লড়াই: জীবনের প্রথম অলিম্পিক্স হার সোনমের (বাঁ-দিকে)। ছবি পিটিআই।
টোকিয়োয় মঙ্গলবারের কুস্তির লড়াইগুলো দেখতে দেখতে মনটা চলে যাচ্ছিল পাঁচ বছর আগের রিয়ো অলিম্পিক্সে। সে বার শেষের ক’দিন আমরা পদক জিততে পারছিলাম না। অথচ বেশ কয়েক জন ভাল প্রতিযোগী ব্রাজিলেও দলে ছিল। তার পরেও পদক আসছিল না বলে ভারতীয় শিবিরে গ্রাস করেছিল চূড়ান্ত হতাশা। নিজেও জানি, আমার মতো শেষ দিকে যারা নেমেছিল, তারা কতটা চাপে ছিল।
পরিষ্কার মনে আছে, রিয়োয় সে সময় হতাশ বিনেশ ফোগতের সঙ্গে আমার কী কী কথা হয়। ওর নিজেরও তো অনেক দূর যাওয়ার কথা ছিল। চোটের জন্য পারেনি। কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেও হাঁটুতে আঘাত পাওয়ায় হেরে যায় চিনের সুন ইয়ানানের কাছে। শেষদিকে নামায় সে বার অতিরিক্ত চাপটা কেউই এড়িয়ে যেতে পারিনি। এ বার কিন্তু ছবিটা অন্যরকম। তার কারণ, তিনটি পদক আমরা পাচ্ছিই। আশা আছে হকিতে। অর্থাৎ কিছুটা হলেও ইতিবাচক দিক থাকছে।
কুস্তিতে সোনম মালিক আর একটু চেষ্টা করলে মঙ্গলবার জিততে পারত। শেষ ৪৫ সেকেন্ডে মেয়েটা ভুল করে বসল। ওর আন্দাজ করা উচিত ছিল, চূড়ান্ত সময়ে সব চেয়ে কঠিন আক্রমণটা আসে। সম্ভবত যে মুহূর্তে মঙ্গোলীয় কুস্তিগির আন্দাজ করল, সোনম মাঝেমাঝেই দাঁড়িয়ে পড়ছে, তখনই ঝাঁপিয়ে পড়ল। এটা পরিষ্কার, সে সময় প্রতিপক্ষ ভাল করেই বুঝে যায়, সোনম হয় ক্লান্ত, না হলে দ্রুত আক্রমণ করার জন্য তৈরি নয়।
এই ভুলটা অবশ্য এগিয়ে থাকা অবস্থায় অনেক ভারতীয় কুস্তিগির করে। হঠাৎ অকারণে আমরা রক্ষণাত্মক হয়ে পড়ি। স্বীকার করছি, একই দোষে আমিও দোষী। না হলে আমরা কিন্তু অনেক বড় সাফল্য পেতে পারতাম। আসলে কুস্তিতে গা ছাড়া ভাব দেখানোর সুযোগ নেই। সেটাই সবার মনে থাকে না। যে অভিজ্ঞতা থেকে অতীতে অনেক কিছু শিখেছি।
এ ক্ষেত্রে কোচদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। ভারতীয় কুস্তিগিরদের মনে ছোটবেলা থেকেই একটা ধারণা গেঁথে দেওয়া দরকার, এই খেলাটায় কখনও আত্মতুষ্ট হওয়া যায় না। সেটা হলে মূল্য দিতে হয়। আমি নিশ্চিত, কোচেরা ব্যাপারটা বোঝানোর কাজ নিয়মিত করেন। এই একটা রণকৌশলে এগিয়ে থাকতে পারলে কুস্তির মোট ছ’মিনিট নিজের ধারাবাহিকতা ধরে রাখা যায়। যদি আক্রমণে কাজ হয়, তা হলে শেষপর্যন্ত আগ্রাসী থাকতে হবে। সোনম চেষ্টা করলে আরও কয়েকটা পয়েন্ট তুলতে পারত। কিন্তু ২-০ এগিয়ে থাকা অবস্থায় মেয়েটা আদৌ সেটা করেনি।
গত এপ্রিলে এশীয় অলিম্পিক্স যোগ্যতা অর্জন পর্বে সোনম চোট পেয়েছিল। বলতে পারছি না, এ দিনের ম্যাচে লড়ার মতো যথেষ্ট সুস্থ ছিল কি না। সেটা সত্যি হলে খেলায় প্রভাব পড়তে বাধ্য। এমনিতে এ রকম চিন্তা নিয়ে ম্যাটে নামার মেয়ে নয় সোনম। খুবই কঠিন চরিত্রের। অসম্ভব লড়াকু। আশা করি টোকিয়োর অভিজ্ঞতা ওকে আগামী দিনে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে। বুধবার নামছে রবি দাহিয়া, দীপক পুনিয়া ও আনসু মালিক। তিন জনেরই অলিম্পিক্সে অভিষেক হবে। সিনিয়রে অতটা অভিজ্ঞতা না থাকায় নিশ্চয়ই ওরা ভয়হীন ভাবে লড়বে। খেলাধুলোর সব চেয়ে বড় মঞ্চে নিজেদের দক্ষতা প্রমাণ করার এটাই সুযোগ। কেন জানি না মনে হচ্ছে, বুধবারই কুস্তিতে আমরা নতুন কোনও পদকজয়ীকে আবিষ্কার করব। (টিসিএম)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy