Advertisement
২১ ডিসেম্বর ২০২৪
Serena Williams

সত্যিই কি টেনিসকে বিদায় জানাচ্ছেন? সত্যিই কি অবসর? নিজেও জানেন না সেরিনা

ইউএস ওপেনের তৃতীয় রাউন্ডে হেরে যাওয়ার পরে কি তবে টেনিসকে বিদায় জানালেন সেরিনা উইলিয়ামস? তাঁকে কি আর কোনও দিন কোর্টে দেখা যাবে না? জবাবে সেরিনা জানালেন, তিনি নিজেই জানেন না।

বিদায়বেলায় আবেগ ধরে রাখতে পারলেন না সেরিনা।

বিদায়বেলায় আবেগ ধরে রাখতে পারলেন না সেরিনা। ছবি: রয়টার্স

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১০:৫৫
Share: Save:

কানায় কানায় পূর্ণ আর্থার অ্যাশ স্টেডিয়াম তখন স্তব্ধ। দর্শকরা প্রায় সবাই দাঁড়িয়ে পড়েছেন। কারও চোখে জল। কেউ বিহ্বল। আর কোর্টের মাঝে দাঁড়িয়ে তিনি। কিছু ক্ষণ আগেই ইউএস ওপেনের তৃতীয় রাউন্ডে অস্ট্রেলিয়ার আজলা টমলিয়ানোভিচের কাছে হেরে গিয়েছেন সেরিনা উইলিয়ামস। বিদায়মঞ্চ তৈরি। ২৩ গ্র্যান্ড স্ল্যামের মালকিন তাঁর বিদায়ী ভাষণে কী বলেন, সে দিকেই তাকিয়ে ছিলেন সবাই। সেখানেই সেরিনাকে প্রশ্ন করা হল, কোর্টে আবার তাঁকে দেখার কি কোনও সুযোগ রয়েছে? হালকা হেসে জবাবে সেরিনা জানালেন, তিনি নিজেই জানেন না। তবে কি সেরিনা এখনই অবসর নিচ্ছেন না? আবার কি র‌্যাকেট হাতে দেখা যাবে টেনিসের সর্বকালের অন্যতম সেরা তারকাকে? সবাইকে ধোঁয়াশায় রেখেই কোর্ট ছাড়লেন সেরিনা।

খেলা শেষে নিজের আবেগ ধরে রাখতে পারেননি সেরিনা। কেঁদে ফেলেন। গ্যালারিতে তখন বসে সেরিনার মা ওরাসেন প্রাইস, স্বামী অ্যালেক্সিস ওহানিয়ান। মেয়েকে কাঁদতে দেখে উদ্বিগ্ন দেখাল মাকে। সে সব দেখে কিছু ক্ষণ পরে চোখের জল একটু সামলে নিলেন সেরিনা। মুখে বললেন, ‘‘আনন্দে চোখে জল চলে এসেছে।’’ ফিরে এল পরিচিত হাসি। দীর্ঘ কেরিয়ারের জন্য পরিবারকে পুরো কৃতিত্ব দিলেন সেরিনা। বললেন, ‘‘আমার পাশে থাকার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ। সবার আগে বাবাকে ধন্যবাদ। আমি জানি তুমি দেখছ। আমার পাশে এত বছর ধরে থাকার জন্য পরিবারকে ধন্যবাদ। কয়েক দশক ধরে খেললাম। ভাবতেই পারছি না। আমার বাবা, মার হাত ধরেই সবটা শুরু। ওদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।’’ বাবা রিচার্ড উইলিয়ামসের হাত ধরেই কোর্টে পা রাখা সেরিনার। কোর্টে উপস্থিত না থাকলেও তাই সবার আগে বাবার কথা এল তাঁর মুখে।

গ্যালারিতে ছিলেন দিদি ভিনাসও। কয়েক ঘণ্টা আগে সেরিনা ও ভিনাস ছিটকে গিয়েছেন ইউএস ওপেনের মহিলাদের ডাবলস থেকে। বোনের লড়াইয়ের শুরু থেকে যিনি পাশে রয়েছেন, বিদায়বেলাতে কি দূরে থাকতে পারেন? তাঁর কেরিয়ারে দিদির কতটা অবদান রয়েছে সেটাও জানাতে ভোলেননি সেরিনাও। তিনি বলেন, ‘‘যদি ভিনাস না থাকত, তা হলে সেরিনাও হত না। সেরিনার যে অস্তিত্ব রয়েছে, তার এক মাত্র কারণ ভিনাস। আমার দিদি আমার পৃথিবী। আমার স্বামী আমার পৃথিবী। ওখানে যারা বসে (পরিবারের দিকে ইঙ্গিত করে) তারা সবাই আমার পৃথিবী।’’ যদিও পাঁচ বছরের মেয়ে অলিম্পিয়াকে এ দিন দেখা যায়নি।

টেনিস র‌্যাকেট হাতে নেওয়ার পরে ছোট্ট সেরিনাকে যাঁরা ২৩ গ্র্যান্ড স্ল্যামের মালকিন হতে সাহায্য করেছেন, তাঁকে যাঁরা সাহস জুগিয়েছেন, এগিয়ে যেতে বলেছেন, তাঁদের সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন সেরিনা। বলেছেন, ‘‘এটা আমার জীবনের সেরা অধ্যায়। যারা আমাকে এগিয়ে যেতে বলেছে, সেই প্রতিটা মানুষকে ধন্যবাদ। এই ভালবাসা না থাকলে এখানে পৌঁছতে পারতাম না।’’

আবেগ চেপে রাখার চেষ্টা করলেও সেরিনার চোখ বলে দিচ্ছিল, ভিতরে ভিতরে কতটা ভেঙে পড়েছেন তিনি। যে কোর্টে ২৭ বছর কাটিয়েছেন সেই কোর্ট থেকে বিদায় নেওয়া কি এতটাই সহজ! বার বার তাঁর চোখ চলে যাচ্ছিল গ্যালারির দিকে। এদিক-ওদিক তাকাচ্ছিলেন। তাঁর ভিতরে কী চলছে সেটা কাউকে বুঝতে দিতে চাইছিলেন না সেরিনা। তখনই সেই প্রশ্ন ধেয়ে এল তাঁর দিকে। সেরিনাকে কি কোর্টে দেখার আর কোনও সুযোগ নেই? জবাবে হালকা হাসি দিয়ে সেরিনা বলেন, ‘‘সত্যি বলতে, আমি নিজেই জানি না।’’ তাঁর এই মন্তব্যের পরে স্টেডিয়ামে হালকা শোরগোল ওঠে। সবার একটাই প্রশ্ন, তা হলে কি সেরিনা এখনই অবসর নিচ্ছেন না? আবার র‌্যাকেট হাতে দেখা যাবে তাঁকে! আর কোনও প্রশ্নের সুযোগ না দিয়ে আর্থার অ্যাশ কোর্ট ছাড়েন সেরিনা।

প্রায় এক বছর টেনিস কোর্ট থেকে দূরে থাকার পরে এই বছরের উইম্বলডন খেলতে নেমেছিলেন। অল ইংল্যান্ড ক্লাবের সবুজ কোর্টে বোঝা গিয়েছিল, একটা বছর খেলা থেকে সরে থাকলে কী হয়! সেটা আরও স্পষ্ট হয়েছিল টরন্টো এবং ওহিয়োতেও। তিনটি প্রতিযোগিতাতেই শুরুতেই বিদায় নিয়েছিলেন। কোনও কিছুই ঠিকঠাক হচ্ছিল না। গতি অসম্ভব মন্থর হয়ে গিয়েছিল। রিফ্লেক্স কমে গিয়েছিল। বিপক্ষের যে সেকেন্ড সার্ভগুলিতে গোলার মতো রিটার্ন করতেন, সেখানেই বার বার টাইমিংয়ে গন্ডগোল হয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু তার পরেও লড়াই করেছেন সেরিনা। লড়াই তো তাঁর জীবন জুড়ে রয়েছে। যতই সমস্যা হোক, লড়াই না করে হার মানবেন না তিনি।

ইউএস শুরুর আগেই সেরিনা জানিয়ে দিয়েছিলেন, প্রতিযোগিতার পরে অবসর নেবেন। নিজের অবসরের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করার সময় সেরিনা জানান, টেনিস ও পরিবারের মধ্যে কোনও একটিকে বেছে নিতে হবে। কিছুটা বাধ্য হয়েই অবসর নিচ্ছেন। ইউএস ওপেনে গত সোমবারই কি শেষ ম্যাচ খেলতে নেমেছিলেন সেরিনা উইলিয়ামস? এই আশঙ্কায় তাঁর ম্যাচ দেখার জন্য গ্যালারি ভরিয়েছিলেন দর্শকেরা। প্রথম রাউন্ডে স্ট্রেট সেটে জেতেন সেরিনা। পরের রাউন্ডেও কোনও সমস্যা হয়নি। কিন্তু তৃতীয় রাউন্ডে গিয়ে আর পারলেন না। অস্ট্রেলিয়ার প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে প্রথম সেট ৭-৫ জেতেন সেরিনা। কিন্তু দ্বিতীয় সেটে ফিরে আসেন টমলিয়ানোভিচ। টাইব্রেকারে (৭-৬) জিতে নেন সেই সেট। তৃতীয় সেটে একপেশে লড়াইয়ে সেরিনাকে ৬-১ হারিয়ে দেন টমলিয়ানোভিচ।

অন্য বিষয়গুলি:

Serena Williams US open Tennis retirement
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy