আই লিগের প্রথম ডার্বির মোহনবাগানের অস্ত্র।
বাজারে একটা কথা ছড়িয়ে দিয়েছেন কেউ কেউ। কথাটা আমার কানেও যে আসেনি তা নয়। তা হল, এ বারের মোহনবাগান এমনই শক্তিশালী যে, তাদের না কি হারানো অসম্ভব!
প্রথমেই তাদের জানিয়ে রাখি, শক্তিশালী টিম তৈরি করলেই ডার্বি জেতা যায় না। এই ম্যাচটা আমি অনেকবার খেলেছি ফুটবলার হিসাবে। কোচ হয়েও। কলকাতায় ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান খেলা অনেকটা ক্রিকেটের ওয়ান ডে ম্যাচের মতো। সে দিন যে দলের অঙ্ক কাজে লাগবে, যে টিম সাহস দেখাতে পারবে, বাড়তি তাগিদ দেখাবে, মানসিকভাবে চাঙ্গা থাকবে-- তারাই জিতবে। আর কে না জানে পিছিয়ে থাকা অবস্থায় ইস্টবেঙ্গল সব সময়ই ভয়ঙ্কর। আমি ডার্বির আগে দু’টো ড্রেসিংরুমের আবহ দেখেছি বা দেখছি। লিখতে দ্বিধা নেই, ইস্টবেঙ্গল সবসময়ই একটু হলেও বেশি চার্জড থাকে। পিছিয়ে থাকলে তো আরও। হয়তো সদস্য সমর্থকদের আগুনে মেজাজের প্রতিফলন ঘটে টিমে।
শনিবারের ম্যাচটা খেলতে নামার আগে উনিশশো চুরাশির কথা মনে পড়ছে। সে বার কী টিম ছিল মোহনবাগানের! বাবলু ভট্টাচার্য, প্রদীপ চৌধুরী, সুরজিৎ সেনগুপ্ত, প্রসূন-মানস-বিদেশ-শ্যাম থাপা। তারকায় ভরা টিম। সে বার একটা ডার্বিও কিন্তু ওই টিমটা জেতেনি। ফেড কাপে যখন সেমিফাইনাল খেলতে নামছি, সব কাগজের ইঙ্গিত ছিল, ক’গোল খাব আমরা। আমি গোল করে সে বার ইস্টবেঙ্গলকে তুলেছিলাম ফাইনালে। আর এ বার ইতিমধ্যেই কলকাতার লিগের ডার্বি জিতেছি, আই লিগের ডার্বিটা কী হয় দেখুন না। চুরাশি ফিরিয়ে আনার জন্যই কিন্তু আমরা নামব। এই ম্যাচটা জিতলেই লিগ টেবলের শীর্ষে চলে যাবে ইস্টবেঙ্গল। দু’পয়েন্টে পিছিয়ে থাকা ছাড়া আমাদের সঙ্গে সঞ্জয়ের টিমের আর কোনও পার্থক্য কিন্তু নেই। সরসরিই বলি, এই ম্যাচটা কিন্তু আমরা হারতে চাই না।
সনি-গ্লেন-বলবন্ত-কাতসুমিদের নিয়ে তৈরি মোহনবাগান শক্তিশালী টিম, সন্দেহ নেই। তা সত্ত্বেও আমাদের গোলের সামনে বল পেলেই ওরা গোল করে দেবে এটা মানতে পারছি না। জানিয়ে রাখি, আমাদের সনি-গ্লেন ওসব দেখিয়ে কোনও লাভ নেই। আমার ডিফেন্সকে চাপেও ফেলা যাবে না। ওদের আটকানোর মতো শক্তি এবং ক্ষমতা আমার টিমে আছে। মেন্ডি আসেনি এখনও। তাতে কী হয়েছে? ইস্টবেঙ্গলে এ বার বেলোর মতো আই লিগ জেতানো ডিফেন্ডার আছে। আছে দেশের একনম্বর ডিফেন্ডার অর্ণব। রবার্ট দশ বছর এই ম্যাচ খেলছে। যথেষ্ট অভিজ্ঞ। রাইট ব্যাক রাহুল বেকে তো গোলও করেছে। ওদের টপকে গোল করা কিন্তু সহজ হবে না। মোহনবাগান দু’ম্যাচে সাত গোল করেছে ঠিক, কিন্তু তিন গোল খেয়েওছে। র্যান্টি-ডংরা দেখেছে। সেটা আমরা মাথায় রাখছি। অঙ্কেও থাকছে। সবথেকে বড় কথা কয়েক মাস আগে কলকাতা ডার্বিতে ডং-এর ফ্রি কিকের গোল দু’টো ওদের মানসিকভাবে তাড়া করবেই। মোহনবাগান রক্ষণকেও চাপে রাখবে। আর র্যান্টিও ফর্মে ফিরছে। গোল করেছে। মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে আমরা পয়েন্ট নষ্ট করেছি ঠিক, কিন্তু প্রচুর গোলের সুযোগও নষ্ট করেছি। এটা যে কোনও দলের কোচের কাছে স্বস্তির বিষয়। বিরতির পর আমার টিম এত ভাল খেলেছিল যে, কাউকে পরিবর্ত হিসাবে নামাতেই পারলাম না।
প্রদীপদা বা অমলদা-দের যুগ এখন নেই। ভোকাল টনিক এখন কাজে লাগে না। প্র্যাকটিক্যাল করে দেখাতে হয় সব কিছু। বিপক্ষের ভুল-ত্রুটি দেখে নিজেদের স্ট্র্যাটেজি ঠিক করতে হয়। আমার দুই সহকারী ওমোলো-দেবজিৎ দু’জনেই ডিফেন্ডার ছিল। ওঁরা বেলো-অর্ণবদের তৈরি করছে। বোঝাচ্ছে, কীভাবে সনি-গ্লেন-বলবন্তদের পকেটে পুরতে হবে। সঞ্জয়ের টিমে যে ভুলগুলো আমাদের চোখে পড়েছে সেগুলো নিয়েও আলোচনা হচ্ছে। ইস্টবেঙ্গল ড্রেসিংরুমের একটা জিনিস দেখে আমার ভাল লাগছে তা হল, মেহতাব-খাবরারা এমন একটা পরিবেশ তৈরি করেছে যে না জিতলে আই লিগটাই শেষ হয়ে যাবে। জিততে হলে এই তাগিদটাই আসল। আমিও মানছি, নয় দলের ছোট লিগে পয়েন্ট নষ্ট করলেই অনেক পিছিয়ে পড়তে হয়। আই লিগের প্রথম ডার্বি তাই জিততেই হবে। আমরা তৈরি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy