Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Pink Ball Test

ইশান্তদের বিরুদ্ধে একা লড়ছেন মুশফিকুর, ভারতের জয় কেবল সময়ের অপেক্ষা

দলের ভাঙনের মুখে মুশফিকুর রহিম একা লড়ে গেলেন। দেখিয়ে দিলেন ভিন্ন চরিত্রের গোলাপি বল যতই বোলারদের সাহায্য করুক না কেন, ক্রিকেটে দক্ষতাই শেষ কথা।

দ্বিতীয় ইনিংসে আগুন ধরান ইশান্ত শর্মা। ছবি— পিটিআই।

দ্বিতীয় ইনিংসে আগুন ধরান ইশান্ত শর্মা। ছবি— পিটিআই।

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০১৯ ১২:৫৯
Share: Save:

শনিবারই কি গোলাপি বলে দিন-রাতের টেস্ট শেষ হয়ে যাবে? দু’ দিনেই কি দাঁড়ি পড়বে ইডেন টেস্টে? যে ভাবে দ্বিতীয় ইনিংসে ১৩ রানের মধ্যে চার উইকেট পড়ে গিয়েছিল বাংলাদেশের, তাতে এমন সম্ভাবনা যথেষ্টই ছিল।

দলের ভাঙনের মুখে মুশফিকুর রহিম একা লড়ে গেলেন। দেখিয়ে দিলেন ভিন্ন চরিত্রের গোলাপি বল যতই বোলারদের সাহায্য করুক না কেন, ক্রিকেটে দক্ষতাই শেষ কথা। স্কিল থাকলে প্রতিকূল পরিস্থিতি থেকে ঠিকই বেরিয়ে আসা যায়। মুশফিকুর তো সেই কাজটাই করলেন দ্বিতীয় ইনিংসে। ভারতীয় বোলাররা বিশেষ করে ইশান্ত শর্মা ইডেনের পিচে শনিবার যখন আগুন ঝরাচ্ছেন, মুশফিকুর দাঁতে দাঁত চেপে লড়ে গেলেন। বাংলাদেশের অন্যতম সিনিয়র ব্যাটসম্যান দিনের শেষে ৫৯ রানে ক্রিজে রয়েছেন। তিনি ক্রিজে থাকা মানেই রবিবার ভারতের জয় পিছিয়ে যাবে। এ কথা বলাই বাহুল্য। তাঁকে অবশ্য টেস্টের তৃতীয় দিনে অসম এক লড়াই লড়তে হবে। মুশফিককে সাহায্য করার মতো কেউ নেই এই মুহূর্তে। শনিবার খেলা শেষ হওয়ার আগে তাইজুল ইসলাম স্লিপে দাঁড়ানো অজিঙ্কে রাহানেকে যেন ক্যাচ প্র্যাকটিস প্যাভিলিয়নে ফিরলেন। দ্বিতীয় দিনের শেষে বাংলাদেশের রান ৬ উইকেটে ১৫২। প্রথম ইনিংসের রান দ্বিতীয় ইনিংসে ছাপিয়ে গেল বাংলাদেশ। তা হলে কি মুশফিকরা প্রথম ইনিংসের থেকে দ্বিতীয় ইনিংসে ভাল খেলে? অনেক আগে তো ভারতের ক্ষেত্রেও এমনটাই বলা হত।

দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে প্রথম ওভারেই শাদমান ইসলামকে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসে পাঁচ উইকেট নিয়েছিলেন ইশান্ত শর্মা। শনিবার বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংসে নিলেন চার-চারটি উইকেট। ম্যাচে এখনও পর্যন্ত ন’টি উইকেটের মালিক তিনি। বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংসের প্রথম ওভারেই আঘাত হানেন ইশান্ত। এলবিডব্লিউ করেন বাঁ-হাতি ওপেনার শাদমানকে। পরের ওভারেই ফেরান বাংলাদেশ অধিনায়ক মোমিনুল হককে। অফ স্টাম্পের বাইরে সুইং ভাঙার মুখে মোমিনুলের খোঁচা সহজেই ধরে ফেলেন উইকেটকিপার ঋদ্ধিমান সাহা। এর পরই ইশান্তের বাউন্সার মাথায় লাগে মহম্মদ মিঠুনের। দৌড়ে আসেন ফিজিও।

মিঠুন অবশ্য পরে ফের ব্যাট করেন। কিন্তু চা বিরতির পরই ফিরলেন। উমেশ যাদবের বলে শর্ট মিড উইকেটে সহজ ক্যাচ দেন মিঠুন (৬)। ইশান্তের তৃতীয় শিকার হলেন ওপেনার ইমরুল কায়েস (৫)। মুশিফকুর ও মাহমুদুল্লাহ বাংলাদেশের ইনিংস গোছানোর কাজ করেন। ৩৯ রানে হ্যামস্ট্রিংয়ে টান পড়ায় অবসৃত হন মাহমুদুল্লাহ। তার পরে লড়াইটা হল মুশফিকুর বনাম ভারতের পেস অ্যাটাক।

আরও পড়ুন: আর এক জন চোট পেলে জল নিয়ে যাওয়ার লোকও থাকবে না বাংলাদেশ ড্রেসিং রুমে!​

আরও পড়ুন: টেস্ট ক্রিকেটের পক্ষে দুর্দান্ত, ইডেনে গোলাপি বলের টেস্টে ক্রিকেটপ্রেমীদের উৎসাহে আপ্লুত সৌরভ​

তার আগে ৩৪৭ রানে ইনিংসের সমাপ্তি ঘোষণা করেছিল ভারত। নয় উইকেট পড়ে গিয়েছিল ভারতের। সেই অবস্থাতেই অধিনায়ক বিরাট কোহালি ডেকে নিয়েছিলেন দুই ব্যাটসম্যান ঋদ্ধিমান সাহা (১৭) ও মহম্মদ শামিকে (১০)। ২৪১ রানের লিড নিয়েছিল টিম ইন্ডিয়া।

শনিবার লাঞ্চের পরের ঘণ্টায় দুর্দান্ত ভাবে লড়াইয়ে ফিরেছিল বাংলাদেশ। ইডেনে গোলাপি বলের টেস্টে মোমিনুল হকের দলকে ম্যাচে ফিরিয়ে এনেছিলেন বোলাররা। লাঞ্চের সময় চার উইকেটে ২৮৯ তুলেছিল ভারত। লাঞ্চের পরের ঘণ্টায় পড়েছিল পাঁচ উইকেট। ৩৩১ রানে নয় উইকেট পড়ার পর ঋদ্ধি-শামি যোগ করেছিলেন ১৬ রান। তার পরই ইনিংসে সমাপ্তি ঘোষণার সিদ্ধান্ত নেন কোহালি। এদিন ইডেনের বাদশা অবশ্যই বিরাট কোহালি। গোলাপি বলের টেস্টে ভারতের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে সেঞ্চুরি করলেন তিনি। তাইজুল ইসলামের বলে স্কোয়ার লেগে ঠেলে দুই রান নিয়ে টেস্ট কেরিয়ারের ২৭তম সেঞ্চুরি পূর্ণ করলেন তিনি। শতরানে পৌঁছতে নিলেন ১৫৯ বল। মারলেন এক ডজন বাউন্ডারি। অধিনায়ক হিসেবে এটা তাঁর ২০তম সেঞ্চুরি।

বিরাট কোহালি কি ভারতের প্রথম গোলাপি টেস্টে সেঞ্চুরি করতে পারবেন? শনিবাসরীয় সকালে ইডেনমুখো জনতার আগ্রহ ছিল এটাই। সেই আগ্রহ মেটাতে বেশিক্ষণ সময় নিলেন না তিনি। এদিন তিনি শুরু করেছিলেন দাপটে। যে ভঙ্গিতে শুক্রবার মুগ্ধ করেছিলেন ক্রিকেটপ্রেমীদের, সেই আত্মবিশ্বাস সঙ্গী হয়েছিল তাঁর।

রাহানেও স্ট্রেট ড্রাইভে চার মেরে বুঝিয়েছিলেন বড় রানের জন্য তৈরি তিনি। কিন্তু বেশিক্ষণ স্থায়ী হননি। ৫১ রানে বাঁ-হাতি স্পিনার তাইজুল ইসলামের বলে কাট মারতে গিয়ে পয়েন্টে এবাদত হোসেনকে ক্যাচ দিলেন তিনি। অন্যদিকে, বিরাট অবশ্য স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে এগিয়ে চললেন। সেঞ্চুরির পর আবু জায়েদের ওভারে প্রথম চার বলে বাউন্ডারি মেরে ইডেনকে মন্ত্রমুগ্ধ করেন তিনি। সেই ওভারে তিনি নেন ১৯ রান। জমাট দেখাচ্ছিল তাঁকে। আউট হবেন বলে মনেই হচ্ছিল না তাঁকে।

শেষ পর্যন্ত লাঞ্চের পর এবাদত হোসেনের বলে ডিপ স্কোয়ার লেগে তাইজুল ইসলামের অবিশ্বাস্য ক্যাচে ফেরেন কোহালি। ১৯৪ বলে ১৩৬ করেন বিরাট। তাঁর ইনিংসে ছিল ১৮টি বাউন্ডারি। তার আগে আবু জায়েদের বলে বোল্ড হয়েছিলেন রবীন্দ্র জাডেজা (১২)।পঞ্চম উইকেটে কোহালি-জাডেজা যোগ করেছিলেন ৫৩ রান। আর ষষ্ঠ উইকেটে কোহালি-ঋদ্ধিমান সাহা যোগ করেছিলেন ১৯ রান।

ইডেনে ঘণ্টা বাজিয়ে খেলা শুরুর সঙ্কেত বিশ্বনাথন আনন্দ ও ম্যাগনাস কার্লসেনের। নিজস্ব চিত্র।

শুক্রবার ৫৯ রানে অপরাজিত ছিলেন ভারত অধিনায়ক। কোহালি খেলছিলেন রীতিমতো দাপটে। গোলাপি বলকে পোষ মানানোর ভঙ্গিতে। তাঁর সঙ্গে ২৩ রানে অপরাজিত ছিলেন সহ-অধিনায়ক অজিঙ্ক রাহানে। দু’জনে অবিচ্ছিন্ন চতুর্থ উইকেটে শুক্রবার যোগ করেছিলেন ৩৭ রান। ৪৬ ওভারে তিন উইকেটে ১৭৪ তুলেছিল ভারত। লিড ছিল ৬৮ রানের। সেই জায়গা থেকে ম্যাচ এখন ঝুঁকে রয়েছে ভারতের ক্যাম্পের দিকে। রবিবার ভারতের বোলাররা কত দ্রুত মুশফিকুরকে ফেরাতে পারেন সেটাই দেখার।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy