তপন পাণিগ্রাহীর হাতে পুরস্কার তুলে দিচ্ছেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। ছবি: সংগৃহীত।
গ্রামের ছোট্ট পুকুরে সাঁতার শেখার অভিজ্ঞতা আর একরাশ স্বপ্নকে সম্বল করেই প্রায় পঞ্চাশ বছর আগে দেশ জয়ের যাত্রা শুরু করেছিলেন পূর্ব মেদিনীপুরের মহিষাদলের বাসিন্দা তপন পাণিগ্রাহী। এরপর দীর্ঘ লড়াই সংগ্রামের স্বীকৃতি মিলল শনিবার বিকেল নাগাদ। সাঁতার প্রশিক্ষণে অভাবনীয় অবদানের পুরষ্কার স্বরূপ রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ তপনের হাতে তুলে দিলেন প্রশিক্ষকের সর্বোচ্চ সম্মান দ্রোনাচার্য পুরষ্কার। শনিবার বিকেল সাড়ে ৪টে নাগাদ দিল্লিতে রাষ্ট্রপতি ভবনে এই পুরস্কার তপনের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।
সাঁতারু তৈরির কারিগর তপনের হাত ধরে প্রায় ৬০ জন আন্তর্জাতিক মানের সাঁতারু ও ২৫০ জন জাতীয় সাঁতারু তৈরি হয়েছেন। তাঁরই প্রশিক্ষণে ২০১৮ সালের ৯ অক্টোবর ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তায় তৃতীয় প্যারা এশিয়ান গেমসে ৫০ মিটার বাটারফ্লাইয়ে সোনা জেতেন সুয়স যাদব। ভারতের সাঁতারের ইতিহাসে এই অভাবনীয় সাফল্যের জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তাঁদের পুরষ্কৃতও করেন।
দীর্ঘ ৩০ বছর মহারাষ্ট্রের সাইয়ে প্রশিক্ষন দিয়েছেন তপন। তবে তাঁর জন্ম মহিষাদলে। বর্ধিষ্ণু পরিবারে বেড়ে ওঠা তপন ছোট থেকেই সাঁতার ভালবাসতেন। সাঁতার নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। এ নিয়ে ডিগ্রিও আছে তাঁর।
প্রথমে যদিও তমলুক কলেজে বায়োসায়েন্স নিয়ে পড়া শুরু করেন। শরীর শিক্ষা নিয়ে স্নাতক স্তরে পড়াশোনা তারপর। ১৯৮২ সালে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার ১নং কলেজ গোয়ালিয়রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউটে শরীর শিক্ষা নিয়ে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর পাশ করেন। পরে ইউজিসি টপার হিসেবে ১৮০০ টাকার ভাতা পেয়ে সাঁতার ও যোগ ব্যায়াম নিয়েও আলাদা ভাবে মাস্টার্স করেন তপন। মাঝে হাঙ্গেরির বুদাপেষ্ট ও জার্মানি থেকে ডিগ্রি লাভ। স্পোর্টস সায়েন্স নিয়ে গোয়ালিয়র থেকে এমফিল এবং ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট থেকে পিএইচডির ডিগ্রি।
১৯৯১ সালে গুজরাটের গাঁধীনগরে সাইয়ের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে কাজে যোগদান করেন তপন। সেখান থেকে যান মহারাষ্ট্রের পুণেতে।
সেই তপন শনিবার যখন রাষ্ট্রপতির হাত থেকে পুরষ্কৃত হচ্ছেন তখন মহিষাদল জুড়ে উন্মাদনা। গোটা শহর ব্যানার পোষ্টারে মুড়ে ফেলা হয়েছে। বিরাট এলইডি স্ক্রিনে পুরষ্কার প্রদান অনুষ্ঠানের সরাসরি সম্প্রচারও করা হয় মহিষাদল সুইমিং ক্লাবের উদ্যোগে। তপন ওই সংস্থার সভাপতি। তা ছাড়া যে পুকুরে সাঁতার কেটে তপন তাঁর কেরিয়ার শুরু করেছিলেন মহিসাদল রাজ কলেজের সেই পুকুরটিকেও দীপাবলীর আঙ্গিকে প্রদীপ দিয়ে সাজানো হয়।
পুরস্কার হাতে পাওয়ার পর দিল্লী থেকে টেলিফোনে আনন্দবাজার অনলাইনকে দেওয়া এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে তপন জানান, ‘‘আমি সারাজীবন সাঁতারের উন্নতির জন্য কাজ করে যেতে চাই। পাশাপাশি এবার বাংলার সাঁতারের উন্নয়নেও কাজ করতে আগ্রহী। মহিসাদল সুইমিং ক্লাবের মাধ্যমে বাংলার প্রত্যন্ত সাঁতারুদের তুলে আনাই আমার লক্ষ্য। এই রাজ্যে প্রতিভার অভাব নেই। রাজ্য সরকার যদি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয় তাহলে অদূর ভবিষ্যতে বাংলা থেকেও সাঁতারে অলিম্পিয়ানরা উঠে আসবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy