ছন্দে ফেরার লড়াই শুরু করলেন সাকিব। ছবি টুইটার থেকে নেওয়া।
স্টিভ স্মিভ ও সাকিব আল হাসান। ক্রিকেটীয় বৈশিষ্টে দুই গোলার্ধের দুই ভিন্ন দক্ষতাসম্পন্ন যতই আলাদা হন, এক বিন্দুতে এসে মিশতেই হচ্ছে তাঁদের!
নির্বাসনের মেয়াদ কাটিয়ে উঠে নেতৃত্বের মুকুট ফিরে পাননি স্টিভ স্মিথ। সাকিব আল হাসানের অদৃষ্টেও একই ভবিতব্য লেখা থাকছে। বছর খানেকের শাস্তি কাটিয়ে উঠে রাজ্যপাট হারানো সম্রাটের মতোই লাগতে পারে তাঁর।
ভারতীয় এক বুকির দেওয়া প্রস্তাব ঠিক সময়ে কর্তাদের কাছে পেশ না করায় এক বছরের জন্য নির্বাসিত বাংলাদেশের অলরাউন্ডার। যার মেয়াদ শেষ হচ্ছে ২৯ অক্টোবর। সব ঠিকঠাক থাকলে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে বাংলাদেশের হয়ে ফের দেখা যেতে পারে তাঁকে। নির্বাসনের আগে তিনিই ছিলেন অধিনায়ক, দলের সেরা তারকা। কামব্যাকের পরেও সেরা তারকা তিনিই থাকবেন। কিন্তু মাথায় থাকবে না তাজ। টেস্ট সিরিজে টস করতে যাবেন গত নভেম্বরে ইডেনে গোলাপি বলে দিন-রাতের টেস্টে বিরাট কোহালির সঙ্গী সেই মোমিনুল হকই।
আরও পড়ুন: ছাড়ল না বাংলাদেশ, মুস্তাফিজুরকে চেয়েও পেল না নাইট রাইডার্স
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের ক্রিকেট অপারেশনস চেয়ারম্যান আক্রম খান আনন্দবাজার ডিজিটালকে শনিবার বললেন, “না, এখনই ক্যাপ্টেন্সি বদলানোর কোনও ভাবনা নেই। সৌরভ (মোমিনুলের ডাক নাম) আছে, ওই থাকবে। নেতৃত্বে পরিবর্তনের কোনও সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি।” এখনও হয়নি মানে আগামী দিনে হবে না, তেমন যদিও নয়। বাংলাদেশ ক্রিকেটমহল বরং মনে করছে, এক সময় ঠিকই নেতৃত্ব ফিরে আসবে সাকিবের কাছে। কারণ, ২০২৩ সালে ভারতে হতে চলা ওয়ানডে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের চেতনায় অধিনায়ক হিসেবে একটা নামই রয়েছে। অবধারিত ভাবেই তা সাকিবের।
এখন ৫০ ওভারের ক্রিকেটে বাংলাদেশের অধিনায়ক হলেন তামিম ইকবাল। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে নেতা মাহমুদুল্লাহ। কিন্তু, পরের বছর ভারতে যখন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আসর বসবে, তখনও কি মাহমুদুল্লাহই থাকবেন নেতৃত্বে? নাকি, সাকিবকে তার আগেই হারানো সাম্রাজ্য বুঝিয়ে দেওয়া হবে কাপ-যুদ্ধের কথা ভেবে? কারও কারও মনে হচ্ছে, টেস্টে আরও দ্রুত নেতৃত্ব ফিরে পেতে চলেছেন সাকিব। কারণ, কার্যত বাধ্য হয়েই মোমিনুল হককে পাঁচ দিনের ফরম্যাটে অধিনায়ক করা হয়েছিল। তা ছাড়া কোনও বিকল্প ছিল না। আর মোমিনুলও নেতা হিসেবে তেমন কোনও গ্রহণযোগ্যতা গড়ে তুলতে পারেননি। জিম্বাবোয়ের বিরুদ্ধে টেস্ট জয়ই নেতা হিসেবে একমাত্র সাফল্য তাঁর। তাঁর মধ্যে কৌশলী নেতার ঝলকও দেখা যায়নি। ফলে, শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে তিন টেস্টের সিরিজে ব্যর্থতা মানেই মোমিমুলের টেনশন শুরু। দলে সাকিবের উপস্থিতি আরও চাপে রাখবে তাঁকে।
সাকিব নিজে কী ভাবছেন? জানা গেল, শনিবার থেকেই তিনি বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা বিকেএসপি-তে শুরু করেছেন অনুশীলন। প্রথমে জোর থাকবে ফিটনেসে। তার পর নেট প্র্যাকটিস। ঝালিয়ে নেবেন স্কিল। যে হেতু এখনও তিনি নির্বাসিত, তাই বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিকাঠামো ব্যবহার করতে পারবেন না। আপাতত কোনও প্রস্তুতি ম্যাচেও খেলতে পারবেন না।
আরও পড়ুন: লকডাউনে নিজের বাড়িতে রেখে প্রস্তুতি, আইপিএলের জন্য পঞ্জাবের চার তরুণকে নিজের হাতে তৈরি করেছেন যুবি
এই বিকেএসপি হল সাকিবের ক্রিকেটার হয়ে ওঠার আঁতুড়ঘর। এখানেই ছোটবেলা থেকে ক্রিকেট শিক্ষার হাতেখড়ি। ক্লাস সিক্স-সেভেন থেকে এখানেই ঝরিয়েছেন ঘাম। ফের সেখানেই ফিরেছেন তিনি। তখনকারের মতো এ বারও সঙ্গী সালাউদ্দিন ও নাজমুল আবেদিন ফাহিম। সালাউদ্দিন হলেন কোচ। আর ফাহিম হলেন সাকিবের মেন্টর। এ যেন ফেলে আসা দিনে ফিরে যাওয়া। পুরনো দিনের ক্রিকেট রোম্যান্সের গন্ধ টের পাওয়া।
চমক আরও আছে। সাকিবের আইসোলেশন পর্বও চলবে অনুশীলনের সঙ্গে সঙ্গে। আমেরিকা থেকে ফিরেই করোনা পরীক্ষা করেছেন তিনি। আইসোলেশনের সপ্তাহ দু’য়েক বাড়িতেই থাকতে পারতেন। কিন্তু ব্যাট-বল হাতে নেমে পড়তে মরিয়া সাকিব নষ্ট করতে চাননি সময়। ছন্দে ফেরার তাগিদ এতটাই যে বিকেএসপি-র একটা ঘরেই তিনি আপাতত থাকবেন। তাঁর সঙ্গে আইসোলেশনে থাকবেন সালাউদ্দিন, ফাহিম। তবে তাঁরাও বজায় রাখবেন দূরত্ব। বন্ধ হলঘরে চলবে অনুশীলন। বহির্জগতের প্রবেশাধিকারে নিষেধাজ্ঞা মেনেই।
আইসোলেশনেও ক্রিকেট। বা, ক্রিকেটের জন্যই এহেন আইসোলেশন। নেতৃত্বের মুকুট ফিরে পান বা নাই পান, সাকিব থেকে যাবেন ক্রিকেটপ্রেমীর হৃদয়ে। বছর তেত্রিশের বাঁ-হাতি যে ক্রিকেটপ্রেমকেই পৌঁছে দিলেন অন্য উচ্চতায়!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy