Advertisement
১৯ নভেম্বর ২০২৪

নতুন গটজে তৈরি করছে অক্লান্ত ফুটবনট

ক্রিকেটারদের নেটে বোলিং মেশিনে প্র্যাকটিস দেখেছেন তো? বোলিং মেশিনে বলটা ফিট করে দেওয়া হল। তার পর সুইচ টিপলেই ৮০-৯০ মাইল গতিতে বলটা ছুটে যায় ব্যাটসম্যানের দিকে।

কৌশিক দাশ
ফ্রাঙ্কফুর্ট শেষ আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০৩:৩৯
Share: Save:

ক্রিকেটারদের নেটে বোলিং মেশিনে প্র্যাকটিস দেখেছেন তো? বোলিং মেশিনে বলটা ফিট করে দেওয়া হল। তার পর সুইচ টিপলেই ৮০-৯০ মাইল গতিতে বলটা ছুটে যায় ব্যাটসম্যানের দিকে।

এ বার আর একটা দৃশ্য কল্পনা করুন। ব্যাটসম্যান ক্রিজে দাঁড়িয়ে। চার কোনায় চারটে এ রকম বোলিং মেশিন। এবং মিনিটখানেকের তফাতে একটার পর একটা বল বেরিয়ে আসছে। শেষ মুহূর্তে ব্যাটসম্যানকে বুঝতে হবে বলটা কোন দিক থেকে আসছে এবং সেকেন্ডের ভগ্নাংশে সে দিকে ঘুরে শট খেলতে হবে।

অসম্ভব লাগছে, না? এ রকম করা যায় নাকি?

দরজাটা খুলে দিলাম। বারান্দা দিয়ে কয়েক পা এগনো যাক। সামনে একটা নেট ঘেরা জায়গা। মাঝখানে একজন দাঁড়িয়ে। মিউজিক চলছে। সরু সরু টিউবলাইট চার দিকে। লাল আলো জ্বলছে। হঠাৎ একটা কোনা থেকে গোলার মতো ফুটবলটা বেরিয়ে এল। মাঝখানের লোকটা সঙ্গে সঙ্গে ঘুরে গিয়ে বলটা রিসিভ করে নির্দিষ্ট জায়গায় (যেখানকার আলো সবুজ) শট মেরে ঢুকিয়ে দিল। সেকেন্ডের ভগ্নাংশে অন্য দিক থেকে আর একটা বল। আরও একটা। আরও। চার কোনা থেকে গোলার মতো বলগুলো আসছে। ২০ মিনিটে দুশোটা। গতি ৮০ থেকে ১০০ মাইল।

স্বাগত। আপনি এসে পড়েছেন ‘ফুটবনট’-এর দুনিয়ায়। আপনি এসে পড়েছেন বরুসিয়া ডর্টমুন্ড ইয়ুথ অ্যাকাডেমিতে। আপনি এসে পড়েছেন মারিও গটজেদের তৈরির কারখানায়।

বিশ্বকাপ ফাইনালে গোলটা করার আগেও মারিও গটজে পরিচিত নাম ছিল। কিন্তু বিশ্বকাপ এনে দেওয়ার পর উত্তরণ ঘটেছে মহাতারকাদের দুনিয়ায়। প্রতিভার বিচ্ছুরণ ছোটবেলা থেকেই ছিল? কতটা ঘষামাজা করতে হয়েছে?

ন’বছর বয়স থেকে অ্যাকাডেমির ছাত্র। আর প্রথম দিন থেকে গটজেকে যিনি দেখছেন, সেই অ্যাকাডেমির ডিরেক্টর লারস রিকেন বলছিলেন, ‘‘শুরুতেই বুঝে গিয়েছিলাম ছেলেটার মধ্যে প্রতিভা আছে। একটা আলাদা খিদে। কিছু করে দেখানোর বাড়তি তাগিদ। এগুলোই তো সাধারণের থেকে আলাদা করে দেয় গটজেদের।’’ গটজেকে তো বলা হয় জার্মানির মেসি। শুরু থেকেই কি ড্রিবলিং করার ক্ষমতা ছিল তাঁর মধ্যে? অ্যাকাডেমির দায়িত্ব নেওয়ার আগে চুটিয়ে ডর্টমুন্ডে খেলা লারসেন বলছিলেন, ‘‘অবশ্যই। পাস দেওয়ার ক্ষমতা, ফুটবল সেন্স সব ছিল। তবে প্রতিভা থাকলেই বড় ফুটবলার হওয়া যায় না। ঠিক মতো পালিশ করতে হয় হিরেকে। আমরা সেই কাজটাই করেছি।’’

চোখধাঁধানো পরিকাঠামো। গোটা পনেরো মাঠ। কৃত্রিমও রয়েছে। আর স্পেস এজ টেকনোলজি হিসেবে তো রয়েইছে ‘ফুটবনট’। যা ডর্টমুন্ডের প্রোটোটাইপ। প্রায় ২০ লাখ পাউন্ড খরচ করে যা বানানো হয়েছে।

জার্মান ফুটবলে অ্যাকাডেমির মহিমা কতটা, বোঝা যায় বুন্দেশলিগা সিইও ক্রিশ্চিয়ান সেইফার্টের কথায়। ফ্রাঙ্কফুর্টে বুন্দেশলিগা হেডকোয়ার্টারে বসে বলছিলেন, ‘‘অ্যাকাডেমিটাই আমাদের ফুটবলকে বদলে দিয়েছে। এই তো আমাদের বিশ্বজয়ী টিমের ২৩জনের মধ্যে ২১জন অ্যাকাডেমির প্রোডাক্ট।’’ ইয়ুথ অ্যাকাডেমিগুলোর মধ্যে এক নম্বর অবশ্যই ডর্টমুন্ড। যেখানে আছে সায়েন্স ফিকশন থেকে উঠে আসা মেশিন ফুটবনট।

এই মেশিন থেকে কী উপকার পেতে পারেন ফুটবলাররা? ফুটবনটের দায়িত্বে থাকা ম্যানেজার মার্ক পুলিসিক বলছিলেন, ‘‘ক্ষিপ্রতা বাড়ে, অ্যান্টিসিপেশন বাড়ে, পেরিফেরাল ভিশন ভাল হয়। চট করে বুঝে নিতে পারে বলটা কোন দিক থেকে আসছে। মাথার চারদিকে চোখ থাকতে হয় ফুটবলারদের।’’ কিন্তু এই ফুটবনট নামটা কেন? ‘‘হয়তো একটু রোবটিক ব্যাপার আছে বলে,’’ জবাব পুলিসিকের।

ঠিকই বলেছেন। জার্মান ফুটবলার্স প্রোডাকশনের থিমটাই যেন তাই। যন্ত্রের মতো নিখুঁত, যন্ত্রের মতো পরিশ্রমী। আরও মারিও গটজে কিন্তু আসছে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy