ভারতীয় ক্রিকেটারদের উচ্ছ্বাস। ছবি: এক্স।
আবার একটা বিশ্বকাপের ফাইনালে ভারত।
মাঝে মাত্র সাত মাস, বা আরও ভাল করে বলতে গেলে, ২২৬ দিনের ব্যবধান। গত বছরের ১৫ নভেম্বর এক দিনের বিশ্বকাপে নিউ জ়িল্যান্ডকে হারিয়ে ফাইনালে উঠেছিল ভারত। এ বার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে ফাইনালে উঠল তারা। ফাইনালে সে বার অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরেছিল ভারত। শনিবার রোহিত শর্মাদের সামনে দক্ষিণ আফ্রিকা। ১৩ বছর পর আবার একটি বিশ্বকাপ জেতার সুযোগ ভারতের সামনে। ফাইনালে সেই দু’টি দলই উঠেছে, যারা চলতি প্রতিযোগিতায় একটিও ম্যাচে হারেনি।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের মাটিতে দেখা গেল ‘লগান ২’। ২০০১ সালে আমির খান অভিনীত সিনেমা ‘লগান’-এ দেখা গিয়েছিল, কর মকুব করার জন্য বাজি রেখে গোটা গ্রামকে নিয়ে ইংরেজদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন ভুবন। ক্রিকেট খেলার সঙ্গে গ্রামের কারও কোনও পরিচিতি না থাকলেও মনের জোর, সংকল্প এবং জেদে খেলার সৃষ্টিকর্তাদেরই হারিয়ে দিয়েছিলেন। ভারতের সামনে শনিবার এই ইংল্যান্ড দলও ছিল ধারেভারে শক্তিশালী। একে তো গত বারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপজয়ী, তার পর দলে ভর্তি দেশ-বিদেশের টি-টোয়েন্টি লিগে খেলা ক্রিকেটারেরা। তাদের বিরুদ্ধে মনের জেদ এবং ইচ্ছাশক্তিকে সম্বল করে জিতল রোহিত শর্মার ভারত।
পুনরাবৃত্তি হল না দেড় বছর আগের তিক্ত স্মৃতিরও। অ্যাডিলেডে সেই ম্যাচে রোহিতের ভারতকে ১০ উইকেটে গুঁড়িয়ে দিয়ে ফাইনালে উঠেছিল ইংরেজরা। সেই দলের আট জন ক্রিকেটার এই ম্যাচেও প্রথম একাদশে ছিলেন। কিন্তু এ বার ফলাফল বদলাতে পারলেন না তাঁরা। সেই ম্যাচের নায়ক জস বাটলার এ দিন খলনায়ক হলেন। টসে জিতেও আগে বল করার সিদ্ধান্ত ব্যুমেরাং হয়ে গেল। আগে ব্যাট করে ১৭১/৭ তুলেছিল ভারত। জবাবে ইংল্যান্ড থেমে গেল ১০৩ রানে। ভারত জিতল ৬৮ রানে।
টসে আগে সমাজমাধ্যমে যে ছবি ভেসে আসছিল তা মোটেই আশাব্যাঞ্জক ছিল না। প্রায় প্রতিটিতেই দেখা যাচ্ছিল, অঝোরে বৃষ্টি পড়ছে। দীনেশ কার্তিক যে ভিডিয়ো এক্স হ্যান্ডলে (সাবেক টুইটারে) পোস্ট করেন তাতে দেখা যায় আউটফিল্ডে ভালই জল জমে রয়েছে। মাঝে বৃষ্টি থামে। আবার রাত ৮টার দিকে বৃষ্টি শুরু হয়। তবে ৮.৩০টা থেকে যে রকম রোদ উঠল, তাতে মনেই হল না আগে বৃষ্টি হয়েছে। আম্পায়ারেরা দেরি করেননি। ৮.৪৫-এ পিচ দেখার পাঁচ মিনিট পরেই টস হল। খেলাও শুরু হয়ে গেল ৯.১৫ মিনিটে।
টসের আগেই ধারাভাষ্যকারেরা বলছিলেন, কোনও অধিনায়কই জিততে চাইবেন না। বৃষ্টির কারণে দীর্ঘ সময় উইকেট ঢাকা থাকায় পিচ কেমন আচরণ করবে তা কেউই বুঝতে পারছিলেন না। তবে নিশ্চিত ভাবেই প্রথমে ব্যাট করা দলের সমস্যা বেশি হত। টসে হেরে রোহিত শর্মাদের সেই আগে ব্যাটই করতে হল। যদিও রোহিত স্বীকার করলেন, তাঁরা আগে ব্যাট করতেই চেয়েছিলেন।
প্রথম দু’ওভারে দু’টি চার মারার পর রোহিত বেশ চাপ তৈরি করেছিলেন ইংরেজ বোলারদের উপর। তৃতীয় ওভারে রিসি টপলিকে ছয় মেরে নিজেদের মনোভাব পরিষ্কার করে দেন বিরাট কোহলিও। কিন্তু চতুর্থ বলেই যে ও ভাবে আড়াআড়ি মারতে যাবেন কে জানত! টপলির বলের লাইন পুরোপুরি মিস্ করলেন তিনি। কোহলির মতো ব্যাটার এ ভাবে সোজা একটি বলে এই শট খেলতে যাবেন তা বিশ্বাস করা শক্ত। কোহলি কতটা খারাপ ফর্মের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন, তা স্পষ্ট হয়ে গেল এই শটেই। এই আউটের পর আবার প্রশ্ন উঠতে পারে তাঁকে ওপেনিংয়ে খেলানো উচিত হচ্ছে কি না।
তিনে নামা ঋষভ পন্থ চলতি প্রতিযোগিতায় দায়িত্বশীল ইনিংস খেলেছেন। কিন্তু এ দিন খারাপ ফর্ম তাড়া করল তাঁকেও। স্যাম কারেনের তৃতীয় বলেই আড়াআড়ি শট খেলতে গিয়ে মিড-অনে ক্যাচ তুলে দেন জনি বেয়ারস্টোর হাতে। পরিণত মানসিকতাই ছিল না তাঁর শটে। চার নম্বরে সূর্যকুমার যাদব বরং ধীরেসুস্থে খেলার দিকে মন দেন। মাঝে অষ্টম ওভারে ক্রিস জর্ডান পরিচিত ‘ল্যাপ শট’-এ একটি ছয় মারেন।
সপ্তম ওভার থেকেই ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পড়তে শুরু করেছিল। অষ্টম ওভার শেষ হওয়ার পরেই ঝেঁপে বৃষ্টি নামে গায়ানায়। প্রায় আধ ঘণ্টা মতো বৃষ্টি চলার পর আবার এমন কড়া রোদ ওঠে যে দেখে মনে হচ্ছিল আগে বৃষ্টিই হয়নি। ৭৫ মিনিট বন্ধ থাকার পর শুরু হয় ম্যাচ। সূর্যের সঙ্গে জুটি বেঁধে রোহিত খেলছিলেন ভালই। দু’জনের জুটিতে উঠে যায় ৫০ রান। রোহিত নিজেও অর্ধশতরান পূরণ করেন। কারেনের একটি ওভারে দু’টি ছয় এবং একটি চার মেরে ১৯ রান নেন সূর্যও।
পরের ওভারেই ছন্দপতন। কোহলির মতোই উইকেট পুরো ছেড়ে দিয়ে আড়াআড়ি খেলতে যান রোহিত। আদিল রশিদের গুগলির সামনে ঠকে যান তিনি। বল এসে মিডল স্টাম্প ভেঙে দেয়। কিছু ক্ষণ পরে ফেরেন সূর্যও। রোহিতের মতো তিনি অর্ধশতরান করতে পারেননি। জফ্রা আর্চারের স্লোয়ার বল তুলে দিয়েছিলেন। বাউন্ডারির ধারে ক্যাচ ধরেন ক্রিস জর্ডান।
মাঝের দিকে নেমে হার্দিক চালিয়ে খেলছিলেন। জর্ডানকে জোড়া ছক্কা মারেন ১৮তম ওভারে। হার্দিককে লোভ দেখিয়ে চতুর্থ বলটি ঠিক একই জায়গায় করেন জর্ডান। হার্দিক একই শট খেলেন। লং-অফে ধরা পড়েন কারেনের হাতে। শিবম দুবেকে এ দিন একটু দেরিতেই নামানো হয়েছিল। সেই সিদ্ধান্ত যথার্থ ছিল তা বোঝা গেল হার্দিক আউট হওয়ার পর। সাজঘর থেকে ২২ গজে শিবমের আসা-যাওয়ার মাঝে দু’মিনিটও লাগেনি। প্রথম বলেই খোঁচা দেন উইকেটকিপার বাটলারের হাতে। শেষ দিকে রবীন্দ্র জাডেজা এবং অক্ষর পটেলের সৌজন্যে ১৭১/৭ তোলে ভারত।
ইংল্যান্ডের ব্যাটিংয়ের সময় চিন্তা ছিল তাঁদের দুই ওপেনারকে নিয়ে। গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দুই ওপেনারই হারিয়ে দিয়েছিলেন ভারতকে। তাঁদের একজন, জস বাটলার এ দিনও দলে ছিলেন। শুরুটাও করেছিলেন আগ্রাসী ভঙ্গিতেই। তৃতীয় ওভারে আরশদীপ সিংহকে তিনটি চার মেরে ইংল্যান্ডের মনোভাব বুঝিয়ে দিয়েছিলেন। চতুর্থ ওভারের প্রথম বলেই বাটলার-কাঁটা উপড়ে নিলেন অক্ষর। প্রথম বলেই কাট করতে গিয়ে পন্থের হাতে ক্যাচ দিলেন বাটলার। পরের ওভারে বুমরা তুলে নিলেন সল্টকে। ষষ্ঠ ওভারে সেই অক্ষরই তুলে নেন জনি বেয়ারস্টো। পাওয়ার প্লে-র মধ্যে তিন উইকেট হারিয়ে বেকায়দায় পড়ে যায় ইংল্যান্ড।
অক্ষর সেখানেই থামতে চাননি। অষ্টম ওভারের প্রথম বলে তিনি তুলে নেন মইন আলিকে। ইংরেজ অলরাউন্ডারের প্যাডে বল লাগার পর কেন তিনি এগিয়ে এলেন জানা নেই। ক্রিজ়ে ফেরার আগেই পন্থ বল তুলে এক হাতে উইকেট ভেঙে দেন। স্পিনারদের উৎসবে কুলদীপ যাদবও বাদ যাননি। তিনি নবম ওভারের প্রথম বলে তুলে নেন স্যাম কারেনকে। ৪৯ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে তখন ইংরেজদের টলোমলো অবস্থা।
ইংরেজদের একমাত্র আশা বলতে ছিলেন হ্যারি ব্রুক। ১১তম ওভারের চতুর্থ বলে কুলদীপ যাদব তাঁকে তুলে নিতেই খেল খতম। বাকি ব্যাটারদের সাজঘরে ফেরাতে বেশি ঘাম ঝরাতে হয়নি ভারতকে। ভারতের হয়ে অক্ষরের পাশাপাশি তিনটি উইকেট নিলেন কুলদীপ। দু’টি উইকেট যশপ্রীত বুমরার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy