নবদীপ সাইনি
ছ’বছর আগে পর্যন্ত হরিয়ানার কর্নলে টেনিস বল ক্রিকেট খেলে ম্যাচ প্রতি দুশো টাকা করে আয় করতেন নবদীপ সাইনি। তাঁর গতি দেখে দিল্লির নেটে নবদীপকে বল করতে নিয়ে আসেন প্রাক্তন ক্রিকেটার সুমিত নারওয়াল। নেটে প্রথম দিনই গৌতম গম্ভীরকে বেশ কয়েক বার গতিতে পরাস্ত করেন। ব্যস! আর ঘুরে তাকাতে হয়নি ২৩ বছর বয়সি পেসারকে। গম্ভীরই তাঁকে প্রথম ক্রিকেট স্পাইকস উপহার দিয়ে নিয়মিত দিল্লির নেটে বল করতে আসার অনুরোধ করেন। নির্বাচকদের সঙ্গে রীতিমতো লড়াই করে নবদীপকে রঞ্জি ট্রফি দলে সুযোগ দেন প্রাক্তন ভারতীয় ওপেনার।
কে জানতেন, ২০১৯-এ ওয়েস্ট ইন্ডিজগামী বিমানে তাঁর জন্যও একটি আসন নির্ধারিত হয়ে যাবে? নবদীপ নিজেও বিশ্বাস করতে পারছেন না যে ক্যারিবিয়ান সফরের ওয়ান ডে ও টি-টোয়েন্টি দলে তিনি জায়গা করে নিয়েছেন।
জাতীয় স্তরে নিয়মিত পারফর্ম করার ফল হয়তো পেতে শুরু করেছেন নবদীপ। ২০১৭-১৮ মরসুমে রঞ্জি ট্রফিতে দিল্লির হয়ে আট ম্যাচে ৩৪ উইকেট নিয়ে দলকে ফাইনালে তুলেছিলেন। সে বারই সেমিফাইনালে বাংলার বিরুদ্ধে সাত উইকেট পেয়ে জাতীয় নির্বাচকদের নেকনজরে উঠে এসেছিলেন তিনি। কিন্তু এ বারের রঞ্জি ট্রফিতে চোটের জন্য বেশি ম্যাচ খেলা হয়নি। যদিও আইপিএলে তা পুষিয়ে দিয়েছেন। রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর ব্যর্থ হলেও ১৩ ম্যাচে ১১ উইকেট নিয়ে তরুণ প্রজন্মের নতুন তারকা হয়ে উঠেছেন নবদীপ। ১৪৮ থেকে ১৫০ কিমি/ঘণ্টায় টানা বল করে যাওয়ার ক্ষমতা আজ রাতারাতি এই জায়গায় পৌঁছে দিয়েছে ২৩ বছর বয়সি পেসারকে।
এ বার তাঁর সামনে ক্রিস গেল, আন্দ্রে রাসেলদের সামলানোর চ্যালেঞ্জ। কী ভাবে তাঁদের পরাস্ত করবেন নবদীপ? কী ভাবেই বা তৈরি হচ্ছেন তিনি? শনিবার সন্ধ্যায় ফোনে আনন্দবাজারকে একান্ত সাক্ষাৎকারে নবদীপ বলেন, ‘‘আইপিএলে রাসেল, গেলদের বিরুদ্ধে আগে খেলেছি। বুঝতে পেরেছি যে সমান গতিতে ওদের বিরুদ্ধে বল করে সাফল্য পাওয়া সম্ভব নয়। ব্যাকফুটে ওরা প্রচণ্ড শক্তিশালী। শর্ট বলের জন্য অপেক্ষা করে থাকে। এমনকি সামনের পায়ের বলও সহজে মাঠের বাইরে পাঠিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে। এ ধরনের ব্যাটসম্যানের বিরুদ্ধে গতির হেরফের করা প্রয়োজন। গতিই যে হেতু আমার অস্ত্র, তাই স্লোয়ারের তীক্ষ্ণতাও বেশি।’’
কয়েক দিন আগেই ভারতীয় ‘এ’ দলের হয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর করে ফিরেছেন। অ্যান্টিগায় দ্বিতীয় ওয়ান ডে-তে ৪৬ রানে পাঁচ উইকেট নিয়ে জয়ের অন্যতম নায়ক হয়ে ওঠেন তিনি। যে পাঁচটি উইকেট তিনি পেয়েছেন, তার মধ্যে তিনজনই আন্তর্জাতিক মানের ব্যাটসম্যান। রস্টন চেজ, সুনীল অ্যামব্রিস ও জোনাথান কার্টারদের একাধিক আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে। সেই আত্মবিশ্বাস নিয়েই ভারতীয় জার্সিতে নামতে চলেছেন নবদীপ। বলছিলেন, ‘‘ওয়েস্ট ইন্ডিজের পরিবেশ ও উইকেট সম্পর্কে ধারণা হয়ে গিয়েছে। কোনও উইকেটে বল বাউন্স করে। কোনও উইকেট সাহায্য করে স্পিনারদের। কিন্তু তাপমাত্রা প্রচণ্ড বেশি। তার মধ্যেও কী ভাবে মাথা ঠান্ডা রেখে বল করে যেতে হয় তা শিখে এসেছি।’’
গতির সঙ্গে দু’দিকেই বল সুইং করানোর ক্ষমতা রয়েছে ভারতীয় পেসারের। ‘টো ক্রাশিং’ ইয়র্কার ও বাউন্সার তাঁর অন্যতম অস্ত্র। তবুও ওয়েস্ট ইন্ডিজ উড়ে যাওয়ার আগে বেশি সময় দিচ্ছেন ইয়র্কার ও বাউন্সার ধারালো করে তোলার জন্য। যা তাঁর অন্যতম অস্ত্র, তার পিছনে কেন এত সময় দিচ্ছেন নবদীপ? উত্তরে একটি গল্প শুনিয়ে গেলেন। নবদীপ বললেন, ‘‘কয়েক দিন আগে (যশপ্রীত) বুমরা ভাইয়ের একটি সাক্ষাৎকার দেখছিলাম। সেখানে বুমরা বলছিল কী ভাবে ও ইয়র্কার রপ্ত করেছে। ছোটবেলায় ও একটাই বল করতে পারত। সেটা ইয়র্কার। ও কিন্তু এখনও নিয়মিত ইয়র্কার প্র্যাক্টিস করে। সেই সাক্ষাৎকার দেখে নিজের সঙ্গে অনেক মিল খুঁজে পেলাম। টেনিস বল ক্রিকেট থেকেই এই দু’ধরনের বল রপ্ত করতে পেরেছি। অস্ত্র হলেও সেটা ঠিক জায়গায় ফেলার জন্য নিয়মিত অনুশীলন করতে হয়। না হলে চাপের মুহূর্তে লেংথ হারিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।’’
নবদীপের ঠাকুরদা করম সিংহ ছিলেন নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর আজাদ হিন্দ ফৌজের সদস্য। দাদুর গল্প শুনেই দেশের জন্য কিছু করার ইচ্ছে তৈরি হয়েছিল তাঁর মধ্যে। টেনিস বল ছেড়ে যখন থেকে নিয়মিত ডিউস বলে খেলা শুরু করলেন, তখন নবদীপকে তাঁর বাবা বলেছিলেন, ‘‘শুধু খেললে হবে না, দেশের জার্সি গায়ে তুলতে হবে। না হলে খেলে কোনও লাভ নেই।’’ ভারতীয় দলে তাঁর নাম ঘোষণা হওয়ার পরে বাবার সেই কথা মনে পড়েছিল সাইনির। নবদীপ বলে গেলেন, ‘‘দেশের জন্য দাদু যে ভাবে নিজেকে উজাড় করে দিয়েছেন, তা আমাদের গর্বিত করে। এ বার আমার হাতে ব্যাটন। দেশকে যোগ্য সম্মান ফিরিয়ে দিতেই হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy