সম্বরণের মতে, গোপাল বসু আপোস করতেন না ক্রিকেট নিয়ে। ফাইল ছবি।
গোপাল বোসের সঙ্গে আমার দীর্ঘদিনের সম্পর্ক।আর তা শুধু ক্রিকেটীয় সম্পর্ক ছিল না। আমি যখন স্কুলে পড়তাম, ক্লাস সিক্স কি সেভেন হবে, থাকতাম যাদবপুরে। গোপালদার মামার বাড়ি ছিল যাদবপুরে। পূজোর ছুটিতে বা গরমের ছুটিতে মামাবাড়িতেই থাকত। ওখান থেকেই পরিচয় গড়ে ওঠে। আমি গোপালদা বলেই ডাকতাম।
তারপর বহু ম্যাচ একসঙ্গে খেলেছি। ক্লাব ক্রিকেট থেকে বাংলা, পূর্বাঞ্চল, সব একসঙ্গে খেলেছি। মজার হল, আমি যেমন গোপালদার নেতৃত্বে খেলেছি, গোপালদাও আমার নেতৃত্বে ইস্টবেঙ্গল বা মোহনবাগান ক্লাবে খেলেছে। আমাদের মধ্যে ক্রিকেট নিয়ে নানা রকমের কথা হত, তর্ক-বিতর্ক চলত। কিন্তু কোনও দিন তা মনান্তর হয়ে ওঠেনি। খুব স্বাস্থ্যকর আলোচনা হত। কখনও তা খারাপ দিকে গড়ায়নি।
ক্রিকেটের ‘ভেরি গুড থিঙ্কার’ ছিল গোপালদা। একটা বেসরকারি টেস্ট খেলেছিল শ্রীলঙ্কায়। যাতে সুনীল গাওস্করের সঙ্গে ১৯৪ রানের জুটি ছিল। শতরানও করেছিল। তখন শ্রীলঙ্কা সরকারি ভাবে টেস্ট খেলার স্বীকৃতি পায়নি। ফলে, এই ইনিংসের দাম পায়নি।
১৯৭৪ সালে অজিত ওয়াড়েকরের নেতৃত্বে ভারতের যে দল ইংল্যান্ডে গিয়েছিল, তাতে গোপালদাও ছিল। উনি হয়তো টেস্ট খেলেননি। অশোক মানকড়, জয়ন্তীলাল তখন ওপেন করতেন। তবে একটা ওয়ানডে খেলেছিল। কিন্তু আমার মনে হয়, আরও অনেক বেশি খেলা উচিত ছিল।
আরও পড়ুন: লন্ডনে প্রয়াত প্রাক্তন ক্রিকেটার গোপাল বসু
আরও পড়ুন: গাওস্কর-সচিন-রাহুল-বিরাট, বিদেশে টেস্টে কার কী রেকর্ড
গোপালদার সবচেয়ে বড় ব্রেক হচ্ছে ইরানি ট্রফিতে অবশিষ্ট ভারতের হয়ে শতরান। ওই ১৭০ রানের ইনিংস সুযোগ এনে দিয়েছিল। কিন্তু, তাতেও লাভ হয়নি। ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি গোপালদা নিজের প্রাপ্য পেল না কখনও। অনেকগুলো টেস্ট আর ওয়ানডে খেলার যোগ্যতা ছিল। একজন অলরাউন্ডার হওয়ায় সুবিধাও ছিল। মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে রঞ্জি ফাইনালে ৯২ রানের ইনিংসের কথাও মনে পড়ছে এখন। সেটা ছিল ১৯৭২ সালের ঘটনা।
অফস্পিন করত গোপালদা। কিন্তু প্রথমদিক অ্যাকশন সন্দেহজনক ছিল। সেই অ্যাকশন পাল্টে ফিরে এসেছিল। ক্রিকেটে এমন ঘটনা আমি খুব কম দেখেছি। খেলাটা খুব ভাল জানত বলেই এটা পেরেছিল। না হলে সম্ভব ছিল না। আসলে, ক্রিকেট নিয়ে ভাবনাচিন্তা ছিল স্বচ্ছ।
প্রতিবাদী সত্তাও ছিল। খেলাধূলার ব্যাপারে কোনও অন্যায় সহ্য করত না। ক্রিকেট নিয়ে আপোস করত না কখনও। যেটা ভাল, সেটা ভাল। যেটা খারাপ, সেটা খারাপ। ব্যাস। এই প্রতিবাদে আমরাও সামিল হতাম। আমি, পলাশ নন্দী থাকতাম সঙ্গে। আমরা একসঙ্গে দলীপ থেকে ক্লাব, সবই খেলেছি।
রবিবার সকালে মৃত্যুর খবর পেয়ে মনটা খুব খারাপ। অত্যন্ত মর্মাহত। মানতে পারছি না। শুধু দীর্ঘদিনের সঙ্গীই নয়, দাদাকেও তো হারালাম।
আরও পড়ুন: ‘কোহালিরাও ইতিহাস তৈরি করতে পারে’
আরও পড়ুন: রেলের কড়া বার্তা সত্ত্বেও সুদীপ-অনুষ্টুপকে নিয়ে আশ্বাস সৌরভের
(ক্রিকেটের খবর,ফুটবলের খবর, টেনিসের খবর, হকির খবর - খেলার খবরের সেরা ঠিকানা আমাদের খেলা বিভাগ।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy