—ফাইল চিত্র
মুম্বই ক্রিকেট মহলে একটা শব্দ খুব চালু আছে। আমার বন্ধু দিলীপ বেঙ্গসরকর, কারসন ঘাউড়িদের মুখে যে শব্দটা খুব শুনতাম। ‘খারুশ’। রবিবার মেলবোর্নে অজিঙ্ক রাহানের ইনিংসটা দেখার পরে মু্ম্বইয়ের দু’এক জনের সঙ্গে কথা হচ্ছিল। রাহানের নিয়ে কথা বলার সময় ওরা বার বার এই শব্দটা ব্যবহার করছিল— খারুশ। অর্থাৎ, যে লড়াই থেকে কিছুতেই পিছু হঠে না। কোনও অবস্থাতেই হার মানতে চায় না। এ দিনের পরে রাহানে আর খারুশ শব্দটাকে সমার্থক বলতে অনেকেরই কোনও আপত্তি নেই।
পরিস্থিতিটা একবার ভেবে দেখা যাক। আগের টেস্টেই ৩৬ রানে শেষ হয়ে গিয়ে নিজেদের সর্বনিম্ন রানের ‘রেকর্ড’ গড়েছে। অধিনায়ক এবং সর্বকালের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান বিরাট কোহালি নেই। ছিটকে গিয়েছে মহম্মদ শামির মতো বোলার। বক্সিং ডে টেস্টের মতো ঐতিহ্যশালী একটা ম্যাচে সম্ভবত বিশ্বের সেরা বোলিং আক্রমণের মুখে পড়তে হচ্ছে। একটা ছোট্ট ভুল মানে আবার সব কিছু অন্ধকারে হারিয়ে যাওয়া। আবার সমালোচকদের দাঁত-নখ বার করে ঝাঁপিয়ে পড়া। সেখান থেকে পারিপার্শ্বিক বিচারে রাহানে টেস্টে নিজের সেরা ইনিংসটা খেলে গেল মেলবোর্নে। অপরাজিত ১০৪ রান। অস্ট্রেলিয়ার প্রথম ইনিংসের ১৯৫ রানের জবাবে দ্বিতীয় দিনের শেষে ভারত পাঁচ উইকেটে ২৭৭।
নিজের প্রতি রাহানের আস্থাটা ধরা পড়েছিল নেতৃত্ব দেওয়ার সময়ই। অঙ্ক কষে ফিল্ডিং সাজানো, ঠিক সময় ঠিক বোলারের হাতে বল তুলে দেওয়া। নিজের প্রতি এই আস্থাটাই আবার ধরা পড়ল ব্যাটিংয়ের সময়। সকালে ৬৪ রানের মধ্যে তিন উইকেট পড়ে গিয়েছে। আবার একটা ব্যাটিং বিপর্যয়ের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে ভারতীয় সমর্থকদের মনে। আর তখনই রাহানের ছায়াটা ক্রমে দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হতে লাগল। এ যেন সেই বটবৃক্ষ, যার তলায় দাঁড়িয়ে যাবতীয় ঝড়-ঝাপটার হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
রাহানের ব্যাটিংয়ের দুটো দিক আছে। এক, কোন বলে কোন শট খেলবে, তা নিখুঁত ভাবে বাছতে পারা। দুই, ফুটওয়ার্ক। সেটা ‘ব্যাক অ্যান্ড অ্যাক্রস’ মুভমেন্টই হোক কী ফ্রন্টফুটে এসে সোজা ব্যাটে খেলা।
সচিন তেন্ডুলকরের পরে এত ভাল বল বুঝে ব্যাট করতে আমি বিশেষ কোনও ব্যাটসম্যানকে দেখিনি। এর সঙ্গে মিশছে ফুটওয়ার্ক। যে কারণে ও নেথান লায়নের অফস্পিন এত ভাল খেলছে। অনেক ব্যাটসম্যানই লায়নকে ফ্রন্টফুটে খেলতে গিয়ে প্যাডে খাচ্ছে। কিন্তু রাহানে ব্যতিক্রম। ওর ব্যাট সোজা এসে স্পিনটাকে নির্বিষ করে দেয়। বলকে ঘোরার কোনও সুযোগ দেয় না। আবার যখন ব্যাকফুটে যায়, তখন খুব দেরিতে শটটা খেলে। স্পিনটাকে বুঝে। যে কারণে ব্যাকওয়ার্ড শর্ট লেগ বা লেগ গালিতে ওর বল খুব কমই যায়। এই গুণগুলোর জন্যই বিশ্বের অন্যতম সেরা স্পিনার লায়নকে এত সহজে সামলে দিল ও।
পাশাপাশি অস্ট্রেলীয় ফাস্ট বোলারদের খেলতেও সমস্যায় পড়েনি। নিজের অফস্টাম্পটা কোথায়, তা খুব ভাল জানে রাহানে। ওর ওই ছোট্ট ‘ব্যাক অ্যান্ড অ্যাক্রস’ মুভমেন্টের জন্য ডান পা-টা ঠিক অফস্টাম্পের লাইনে চলে আসে। যার ফলে খুব সহজেই বলটা ছাড়তে পারে। টেস্টে ফাস্ট বোলারদের খেলার সময় বল ছাড়তে পারাটাও একটা শিল্প। সেই শিল্পে এ দিন একশোয় একশো পাবে রাহানে।
এর সঙ্গে রয়েছে ওই হার না মানা মানসকিতা। আর কঠিন পরিস্থিতিতেও মাথা ঠান্ডা রাখার দক্ষতা। ছোটবেলায় মায়ের সঙ্গে প্রত্যেক দিন ডম্বিভিলি থেকে দেড়ঘণ্টা ট্রেনে করে চার্চগেটে এসে ক্রিকেটটা শিখেছে রাহানে। প্রতি মুহূর্ত লড়াই করতে হয়েছে। আর এই লড়াকু মানসিকতা, হার-না-মানা মনোভাবই ছেলেটাকে ইস্পাতকঠিন করে তুলেছে।
এই টেস্টের ঠিক দলটা বাছার জন্য ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্টকে আমি ধন্যবাদ জানাতে চাই। যে চারটে পরিবর্তন হয়েছে, তারাই এখনও পর্যন্ত কিছু না কিছু ছাপ ফেলে গিয়েছে ম্যাচে। ওপেনে শুভমন গিল। ছেলেটার টেকনিক খুব ভাল। মানসিকতাও। এই কঠিন পরিস্থিতিতে অভিষেক টেস্টে ৪৫ রান করে যাওয়া মানে ভাল ভাবে পরীক্ষায় পাশ করা। দুই, মহম্মদ সিরাজ। প্রথম দিনেই নিজেকে চিনিয়েছে এই তরুণ পেসার। তিন, ঋষভ পন্থ। কিপিংটা খারাপ করেনি। আর ব্যাটিংয়ের সময় রাহানের সঙ্গে ৫৭ রানের একটা গুরুত্বপূর্ণ জুটি তৈরি করেছে।
এ বার আসি চতুর্থ পরিবর্তনে। রবীন্দ্র জাডেজা। টেস্ট ক্রিকেটে এই ছেলেটার ঠিক মূল্যায়নটা এখনও হয়নি। ভুললে চলবে না, প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে দুটো ট্রিপল সেঞ্চুরি আছে জাডেজার। ইনিংসটাকে গড়তে জানে। সীমিত ওভারের ক্রিকেটে ঝোড়ো ব্যাটিংয়ের জন্য পরিচিত জাডেজা এ দিন ৪০ রানে অপরাজিত থাকল ১০৪ বল খেলে। মেরেছে মাত্র একটা বাউন্ডারি। ওর আর রাহানের অবিচ্ছেদ্য ১০৪ রানের জুটি ভারতকে কিন্তু সিরিজে ফিরে আসার স্বপ্ন দেখাতে শুরু করেছে। বল হাতে দ্বিতীয় ইনিংসে কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে বাঁ-হাতি স্পিনার জাডেজা।
মেলবোর্নের পিচে প্রথম দিনে পেসাররা যতটা বল সুইং করাতে পেরেছিল, দ্বিতীয় দিনে ততটা পারেনি। কিন্তু বল ভাল ঘুরছে। যা টেস্টের দ্বিতীয় দিনে কিছুটা অপ্রত্যাশিত। এই ব্যাপারটা ভারতকে মাথায় রাখতে হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy