নিয়মিত হারে গোটা দলের মধ্যে করে যেতে হবে করোনার পরীক্ষা।
আইসিসি-র এমন সব নির্দেশিকা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়ে গিয়েছে ক্রিকেটমহলে। প্রশ্ন উঠছে, দূরত্ব বিধি খেলার মধ্যে মানতে গেলে স্লিপ কর্ডনের কী হবে? দেড় মিটারের ব্যবধান অন্যান্য ফিল্ডিং জায়গার ক্ষেত্রে মানা গেলেও স্লিপ সাজাতে গিয়ে কী করে তা মানা সম্ভব?
আরও পড়ুন: বোলারদের মুখাবরণের প্রস্তাব দিলেন মিসবা
অতীতের তারকারা অনেকেই বিস্মিত আইসিসি-র নির্দেশিকা দেখে। প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক দিলীপ বেঙ্গসরকর আনন্দবাজারকে বললেন, ‘‘একেবারেই অমানবিক ও অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে আইসিসি। এ ভাবে আর যাই হোক, ক্রিকেট হয় না। তবে হ্যাঁ, ওভার শুরু করার আগে বোলাররা বাউন্ডারি লাইনের বাইরে নিজেদের টুপি রেখে আসতে পারে।’’ তবে বেঙ্গসরকর যোগ করছেন, ‘‘কিন্তু ট্রেনিংয়ের মাঝে কারও শৌচালয়ে যাওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হলে সে কী করবে? অসুস্থ হয়ে পড়বে তো। ফিল্ডিংয়ের সময়েই বা কী ভাবে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখবে? প্রথম স্লিপের পরে কি চতুর্থ স্লিপ দাঁড় করাতে হবে? নাকি সিলি পয়েন্ট, ফরোয়ার্ড শর্ট লেগ ছাড়াই বল করবে স্পিনারেরা?’’
প্রাক্তন পেসার চেতন শর্মার কথায়, ‘‘বোলারদের পক্ষে বার বার হাত স্যানিটাইজ় করা সম্ভব নয়। হাত শুকোতে কিছুটা সময় তো লাগেই। বল করার সময় গ্রিপ করতে সমস্যা হবে। তা ছাড়া স্লিপ কর্ডন ছাড়া একজন পেসার নিশ্চয়ই বল করতে পারবে না বা চাইবেও না।’’
প্রাক্তন ভারতীয় বাঁ-হাতি স্পিনার মনিন্দর সিংহ নতুন সব উপদেশ শুনে অবাক। বলছিলেন, ‘‘শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে কোনও রকমের টিমগেম হয় না। তা হলে স্পিনাররাই বা অ্যারাউন্ড দ্য উইকেট (আম্পায়ার ও স্টাম্পের মধ্যে দিয়ে দৌড়ে আসা) বল করবে কী করে? ভাবুন তো, এই পরিস্থিতিতে যদি মুথাইয়া মুরলীধরনকে বল করতে হত, বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যানদের বিরুদ্ধে ও তো উইকেটই পেত না।’’
ভারতীয় ক্রিকেটারদের সংস্থার প্রেসিডেন্ট অশোক মলহোত্র বুঝতেই পারছেন না, এই সব নির্দেশিকা কী করে মেনে চলা সম্ভব হবে। অশোক বলছিলেন, ‘‘ধরুন ১৪ দিনের নিভৃতবাসে ক্রিকেটারেরা থাকলেন। নিভৃতবাসের শেষে দেখা গেল, একজন করোনায় আক্রান্ত। তা হলে সেই দলটাই তো বাতিল হয়ে যাবে। তার উপরে আন্তর্জাতিক দলগুলোর ড্রেসিংরুমে প্রায় পঁচিশজন থাকে। কী করে তাদের মধ্যে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব হবে? করোনা নিয়ে আতঙ্ক থাকলে তা হলে খেলা শুরু করার দরকারটাই বা কী আছে?’’
শ্রীলঙ্কার প্রাক্তন কোচ এবং সদ্য ভারতে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে কোচিং করার জন্য চুক্তিবদ্ধ ডাভ হোয়াটমোর বলছেন, ‘‘আমার মনে হয়, টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের কথা মাথায় রেখেই গঠন করা হয়েছে এই নিয়ম। কারণ, বুঝতে হবে সামনেই কিন্তু টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। টি-টোয়েন্টিতে বল থুতু দিয়ে পালিশ করার প্রয়োজন নেই। স্লিপের সে রকম প্রয়োজন নেই। সিলি পয়েন্ট, ফরোয়ার্ড শর্ট লেগ তো সামনে দাঁড়াবেই না। টেস্টে এ ধরনের নিয়ম মানা সম্ভব নয়।’’
বিতর্কের মধ্যে পড়ে থুতুর ব্যবহার নিয়ে কিছুটা পিছু হটেছে আইসিসি। কুম্বলে বলেছেন, এই নিষেধাজ্ঞা সাময়িক। এখন দেখার, জারি করা নির্দেশিকা নিয়ে চাপে পড়ে নিয়ামক সংস্থা তা নিয়ে সুর পাল্টায় কি না।
আরও পড়ুন: বিরাট কোহালি না বাবর আজম, কে এগিয়ে? মিসবা বললেন...
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy