Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Sudhir Karmakar

শ্রীমাণিদাকে সম্মান জানাক ক্লাব, অভিমানী আর্জি সুধীর-অরুণের

১৯৭২ সালে ইস্টবেঙ্গলের বারের নীচে দাঁড়িয়ে অবিশ্বাস্য খেলেছিলেন অরুণ। কলকাতা লিগে একটি গোলও হজম করেননি তিনি।

অরুণ বন্দ্যোপাধ্যায় (বাঁ দিকে)। (ডান দিকে) সুধীর কর্মকার। দুই প্রাক্তন তারকার মনেই জমেছে মেঘ।

অরুণ বন্দ্যোপাধ্যায় (বাঁ দিকে)। (ডান দিকে) সুধীর কর্মকার। দুই প্রাক্তন তারকার মনেই জমেছে মেঘ।

নিজস্ব সংবাদদাত
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ জুলাই ২০১৯ ২১:২১
Share: Save:

ইস্টবেঙ্গলের শতবর্ষের ঢাকে কাঠি পড়ে গেল আজ, রবিবার থেকেই। উৎসব উৎসব একটা ব্যাপার সমর্থকদের মনে। অথচ ইস্টবেঙ্গলের স্বর্ণযুগের গোলকিপার অরুণ বন্দ্যোপাধ্যায় ও শতবর্ষের সেরা অধিনায়ক সুধীর কর্মকারের মনে মেঘ জমে রয়েছে।

কিন্তু কেন? দুই ফুটবলারেরই বক্তব্য, লাল-হলুদের প্রাক্তন ফুটবল-সচিব অজয় শ্রীমাণিকেও শতবর্ষ অনুষ্ঠানে ক্লাব সম্মান জানাতে পারত। অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার জন্য তাঁকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও পুরস্কার তুলে দেওয়া হচ্ছে না শ্রীমাণিবাবুর হাতে। এটাই মানতে পারছেন না দুই প্রাক্তন তারকা।

‘‘শতবর্ষে শ্রীমাণিদার নামে পুরস্কার চালু করতেই পারত ইস্টবেঙ্গল। তা হলে ওঁকে যোগ্য সম্মান জানানো হত।’’ এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে চলেন অরুণবাবু। তাঁর সুরেই সুর মিলিয়ে সুধীর বলছেন, ‘‘সেরা অধিনায়কের সম্মান আমাকে দিচ্ছে ক্লাব। শ্রীমাণিদা তখন ফুটবল সচিব ছিলেন। তাঁকেও যদি সম্মান জানানো হত, তা হলে ক্ষতি তো কিছু হত না।’’

যাঁকে নিয়ে মনে ঝড় বইছে সুধীর ও অরুণের, সেই অজয় শ্রীমাণি সব শুনে হেসে ফেললেন। ৮৫ বছরের অজয়বাবু আনন্দবাজারকে বললেন, ‘‘আমার ছেলেদের তো চিনি আমি। ওরা তো এ কথা বলবেই। সুধীরের শরীর খারাপ হয়েছিল। আমি ওকে দেখতে ওর বাড়ি গিয়েছিলাম। সুধীর আমার ডিফেন্সের লিডার। ওর মতো ছেলে আর হবে না।’’

আরও পড়ুন: কলকাতাকে লাল-হলুদে রাঙিয়ে, সেই কুমারটুলি থেকে শুরু হল ইস্টবেঙ্গলের শতবর্ষ উদযাপন

১৯৭০-৭৫ সাল পর্যন্ত লাল-হলুদের কর্তা ছিলেন অজয় শ্রীমাণি। তাঁর সময়ে ইস্টবেঙ্গল টানা পাঁচ বার লিগ জিতেছে। পাস ক্লাব, পিয়ং ইয়ংয়ের মতো বিদেশি ক্লাবকে মাটি ধরিয়েছে। শিল্ড ফাইনালে মোহনবাগানকে পাঁচ গোল দিয়েছে। ক্লাবের শতবর্ষে সেই মানুষটার হাতে কিছু তুলে না দেওয়ায় মন ভাল নেই অরুণ ও সুধীরের। সোশ্যাল মিডিয়ায় এখনও অনেকে সুধীরের অল্প বয়সের ছবি পোস্ট করে বলেন, ‘‘সম্ভবত ভারতের সেরা ডিফেন্ডার।’’ তাঁকে নিয়ে কত মিথ ছড়িয়ে রয়েছে ময়দানে, তার ইয়ত্তা নেই। আকবরের ট্যাকলে সুধীরের পা ক্ষতবিক্ষত হয়ে গিয়েছিল ১৯৭৫-এর শিল্ড সেমিফাইনালে। চারটি সেলাই পড়েছিল। তা নিয়েই নেমে পড়েছিলেন শিল্ড-ফাইনালে। সে বারের ফাইনালে ইস্টবেঙ্গলের কাছে পাঁচ গোল হজম করেছিল মোহনবাগান।

সুধীরের সতীর্থ অরুণ ১৯৭২ সালে ইস্টবেঙ্গলের বারের নীচে দাঁড়িয়ে অবিশ্বাস্য খেলেছিলেন। কলকাতা লিগে একটি গোলও হজম করেননি তিনি। স্মৃতিরোমন্থন করে অরুণ বলছেন, ‘‘১৯৭২ সালে শ্রীমাণিদা আমাদের সবাইকে নিজের পয়সায় সোনার আংটি কিনে দিয়েছিলেন। অনেকেই জানেন না শ্রীমাণিদার এই কথা। আমি অবশ্য সেই আংটিটা আমার নাতনিকে দিয়েছি। শ্রীমাণিদার কাছ থেকে অনুমতি আগেই চেয়ে নিয়েছিলাম। উনি বললেন, অবশ্যই তোমার আংটিটা নাতনিকে দেবে।’’ ইস্টবেঙ্গল অবশ্য শতবর্ষ উদযাপনের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানিয়েছে তিন জনকেই। তবে তাঁরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পারবেন কিনা, তা নিয়ে সন্দেহ রয়ে গিয়েছে। অরুণবাবু বললেন, ‘‘ভাল করে ক্লাব শতবর্ষ অনুষ্ঠান করুক। এটাই চাই। আমার পক্ষে যাওয়া সম্ভব হবে না।’’

১৯৬৬ সালে ইস্টার্ন রেলের হয়ে প্রিমিয়ার ডিভিশনে খেলা শুরু করেন তিনি। পরে রাজস্থান হয়ে ইস্টবেঙ্গলে চলে আসেন। পাঁচ বছর লাল-হলুদের হয়ে খেলেন তিনি। ১৯৭২ তাঁর সোনায় মোড়ানো বছর। প্রতিপক্ষের স্ট্রাইকাররা সে বার তাঁকে হার মানাতেই পারেননি। এরকম এক গোলকিপারকে কীভাবে ভুলে গেল ময়দান? ক্লাবের সঙ্গে কীভাবেই বা বন্ধন শিথিল হয়ে গেল? অরুণবাবু বলেন, ‘‘৭৫ বছরের অনুষ্ঠানেও আমার কথা ভুলে গিয়েছিল ক্লাব। প্রাক্তন ফুটবলার হিসেবে কোনওদিন তো খেলা দেখার একটা কার্ডও আমাকে দেওয়া হয়নি। আর এ সব নিয়ে এখন আর ভাবতে চাই না।’’

শতবর্ষের সেরা অধিনায়ক দেওয়া হচ্ছে সুধীর কর্মকারকে, সংবাদপত্রের পাতায় এই খবর পড়ার পরেই দূরভাষে প্রাক্তন লাল-হলুদ ডিফেন্ডারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন অজয়বাবু। বিকেলে সুধীর বলছিলেন, ‘‘ফুটবলারদের সঙ্গে একজন ফুটবল সেক্রেটারির সম্পর্ক ভাল হলে, মাঠে জানপ্রাণ লড়িয়ে দেয় খেলোয়াড়রা। আমাদের সঙ্গে শ্রীমাণিদার সম্পর্ক খুবই ভাল ছিল। সেই কারণে ক্লাব ওঁর সময়ে এত সাফল্য পেয়েছে।’’ সেই মানুষটাকে উপেক্ষা করা ভাল ভাবে মেনে নিতে পারেননি দুই প্রাক্তন ফুটবলার।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy