মিতা পাল গত দু’বছর ধরে বাংলা দলকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। ছবি: সংগৃহীত।
আপনার পছন্দের ক্রিকেটার কে? এই প্রশ্নের উত্তরে বেশির ভাগ ভারতীয়ের উত্তর হয় সচিন তেন্ডুলকর, বিরাট কোহলি, মিতালি রাজ, হরমনপ্রীত কৌরের মতো কেউ। ব্যতিক্রম মিতা পাল। বাংলার মহিলা দলের অধিনায়ক প্রথমেই এমন এক জনের নাম নিলেন, যিনি তাঁর থেকে আট বছরের ছোট।
মিতা গত দু’বছর ধরে বাংলা দলকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। খেলেছেন পূর্বাঞ্চলের হয়েও। এখন বেঙ্গল প্রো টি-টোয়েন্টি লিগে লাক্স শ্যাম কলকাতা টাইগার্সকেও নেতৃত্ব দিচ্ছেন মিতা। অর্ধশতরান করে প্রথম ম্যাচে দলকে জেতানও। সেই মিতার পছন্দের ক্রিকেটার ধারা গুজ্জার। যিনি মিতার সতীর্থ। একসঙ্গে বাংলার হয়ে খেলেন তাঁরা। মিতার বয়স ২৯ বছর। ধারা তাঁর থেকে ৮ বছরের ছোট। বৃহস্পতিবার ধারার অ্যাডামাস হাওড়া ওয়ারিয়র্সকেই হারিয়ে দেন মিতারা।
নদিয়ার চাকদা এলাকার জগদীশপুর গ্রামের মেয়ে মিতা। ছোটবেলা থেকেই অর্থাভাবের সঙ্গে পরিচিত তিনি। মিতার বাবা গুরদাস পাল কৃষক। মেয়ের ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্নের সঙ্গে শুরুতে তাল মেলাতে পারেননি। কিন্তু ছেলেদের সঙ্গে ক্রিকেট খেলে বড় হয়ে ওঠা মেয়ে যখন বাংলার অধিনায়ক হয়ে যান, তখন সেই বাবার বুকই গর্বে ভরে যায়।
ছোটবেলার কথা বলতে মিতা বলেন তাঁর ভবদাদার কথা। তিনি বললেন, “পাড়ায় ভবদাদাকে দেখতাম ক্রিকেট খেলতে। ও খুব ভাল খেলত। আমিও ছেলেদের সঙ্গেই ক্রিকেট খেলতাম। সত্যি বলতে ভবদাদাকে দেখেই প্রথম শখ হয়েছিল ক্রিকেটার হওয়ার।”
চাকদহ থেকে ভারতের প্রাক্তন অধিনায়ক ঝুলন গোস্বামী উঠে এসেছিলেন। চাকদা এক্সপ্রেস বলা হত তাঁকে। তিনিও ছোটবেলায় ছেলেদের সঙ্গে খেলেই বড় হয়েছিলেন। তবে ১২ বছরের বড় ঝুলনকে শুরুর দিকে চিনতেন না মিতা। তাঁর সঙ্গে পরিচয় হয় বড় হয়ে। ঝুলনের নেতৃত্বে বাংলার হয়ে তিন-চার বছর খেলেছেন তিনি। ঝুলনের থেকেই শিখেছেন নেতৃত্বের খুঁটিনাটি। মিতা বললেন, “ঝুলনদিকে প্রথম দিকে চিনতাম না। বাংলা দলে আসার পরেই ঝুলনদির সঙ্গে পরিচয়। ওর নেতৃত্বে আমি খেলেওছি তিন-চার বছর। ঝুলনদির সঙ্গে সাজঘর ভাগ করে নেওয়াটা একটা অভিজ্ঞতা। ওর মাপের ক্রিকেটারদের তো সব সময় হাতের কাছে পাওয়া যায় না। অনেক কিছু শিখেছি আমি ঝুলনদির থেকে।”
মিতার ক্রিকেট শেখার নেপথ্যে যদিও কামালপুর আদর্শ বিদ্যাপীঠ ফর গার্লসের প্রধান শিক্ষিকা। তিনিই মিতার বাবার কাছে গিয়ে বলেছিলেন মেয়েকে ক্রিকেট খেলা শেখাতে। মিতা বললেন, “বাবা শুরুতে আমার ক্রিকেট খেলার ব্যাপারে রাজি ছিল না। আমার স্কুলের কৃষ্ণভদ্র ম্যাম বাবাকে রাজি করান। তিনিই আমার বাড়ি গিয়ে বাবাকে বলেন, আমাকে ক্রিকেট কোচিং সেন্টারে ভর্তি করিয়ে দেওয়ার জন্য। তখন থেকেই আমার ডিউস বলে ক্রিকেট খেলা শুরু।”
মিতা প্রথমে অনুশীলন করতেন চাকদা স্টেডিয়ামে। তার পর কল্যাণী স্টেডিয়ামে অনুশীলন করতেন তিনি। বাংলার খেলা না থাকলে এখন সেখানেই অনুশীলন করেন মিতা। বেঙ্গল প্রো টি-টোয়েন্টি লিগ শুরু হওয়ার পর থেকে যদিও কলকাতাতেই রয়েছেন তিনি। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সল্টলেক ক্যাম্পাসে মেয়েদের ম্যাচগুলি হচ্ছে। এই লিগ থেকে আগামী দিনের তারকা উঠে আসবে বলে মনে করছেন মিতা।
বাংলার অধিনায়ক বললেন, “এই লিগ বাংলার মেয়েদের জন্য খুব কার্যকরী হবে। এখানে অনেক মেয়েই আছে যারা ক্লাব ক্রিকেটে ভাল খেলে জায়গা করে নিয়েছে বিভিন্ন দলে। যারা বাংলার হয়ে খেলে না তারা ক্লাব ক্রিকেট ছাড়া আর জায়গা পায় না খেলার। এই লিগের জন্য তারা খেলার সুযোগ পাচ্ছে। আর্থিক ভাবেও এই লিগ মেয়েদের জন্য খুবই ভাল একটা দিক। আমার মতো অনেকেই আর্থিক ভাবে পিছিয়ে থাকা পরিবার থেকে উঠে এসেছে। তারা এই লিগে খেলে অর্থ উপার্জন করতে পারবে। ক্রিকেট খেলতে গেলে ব্যাট, বল, প্যাড ছাড়াও আরও অনেক কিছু লাগে। সেটার একটা খরচ আছে। এই লিগ আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়া সেই সব মেয়েদের জন্য খুবই উপকারী। নিজেদের খরচটা নিজেরা করতে পারবে।”
মিতা এখন বাংলার অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। তাঁর ব্যাট যেমন দলের ভরসা, তেমনই তাঁর অফ স্পিন বোলিং। বিরাট কোহলির খেলা দেখতে ভাল লাগে মিতার। অবসর সময় অরিজিৎ সিংহের গান শোনেন। আর তাঁর পছন্দের ক্রিকেটার? মিতা বলেন, “বাংলার ক্রিকেটারদের মধ্যে আমার ধারা গুজ্জরের খেলা ভাল লাগে। খুব ভাল ব্যাট করে। রিচা ঘোষের খেলা দেখতে ভাল লাগে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের কথা বললে বিরাট কোহলির খেলা দেখে শিখি। মেয়েদের মধ্যে হরমনপ্রীত কৌর এবং স্মৃতি মন্ধানার ব্যাটিং দেখতে ভাল লাগে।”
সেই জন্যই মিতা অধিনায়ক। কত জন সহজেই নিজের সতীর্থের নাম বলতে পারেন পছন্দের ক্রিকেটার হিসাবে? মিতা পারেন। সেই জন্যেই বাংলাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy