সফল: পদক জিতে প্লাতিনি (বাঁ দিকে) এবং অভ্রজ্যোতি । নিজস্ব চিত্র
এক জন ভারতীয় ফুটবলে দাপিয়ে বেড়িয়েছেন একটা সময়। অধিনায়ক হয়েছেন দেশের। অর্জুন পুরস্কার পেয়েছেন। অন্য জন দেশের হয়ে সোনা এনেছেন এশিয়ান গেমসে। অর্জুন পুরস্কারের মুকুটও উঠেছে মাথায়। দু’জনেই আবার ক্রীড়া জীবনের পরে জড়িয়েছেন রাজ্য রাজনীতিতে। এক জন প্রাক্তন ফুটবলার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়। অন্য জন অ্যাথলিট জ্যোতির্ময়ী শিকদার।
এ ছাড়া আরও একটা মিল আছে এই দুই বিখ্যাত ক্রীড়াবিদের জীবনে। এঁদের দু’জনেরই ছেলে পূর্বসূরিদের খেলা না বেছে চলে এসেছে শুটিংয়ে। এবং, সদ্য সমাপ্ত রাজ্য শুটিংয়ে অভিষেকেই দু’জনেই পদক জিতেছে। জ্যোতির্ময়ীর ছেলে অভ্রজ্যোতি সিংহ যুব বিভাগে ১০ মিটার এয়ার রাইফেলে টিম ইভেন্টে সোনা এবং প্রসূনের ছেলে প্লাতিনি সিনিয়র বিভাগের ১০ মিটার এয়ার রাইফেলের টিম ইভেন্টে রুপো।
কিন্তু কেন অ্যাথলেটিক্সে না গিয়ে শুটিংয়ে? অভ্রজ্যোতির মা জ্যোতির্ময়ী বলছিলেন, ‘‘দেখুন, আমি গ্রামের স্কুলে পড়াশোনা করে বড় হয়েছি। সেখানে আমরা প্র্যাক্টিস করার অনেক সুযোগ পেতাম, সময় পেতাম। কিন্তু এখানে স্কুলে অনেক চাপ। সকালে যায়, বাড়ি আসতে আসতে তিনটে-চারটে। এই রুটিনে অ্যাথলেটিক্সের জন্য সময় বার করে প্রস্তুতি নেওয়া যায় না।’’
কিন্তু শুটিংয়েই কেন? জয়দীপ কর্মকার শুটিং অ্যাকাডেমির এই ছাত্র, বছর ষোলোর অভ্র বলছিল, ‘‘ছোটবেলায় অ্যাথলেটিক্স আর শুটিং— এই দুটোতেই আগ্রহ ছিল। ক্লাস সিক্সে পড়ার সময় শুটিং শুরু করেছিলাম। কিন্তু তখন ট্রেনিং করতে সেই নর্থ ক্যালকাটা শুটিং ক্লাবে যেতে হত। যাতায়তে দু’ঘণ্টা লেগে যেত। তাই সরে এসেছিলাম। কিন্তু এখন বাড়ির পাশে জয়দীপ স্যরের অ্যাকাডেমি। সমস্ত রকম সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছি ওখানে। নিয়মিত প্র্যাক্টিসও করতে পারছি।’’ জ্যোতির্ময়ী জানাচ্ছেন, ক্লাস টুয়েলভের পরীক্ষা হয়ে গেলেই পুরোপুরি শুটিংয়ে ঝাঁপাবে ছেলে।
তাঁর নামকরণ তো আবার এক কিংবদন্তি ফুটবলারের নামে। ফুটবলপ্রেম কি কখনও ছিল না? প্লাতিনির জবাব, ‘‘ফুটবলের প্রতিও আমার ভালবাসা ছিল। আমি তো বেঙ্গল ফুটবল অ্যাকাডেমিতে এক সময় ট্রেনিং করতাম। বাবা ওখানে কোচিং করাতেন। কিন্তু অ্যাকাডেমিটা বন্ধ হয়ে যায়। তার পরে আস্তে আস্তে ফুটবল থেকে সরে আসি।’’
কিন্তু শুটিংয়ে এলেন কেন? তাও এত পরে? প্লাতিনির এখন ২৯ বছর বয়স। গত বছর থেকে জয়দীপের অ্যাকাডেমিতে নিয়মিত প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। প্লাতিনি বলছিলেন, ‘‘বাবার একটা রাইফেল ছিল। ছোটবেলায় সেই রাইফেলটা নিয়ে প্র্যাক্টিস করতাম। আমার দাদুর শিকারের নেশা ছিল। তখন থেকেই শুটিংয়ের প্রতি একটা ভালবাসা জন্মায়। কিন্তু পুরোপুরি মনোযোগ দিতে পারছিলাম না। তার পরে জয়দীপ স্যরের অ্যাকাডেমিতে ট্রেনিং করা শুরু করি।’’
তাঁর দুই ছাত্রকে নিয়েই আশাবাদী জয়দীপ। বলছিলেন, ‘‘কঠোর পরিশ্রম করলে ফল পাবেই। আশা করছি, সামনের বারই জাতীয় প্রতিযোগিতায় ভাল কিছু করবে। নানা প্রতিকূল অবস্থার মধ্যেও আমরা ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য সেরা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করি।’’ অভ্র এবং প্লাতিনিও মনে করেন, নিজেদের তৈরি করার সেরা সুযোগটা তাঁরা পাচ্ছেন এই অ্যাকাডেমিতে।
দু’জনের সামনেই আদর্শের অভাব নেই। এক জনের বাবা এবং অন্য জনের মা। যাঁরা একটা সময় দেশের সম্মান বাড়িয়েছেন। প্লাতিনি এবং অভ্রও এখন সেই স্বপ্ন দেখছে। আন্তর্জাতিক মঞ্চে দেশের নাম উজ্জ্বল করার স্বপ্ন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy