একাগ্র: অলিম্পিক্সের লক্ষ্যে তৈরি হচ্ছেন সুতীর্থা। নিজস্ব চিত্র
প্রিয় বিরিয়ানি ও মিষ্টি গত দেড় মাসে ছুঁয়ে দেখেননি। বন্ধুদের বলে দিয়েছেন, অগস্ট মাসের পরে ফোন করতে। সঙ্গে দিবারাত্র পরিশ্রম। সকাল ছ’টা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত।
এটাই টোকিয়ো অলিম্পিক্সে টেবল টেনিসে যোগদানের ছাড়পত্রপ্রাপ্ত বঙ্গকন্যা সুতীর্থা মুখোপাধ্যায়ের এখনকার দিনলিপি। নৈহাটির মেয়ে দক্ষিণ কলকাতায় বসেই তৈরি হচ্ছেন জীবনের প্রথম অলিম্পিক্সের জন্য। যেখানে তিনি সিঙ্গলসে খেলবেন। সুতীর্থার কথায়, ‘‘অলিম্পিক্স যাওয়া তো ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন। তাই সব আনন্দ আমি ত্যাগ করতে রাজি।’’ আত্মবিশ্বাসী মেজাজে যোগ করেন, ‘‘গত দেড় মাসে পাঁচ কিলো ওজন কমিয়েছি। আরও আট কিলো কমাতে হবে। তা হলে বিশ্বের যে কোনও খেলোয়াড়কে আমি হারাতে পারব। এই আস্থা রয়েছে।’’
জীবনে সাফল্য ও ব্যর্থতা দু’টোই দেখেছেন সুতীর্থা। পাঁচ বছর আগে বয়স ভাঁড়ানোর দায়ে নির্বাসিত হয়েছিলেন। সেই মেয়েই এ বার অলিম্পিক্সে বাঙালির (জাতীয় স্তরে যদিও খেলেন হরিয়ানার হয়ে) প্রতিনিধি।
এ বারের অলিম্পিক্সে এখনও পর্যন্ত তিন জন বাঙালি ক্রীড়াবিদ যোগ্যতা অর্জন করেছেন। তাঁদের মধ্যে তিরন্দাজ অতনু দাস অনুশীলনে মগ্ন পুণের শিবিরে। জিমন্যাস্ট প্রণতি নায়েক অনুশীলন করবেন সাইয়ে। সুতীর্থা সেই সুযোগ পাননি। তিনি এই লকডাউনের মধ্যেই টোকিয়ো অলিম্পিক্সের মহড়া দিচ্ছেন দক্ষিণ কলকাতা আর নিউটাউনে।
তাঁর কথায়, ‘‘মার্চ মাসে দোহায় যোগ্যতা অর্জনের পরে পরিকল্পনা ছিল পর্তুগাল, স্পেন কিংবা চিনে গিয়ে অনুশীলন করার। কারণ আমার চেয়ে বিশ্ব ক্রমপর্যায়ে এগিয়ে থাকা বেশ কিছু খেলোয়াড় এই তিন দেশে রয়েছেন। তাই বিদেশে গিয়ে প্রস্তুতি ও ম্যাচের মধ্যে থাকলে উপকার হত। কিন্তু অতিমারি সেই পরিকল্পনা ভেস্তে দিয়েছে।’’
তাই বিকল্প হিসেবে কলকাতাকেই প্রস্তুতির জন্য বেছে নিয়েছেন সুতীর্থা। সকালে নিউটাউন যাচ্ছেন ফিটনেস অনুশীলন করতে। সেখানে প্রাক্তন জাতীয় চ্যাম্পিয়ন অ্যাথলিট অর্ঘ্য মজুমদার ও ইস্টবেঙ্গলের হয়ে আসিয়ান কাপ জয়ী দলের সদস্য সুভাষ চক্রবর্তীর তত্বাবধানে চলছে অনুশীলন। সুতীর্থা বলছেন, ‘‘দু’জনে আমার ক্ষিপ্রতা, গতি, দম বাড়ানো ও ওজন কমানোর দুর্দান্ত ট্রেনিং করাচ্ছেন। উপরি হিসেবে দুই স্যারের কাছ থেকে অ্যাথলেটিক্স ও ফুটবল মাঠে প্রতিকূলতার মধ্যেও সাফল্য ছিনিয়ে আনার গল্প শুনে মনের জোর বাড়ছে।’’
অতিমারির মধ্যে ভয় করছে না? ২৬ বছর বয়সি ভারতের এই প্রথম সারির টেবল টেনিস খেলোয়াড় বলে দেন, ‘‘জাতীয় সংস্থা যে সব সুরক্ষা বিধি-সহ অনুশীলন করতে বলেছে, তা মেনেই প্রস্তুত হচ্ছি। নেতিবাচক চিন্তাভাবনা একদম করছি না। প্রতিষেধক নিয়েছি তো।’’
আর খেলার যাবতীয় প্রস্তুতি চলছে ভারতীয় দলে তাঁর কোচ সৌম্যদীপ রায় ও তাঁর অলিম্পিয়ান স্ত্রী পৌলমীর হাত ধরে। রোজ সকাল বেলায় ছ’টায় শুরু হয় সুতীর্থার অনুশীলন। নিউটাউন গেলে সেখানে কাটাচ্ছেন দু’ঘণ্টা। না হলে সৌম্যদীপের অ্যাকাডেমিতেই অনলাইনে চলে ফিটনেস ট্রেনিং। লকডাউনে সেটাই বেশি করতে হচ্ছে। সাড়ে আটটা থেকে বেলা এগারোটা পর্যন্ত টানা টেবল টেনিস বোর্ডেই চলে অনুশীলন কোচ দম্পতির কাছে। বিকেল চারটে থেকে রাত আটটা একই অনুশীলন। মাঝে দুপুর তিনটে থেকে এক ঘণ্টা চলে ধ্যান-সহ মানসিক জোর বাড়ানোর প্রস্তুতি বা কোমর ও তলপেটের পেশিশক্তি বাড়ানোর ব্যায়াম।
সুতীর্থার সঙ্গে টোকিয়োয় যাবেন সৌম্যদীপও। ছাত্রী সম্পর্কে তিনি বলছেন, ‘‘ওর ব্যাকহ্যান্ডকে বিশ্বের প্রথম ২০-র মধ্যে থাকা খেলোয়াড়ও ভয় পায়। রক্ষণাত্মক থেকে হঠাৎ আগ্রাসী হয়ে ওঠে। যা অনেকেই বুঝতে পারে না। ফিটনেস বাড়ানোর পাশাপাশি কিছু ভুলত্রুটি শোধরানোর কাজ চলছে। যে মেয়ে পাঁচ বছরে বিশ্ব ক্রমপর্যায়ে ৬০০ থেকে ৯৫-এ চলে আসতে পারে, সে কিন্তু অলিম্পিক্সেও তৈরি হয়ে গেলে ভাল ফল করতেই পারে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy