শনিবাসরীয় ভারতীয় ক্রিকেট সার্কিটের আলোচনার প্রধান বিষয়বস্তুর নাম হওয়া উচিত ছিল বিরাট কোহালি। দেশজ ক্রিকেটের তিন ফর্ম্যাটের বর্তমান অধিনায়ক এ দিন যে অকপট শ্রদ্ধার্ঘ্য পূর্বসূরির প্রতি পেশ করেছেন, তা যে কোনও ভবিষ্যৎ অধিনায়কের কাছে টেমপ্লেট হয়ে থাকা উচিত। কোহালি তো এ দিন বলে দিয়েছেন যে, মহেন্দ্র সিংহ ধোনি যত দিন টিমে থাকবেন সব সিদ্ধান্ত তাঁর সঙ্গে আলোচনা করেই নেবেন। কোথাও ধোনিকে বুঝতে দেবেন না, তিনি আর টিমটার অধিনায়ক নন।
আর পাঁচটা দিন হলে বোধহয় তাই হত। পূর্ণ আলোচনাটা ‘কোহালি অন ধোনি’ নিয়েই চলত। কিন্তু চলল না। হল না। বরং শনিবার রাতে ক্রিকেট সার্কিট আলোচনার দখল নিয়ে ফেললেন নারায়ণস্বামী শ্রীনিবাসন।
সরি, শ্রীনিবাসন বনাম রাজেন্দ্র মাল লোঢা যুদ্ধ।
শনিবারের বেঙ্গালুরু বৈঠকে শ্রীনি যে ‘পেশিশক্তি’ দেখানোর চেষ্টা করবেন, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ ছিল না। শ্রীনি শিবির থেকে রাতের দিকে কেউ কেউ উল্লসিত ভাবে বললেনও যে, বোর্ড কোন দিকে বেঙ্গালুরু বৈঠকে বুঝিয়ে দিয়েছেন শ্রীনি! বোর্ডের তিরিশ অনুমোদিত সদস্যের মধ্যে চব্বিশটা এ দিনের বৈঠকে উপস্থিত ছিল। দিল্লি, বিদর্ভ, এনসিসি, রেল, সার্ভিসেস, বিশ্ববিদ্যালয়— বাদ দিলে নাকি সব! তিরিশের মধ্যে চব্বিশ!
কে জানত, শ্রীনি শিবিরের এ হেন আস্ফালনের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে লোঢা কমিশনের পক্ষ থেকেও একটা বিষয় খুল্লমখুল্লা জানিয়ে দেওয়া হবে। বলে দেওয়া হবে, বোর্ডের তিরিশ অনুমোদিত সদস্যের মধ্যে একুশটা নাকি লোঢা সংস্কার মেনেই নিয়েছে! যাঁরা শ্রীনির বৈঠকে যোগ দিতে গিয়েছেন, তাঁরা লোঢা আইনে নানা ভাবে অপসারিত মাত্র। এরপর কে কোথায় বসল, কার সঙ্গে বসল, কী বলল না বলল কিছু যায় আসে না!
শোনা গেল, বেঙ্গালুরু বৈঠকে এ দিন অপসারিত বোর্ড প্রেসিডেন্ট অনুরাগ ঠাকুর, অপসারিত সচিব অজয় শিরকে থেকে অনেককে দেখা গিয়েছে। তবে তাঁরা সবাই লোডা আইনে আক্রান্ত। যেমন সৌরাষ্ট্রের কর্তা নিরঞ্জন শাহ, বোর্ডের যুগ্ম সচিব ও কোষাধ্যক্ষ যথাক্রমে অমিতাভ চৌধুরী এবং অনিরুদ্ধ চৌধুরী। শরদ পওয়ার যাননি। কিন্তু মুম্বই ক্রিকেট সংস্থা থেকে উপস্থিত ছিলেন সচিব পিভি শেঠি। শ্রীনি শিবিরের কেউ কেউ রাতের দিকে তিনটে ব্যাপার পরিষ্কার করে দিলেন।
এক) বৈঠকে সবাইকে এককাট্টা থাকার ডাক দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, যা হবে এর পর থেকে একসঙ্গে হবে।
দুই) মিডিয়ার সঙ্গে আর কোনও যোগাযোগ রাখা হবে না। শ্রীনিই সেটা বলে দিয়েছেন। কারণ বোর্ডের ‘বিদ্রোহী’ অংশের স্টান্স মিডিয়ায় বেরিয়ে যাওয়া মানে লোঢা কমিশনের সুবিধে করা দেওয়া।
তিন) আইসিসির এগজিকিউটিভ কাউন্সিলের কাছে যাওয়া হবে। বলা হবে, ভারতীয় বোর্ডের এখন সম্পূর্ণ অসাংবিধানিক কাজকর্ম চলছে। সিইও দিয়ে দল নির্বাচন হয়ে যাচ্ছে। লোঢা সংস্কারের কথা বলে লোঢা আইনকেই বুড়ো আঙুল দেখানো হচ্ছে। লোঢা আইন তিন জাতীয় নির্বাচকের কথা বলেছে। কিন্তু ইংল্যান্ড সিরিজের জন্য যে দল নির্বাচনী বৈঠক হল তা করলেন পাঁচ জন নির্বাচক। লোঢা আইন তা হলে মানা কোথায় হল?
কিন্তু তখনও লোঢা থেকে পাল্টা বাউন্সার আসেনি। শ্রীনি শিবিরের বক্তব্যের কিছুক্ষণের মধ্যেই যা এল। এবং যাবতীয় দাবিকেই প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়ে চলে গেল। তিরিশের মধ্যে চব্বিশ সদস্যের উপস্থিতি নিয়ে শ্রীনি শিবিরের দাবি উড়িয়ে কমিশন বলে দেয়, বোর্ড অনুমোদিত একুশ সংস্থা লোঢা সংস্কার মেনে নিয়েছে। আজই চিঠি দিয়ে মেনে নিয়েছে। বেঙ্গালুরু বৈঠকে যাঁরা গিয়েছেন তাঁদের কোনও সরকারি অস্তিত্বই নেই। যেখানে খুশি তাঁরা বৈঠক করতে পারেন। এত ভাবার কী আছে? বোর্ডকে রাজ্য সংস্থাদের খেলার জন্য মাঠ না দেওয়া নিয়ে যে বিদ্রোহী কথাবার্তা উঠে আসছে, তারও জবাব দেওয়া হয়েছে। লোঢা কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, মাঠ তৈরি হয়েছে সরকারি জমিতে। বোর্ডের সাহায্যে। আশ্চর্যের হল, যারা সেটা নিজেদের ‘ব্যক্তিগত সম্পত্তি’ ভাবছে, তারা আর বোর্ডেই নেই! শ্রীনি শিবির— তারাও সব শেষে বলল। বলল যে, বৈঠক এ রকম একটা নয়। আরও হবে। ১৯ জানুয়ারি যাক। আবার হবে।
খারাপই লাগবে বিরাট কোহালির জন্য। আর দশ দিনের মধ্যে ওয়ান ডে অধিনায়ক হিসেবে পূর্ণ আবির্ভাব ঘটবে তাঁর। কিন্তু বাইশ গজের বাইরের যুদ্ধের মেজাজ যে ভাবে দিন দিন চড়া হচ্ছে, কে জানে তাতে না গ্রহণ লেগে যায়!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy