প্রশংসা: ভারতীয় পেসারদের ধারাবাহিকতায় মুগ্ধ হরভজন।
ক্রিকেটবিশ্বের কাছে তাঁকে তারকা হওয়ার সুযোগ দিয়েছিল ইডেন। ২০০১ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে সেই হ্যাটট্রিক এখনও ভোলেননি ইডেনের সমর্থকেরা। ভারত-বাংলাদেশ ম্যাচের প্রথম দিন জায়ান্ট স্ক্রিনে তাঁর হ্যাটট্রিকের ভিডিয়ো চালাতেই গ্যালারি চেঁচিয়ে উঠেছিল,
‘‘ভাজ্জি.... ভাজ্জি...!’’
১৮ বছর হয়ে গিয়েছে, এখনও সেই দিনের কথা ভোলেননি হরভজন সিংহ। সেই যুগে টেস্ট ম্যাচেও ইডেনের দর্শকাসনে তিল ধরানোর জায়গা থাকত না। কিন্তু টি-টোয়েন্টি শুরু হওয়ার পরে টেস্ট ম্যাচের জনপ্রিয়তা কমে গিয়েছে। মাঠে দর্শক আসাও কমে গিয়েছিল। গ্যালারির একাধিক আসন ফাঁকা। ভাল ইনিংসের কদর করার মতোও সমর্থক দেখা যেত না কোথাও। ইডেন ফের ব্যতিক্রম। তাঁর প্রিয় মাঠকে ফের ভর্তি হতে দেখে প্রচণ্ড উত্তেজিত হরভজন। রবিবার ম্যাচের পরে তারকা অফস্পিনারের প্রতিক্রিয়া, ‘‘প্রায় দশ বছর পরে টেস্ট ম্যাচে মাঠ ভর্তি দেখলাম। ক্রিকেটারদের সঙ্গে সমর্থকদেরও এটা বড় প্রাপ্তি। প্রত্যেকেই চায় তাদের খেলা দেখতে মাঠে সমর্থকেরা ভিড় করুন। ইডেনে দিনরাতের টেস্ট সেই সমর্থন
ফিরিয়ে দিয়েছে।’’
দিনরাতের ম্যাচকে টেস্টের ভবিষ্যৎ কি বলা যায়? হরভজনের উত্তর, ‘‘বলা যেতেই পারে। প্রতিটি সিরিজে অন্তত এক থেকে দু’টো দিনরাতের টেস্ট হলে খারাপ কী! অফিস শেষ করে সমর্থকেরা মাঠে আসছেন। টেস্টের সমর্থন ফেরানোর জন্য সব চেয়ে বেশি কৃতিত্ব দেব বোর্ড প্রেসিডেন্ট সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে। দাদা উদ্যোগী না-হলে ভারতে কবে দিনরাতের টেস্ট হত, তা বলা যাচ্ছে না।’’
ভারতীয় টেস্ট দলের নতুন ভাবে উত্থান শুরু হয়েছিল গত বছর দক্ষিণ আফ্রিকা সফর থেকে। সেই সিরিজে হারলেও বিপক্ষ শিবিরে ত্রাস সৃষ্টি করেছিলেন ভারতীয় পেসারেরা। তার ফল পাওয়া যায় অস্ট্রেলিয়া সফরে। টেস্ট সিরিজ ২-১ জিতে ফিরেছিল ভারত। ওয়েস্ট ইন্ডিজে গিয়ে জেসন হোল্ডারদের দলকে উড়িয়ে দেওয়ার পরে ঘরের মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকাকে দাঁড়াতেই দেয়নি বিরাট-বাহিনী। এ বার প্রত্যাশা মতো বাংলাদেশকেও বুঝিয়ে দিয়েছে, তারা কতটা ভয়ঙ্কর। হরভজন মনে করেন, শুধুমাত্র পেসারদের উত্থানেই বিরাট-বাহিনীকে ছোঁয়া যাচ্ছে না। তাঁর কথায়, ‘‘কখনও দেখিনি দেশের মাটিতে স্পিনারের পরিবর্তে তিনজন পেসার নিয়ে নামছে ভারত। সেই ভাবনা-চিন্তা করারও সুযোগ ছিল না আগে। আমাদের হাতে এ রকম পেসার ছিল না যারা প্রত্যেকটি বল ১৪০ কিমি/প্রতি ঘণ্টায় করে যেতে পারে। এই পেস বোলিং বিভাগের উত্থানের জন্যই বিশ্বের যে কোনও দলকে টেক্কা দিতে পারবে ভারত।’’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘‘শামি, ইশান্ত ও উমেশকে পাওয়া না গেলেও ভুবনেশ্বর কুমার, যশপ্রীত বুমরা অথবা দীপক চাহারদের পরিবর্ত হিসেবে ব্যবহার করা যেতেই পারে।’’
পেসাররা সফল হলেও স্পিনারেরা সে রকম সাফল্য পাচ্ছেন না গোলাপি বলে। বিশেষ করে ফিঙ্গার স্পিনারেরা (আঙুলের সাহায্য যাঁরা বল ঘোরায়)। বলে রংয়ের অতিরিক্ত স্তর থাকার জন্যই কি গ্রিপ করতে সমস্যা হচ্ছে? হরভজনের ব্যাখ্যা, ‘‘গোলাপি বলে নিয়মিত খেললে এই সমস্যা হবে না। বেশ কয়েকটি প্রতিযোগিতার কথা বলতে পারি যেখানে পেসারদের চেয়ে স্পিনারেরা বেশি উইকেট পেয়েছে। তারা যদিও বেশির ভাগই রিস্টস্পিনার (কব্জির সাহায্যে বল ঘোরায়)। ব্যাটসম্যানেরা বলেছে রিস্টস্পিনারদের গুগলি অথবা ফ্লিপার বুঝতে অসুবিধা হয় গোলাপি বলে। অফস্পিনারেরাও এ রকম কিছু বৈচিত্র আনলে অবশ্যই সফল হবে।’’
ম্যাচ আগেই শেষ হয়ে যাওয়ায় সন্ধ্যায় ইডেনের ড্রেসিংরুমের সামনে টেনিস বলে ক্রিকেট খেলতে শুরু করলেন হরভজন। সম্প্রচারকারী চ্যানেলের এক সঞ্চালককে শেন ওয়ার্নের অ্যাকশনে লেগস্পিন করেও দেখালেন ভাজ্জি। তাঁর দর্শক ভি ভি এস লক্ষ্মণ। চেয়ারে বসে কফিতে চুমুক দিয়ে প্রাক্তন সতীর্থের খুনসুটি উপভোগ করছিলেন। বেশিক্ষণ বসে থাকতে পারলেন না। নিজেই ভাজ্জিকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলেন, ‘‘আউট করকে দিখা!’’ ঠিক ১৮ বছর আগে এ রকমই এক টেস্ট ম্যাচের তৃতীয় দিনে অস্ট্রেলীয় বোলিং আক্রমণকেও হয়তো একই কথা বলেছিলেন ভারতীয় ক্রিকেটের ‘ভেরি ভেরি স্পেশ্যাল’ তারকা। ইডেনে দর্শক গ্যালারি ভরায়। ম্যাচ শেষে মাঠ ফাঁকা হয়ে যায়। কিন্তু স্মৃতি কখনও মুছে ফেলা যায় না। সাক্ষী হয়ে থাকে সেই ক্লাব হাউস, প্যাভিলিয়ন ও ফাঁকা দর্শকাসন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy