দু’জনেই অতীতেও এমন কৃতিত্ব দেখিয়েছেন।
শ্বেতা দুবে এবং শুভদীপ ভৌমিক। আলাদা আলাদা বিভাগে রাজ্য কুস্তি প্রতিযোগিতায় চাম্পিয়ন হয়েছেন। তবে ওঁদের মধ্যে দু’টি বড় মিল রয়েছে। দু’জনেই কলকাতার পঞ্চানন ব্যায়াম সমিতির আখড়ায় কুস্তি শেখেন। আর দু’জনের জীবনেই সম্প্রতি আলো এসেছেন আনন্দবাজার অনলাইনে খবর প্রকাশের দৌলতে।
শ্বেতা উত্তর কলকাতার মেয়ে হলেও এখন থাকেন হুগলির ডানকুনিতে। ২০১৭ থেকে ২০১৯, টানা তিন বার রাজ্য চ্যাম্পিয়ন শ্বেতার মনে নতুন করে কুস্তি নিয়ে স্বপ্ন জেগে ওঠে গত অগস্টে। অলিম্পিক্সে কুস্তিতে ভারতের পদকপ্রাপ্তির পরেই শ্বেতার খোঁজ পায় আনন্দবাজার অনলাইন। তখনই জানা যায়, বাংলার ‘দঙ্গল-কন্যা’ ভাবছেন, একটা চাকরি পাওয়া খুবই দরকার। কুস্তি চালিয়ে যেতে গেলে যে অনেক টাকা প্রয়োজন। বড্ড খিদে পায় কুস্তিতে। জানান শ্বেতা। বলেছিলেন, ‘‘কুস্তি লড়তে গেলে অনেক দুধ, ঘি, মাখন খেতে হয়। দিনে কমপক্ষে হাফ ডজন ডিম খাওয়া দরকার। আরও অনেক কিছুই খেতে হয়। আমি মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে। আমি তবু খাবার পেয়েছি। কিন্তু এখন কুস্তি শিখতে আসে মূলত গরিব বাড়ির ছেলেমেয়েরা। তারা বেশিদিন চালাতে পারে না। সত্যি করেই বলছি, কুস্তিতে বড্ড খিদে পায়।’’
কলকাতার কুস্তির আখড়ার ধুলো মেখে দেশের জন্য লড়াইয়ের স্বপ্ন দেখা শ্বেতার কাহিনি আনন্দবাজার অনলাইনে প্রকাশের প্রায় সঙ্গে সঙ্গে এগিয়ে আসে একটি বেসরকারি সংস্থা। শ্বেতার পাশে দাঁড়াতে এক বছরের জন্য প্রতি মাসে বৃত্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত জানায় প্রচারবিমুখ ওই সংস্থা। বৃত্তি পাওয়ার সময়েই শ্বেতা জানিয়েছিলেন, এ বার দায়িত্ব বেড়ে গেল। নিজেকে প্রমাণ করতেই হবে। স্বীকৃতির সম্মান দিতেই হবে। পেরেছেন শ্বেতা। সদ্য শেষ হওয়া রাজ্য কুস্তি চাম্পিয়ানশিপে মহিলাদের ৫৭ কেজি বিভাগে প্রথম হয়েছেন তিনি। শ্বেতা বলেন, ‘‘আগেও প্রথম হয়েছি। কিন্তু এ বার অন্য জেদ নিয়ে লড়তে নেমেছিলাম। কিছুদিন আগেই যে সম্মান আমি পেয়েছে তার মর্যাদা রক্ষার লড়াই ছিল এটা।’’
অক্টোবরের তৃতীয় সপ্তাহে সোদপুরের সুখচরে রাজ্য কুস্তি চাম্পিয়ানশিপের আসর বসেছিল। সেখানে পুরুষদের ৬১ কেজির বিভাগে প্রথম হয়েছেন শুভদীপ। ডাক নাম সানি। তবে সানি-র আরও পরিচয় রয়েছে। অভিনেতা দেবের কুস্তি কোচ সানি। সদ্য মুক্তি পাওয়া ‘গোলন্দাজ’ ছবির জন্য দেবকে কুস্তির ‘ধোবি পছাড়’ শিখিয়েছিলেন সানি। পরিচালক ধ্রুব বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবিতে ভারতীয় ফুটবলের আদিপুরুষ নগেন্দ্রপ্রসাদ সর্বাধিকারীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন দেব। ফুটবলার নগেন্দ্রপ্রসাদ কুস্তিতেও ওস্তাদ ছিলেন। তাই দেবকে ধোবি পাছাড় দিতে ওস্তাদ সানির কোচিং নিতে হয়। ছবিতে কিছুটা অভিনয়ের সুযোগও পান তিনি। তবে কুস্তি লড়ে বা শিখিয়ে পেট চলে না সানির। টালিগঞ্জ-যাদবপুর রুটের অটোচালক তিনি। ওটাই ওঁর রোজকার এবং রোজগারের জীবন। এই খবর প্রকাশ করেই সানিকে প্রচারের আলোয় নিয়ে আসে আনন্দবাজার অনলাইন। চাম্পিয়ান হওয়ার খবর জানিয়ে ফোনে সানি বলেন, ‘‘কুস্তিই আমার জীবন। পেটের টানে যাই করি না কেন কুস্তির মতো কিছুই আমাকে টানে না। চ্যাম্পিয়ান হওয়ার আনন্দ আমি আনন্দবাজার অনলাইনের সঙ্গেও ভাগ করে নিতে চাই।
শ্বেতার মতো সানিও অতীতে রাজ্য চ্যাম্পিয়ান হয়েছেন। অগস্ট ও অক্টোবরে খবরের শিরোনাম হওয়া শ্বেতা-সানি ফের চ্যাম্পিয়ান। খুশি ওঁদের কোচ অসিত সাহা। খুশি ওঁদের নামের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা আনন্দবাজার অনলাইনও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy