অধিনায়ক রশিদ খানের সঙ্গে গুলবদিন নইব। ছবি: পিটিআই।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘কাবুলিওয়ালা’ ছোট্ট মিনিকে প্রশ্ন করেছিল, “খোঁখী, তোমি সসুরবাড়ি যাবিস?” মিনি সেই কথা শুনে লজ্জা পেয়েছিল। রশিদ খানদের আফগান বাহিনী প্রমাণ করছে যে, তারা আর বিশ্ব ক্রিকেটে ‘খোঁখী’ নয়, লজ্জার কারণও নয়। আফগান ক্রিকেটে কাবুলিওয়ালার দিন শেষ। ধাপে ধাপে তারা উঠে আসছে সেরাদের তালিকায়।
এক দিনের বিশ্বকাপে সেমিফাইনালে ওঠার দৌড় থেকে অল্পের জন্য ছিটকে গিয়েছিল আফগানিস্তান। কিন্তু সে বার ইংল্যান্ড এবং পাকিস্তানকে হারিয়ে রশিদ খানেরা বুঝিয়ে দিয়েছিলেন আর তাঁদের হালকা ভাবে নেওয়া যাবে না। এ বারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বে নিউ জ়িল্যান্ডকে হারিয়ে দেয় আফগানিস্তান। তার পর সুপার ৮-এ অস্ট্রেলিয়া এবং বাংলাদেশকে হারিয়ে যোগ্য দল হিসাবেই সেমিফাইনালে জায়গা পাকা করে নিয়েছেন রশিদেরা।
সেমিফাইনালে উঠে আফগান অধিনায়ক রশিদ ধন্যবাদ দিয়েছেন ব্রায়ান লারাকে। রশিদ বলেন, “আমরা সেমিফাইনালে উঠতে পারি, এটা একমাত্র বলেছিলেন লারা। আমরা সেই কথা সত্যি প্রমাণ করলাম। এখানে এসে একটা পার্টিতে দেখা হয়েছিল ওঁর সঙ্গে। বলেছিলাম, ওঁর কথা ভুল হতে দেব না।”
নবীন উল হকের বলে মুস্তাফিজুর রহমান আউট হতেই আনন্দে আত্মহারা হয়ে যান আফগান ক্রিকেটারেরা। কেউ কেউ কেঁদে ফেলেন। প্রথম বার বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ওঠার জন্য রশিদেরা কতটা মরিয়া ছিলেন তা বোঝা যাচ্ছিল ওই উদ্যাপন থেকেই। ম্যাচ শেষে রশিদ বলেন, “আমাদের স্বপ্ন ছিল বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ওঠা। আমরা যে ভাবে নিউ জ়িল্যান্ডকে হারিয়ে শুরু করেছিলাম, তাতেই আত্মবিশ্বাস পেয়ে গিয়েছিলাম। এটা অবিশ্বাস্য।”
রশিদদের জয়ে আফগানিস্তানের রাস্তায় নেমে আসেন সমর্থকেরা। উল্লাসে মেতে ওঠেন তাঁরা। মাঠ থেকে হোটেলে ফেরার সময় উৎসবে মেতে ওঠেন ক্রিকেটারেরাও। সেই ভিডিয়ো পোস্ট করেন মহম্মদ নবি। আফগান ক্রিকেটারদের বাসের মধ্যেই নাচতে দেখা যায়। আফগান দলের বোলিং পরামর্শদাতা ডোয়েন ব্র্যাভোর গান, ‘চ্যাম্পিয়ন’ গাইতে শোনা যায় গুলবদিনদের।
বাংলাদেশের বিরুদ্ধে রশিদেরা খুব বেশি রান করতে পারেননি। কিন্তু আফগানিস্তানের বোলিং এতটাই শক্তিশালী যে, ১১৫ রানও অনেক কঠিন লক্ষ্য মনে হচ্ছিল বাংলাদেশের জন্য। রশিদ বলেন, “এই পিচে ১৩০-১৩৫ রান হলে ভাল হত। আমরা ১৫ রান কম করেছি। জানতাম বাংলাদেশ শুরু থেকেই দ্রুত রান করার চেষ্টা করবে। সেটার সুযোগ নিতে চেয়েছিলাম আমরা। নিজেদের পরিকল্পনা অনুযায়ী খেলেছি শুধু। তাতেই সাফল্য পেয়েছি। আমরা চেয়েছিলাম দেশের মানুষকে আনন্দ দিতে। আমাদের সকলের এটাই স্বপ্ন ছিল। সকলে খুব ভাল খেলেছে।”
অস্ট্রেলিয়াকে সুপার ৮-এ হারিয়ে দেওয়ার পর আফগানিস্তানের আত্মবিশ্বাস অনেকটাই বৃদ্ধি পায়। সেমিফাইনালে ওঠার পর রশিদ বলেন, “আমরা খুব সহজ ভাবে সেমিফাইনালটা খেলতে চাই। প্রতিটা মুহূর্ত উপভোগ করতে চাই। সেমিফাইনালে আমরা কোনও চাপ নিয়ে খেলব না।”
রশিদ বাংলাদেশের বিরুদ্ধে জেতার জন্য কতটা মরিয়া ছিলেন, তা বোঝা একটি ঘটনায়। আফগানিস্তানের ইনিংসের শেষ ওভার চলছে তখন। রশিদের সঙ্গে ব্যাট করছিলেন করিম জানাত। রশিদ তৃতীয় বলে দু’রান নিতে চেয়েছিলেন। ব্যাট করতে চাইছিলেন তিনি নিজে। কিন্তু করিম এক রানের বেশি নেননি। রশিদ ক্রিজ়ের মাঝখানে পৌঁছে গেলেও করিম আসেননি। রাগে তাঁর দিকে ব্যাট ছুড়ে দিয়ে নন-স্ট্রাইকারের দিকে ফিরে যান রশিদ। পরে ব্যাট নিতে এসেও রাগ প্রকাশ করেন। রশিদ জানতেন তিনি ব্যাট করলে বড় শট খেলার চেষ্টা করবেন। সেই কারণেই স্ট্রাইক নিতে চেয়েছিলেন রশিদ। পরের বলেই এক রান নেন করিম। শেষ বলে ছক্কা মেরে দলকে ১১৫ রানে পৌঁছে দেন রশিদ।
১৫ বছর আগেও আফগানিস্তানের ক্রিকেট নিয়ে কোনও আগ্রহ ছিল না। মহম্মদ নবি সেই সময় থেকে খেলছেন। যোগ্যতা অর্জন পর্বে খেলতে হত তাঁদের। সেখান থেকে ২০২৪ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে আফগানিস্তান। তরুণ নুরদের সঙ্গে আনন্দে ভাসছেন ৩৯ বছরের নবিও। ১৫ বছর আগে নবিরা সেমিফাইনালে ওঠার কথা বললে হয়তো নিজেদের দেশেই হাসির পাত্র হতেন। আর সেই স্বপ্ন এখন সত্যি করছেন নুর, গুলবদিন নইবেরা।
সেমিফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে খেলতে হবে আফগানিস্তানকে। নিউ জ়িল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, বাংলাদেশের মতো টেস্ট খেলিয়ে দেশকে হারানোর পর দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারানোর স্বপ্ন দেখতেই পারেন রশিদেরা। আর ‘চোকার্স’ বলে পরিচিত প্রোটিয়ারা সেমিফাইনালে হেরে গেলে আফগানিস্তান পৌঁছে যেতে পারে ফাইনালেও। তখন আফগান ক্রিকেটের ইতিহাসটাই হয়তো বদলে যাবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy